যুদ্ধবিরতির পরে কাশ্মীর
মার্কো রুবিয়ো বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তানের সরকার সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়ে নিরপেক্ষ কোনও জায়গায় বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনায় রাজি হয়েছে। এ বিষয়ে আমেরিকার উপরাষ্ট্রপতি জে ডি ভান্স ও তাঁর সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের বিদেশমন্ত্রী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন রুবিয়ো।
এ বিষয়েও সরকারি ভাবে ভারত আমেরিকার বিদেশসচিবের দাবি খারিজ করে বিবৃতি দেয়নি। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, কোনও নিরপেক্ষ জায়গায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত দু’দেশের সেনার ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস)-র মধ্যেই কথা হবে বলে ঠিক হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মধ্যেও কোনও কথা হয়নি। সরকারের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শনিবার আমেরিকার উপরাষ্ট্রপতি জে ডি ভান্সের কথা হয়েছে ঠিকই। তবে প্রধানমন্ত্রী শুধু জানিয়েছেন, পাকিস্তান যত জোরে আক্রমণ করবে, ভারত তার থেকেও বেশি জোরে প্রত্যাঘাত করবে।
শনিবার বিকেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প আচমকাই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, আমেরিকার মধ্যস্থতায় হওয়া ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এক দীর্ঘ রাতের আলোচনার পরে দুই দেশ অবিলম্বে সম্পূর্ণ সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তখনও ভারত বা পাকিস্তান কেউই সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা করেনি। ট্রাম্পের এই ঘোষণা মোদী সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল। কারণ মোদী সরকারের কেউই তার আগে পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলা বা সেখানে আমেরিকার মধ্যস্থতার কথা স্বীকার করেনি। ট্রাম্পের এই দাবির পরেও মোদী সরকার তা সমর্থন বা সরাসরি খারিজ করেনি। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর শুধু বলেছিলেন, ‘‘ভারত ও পাকিস্তান গোলাগুলি ও সামরিক অভিযান বন্ধ রাখার বোঝাপড়ায় পৌঁছেছে।’’ তার পরে বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী জানান, পাকিস্তানের ডিজিএমও ভারতের ডিজিএমও-কে ফোন করেছিলেন। তার পরেই গোলাগুলি বন্ধ করা নিয়ে ঐকমত্য হয়। সরাসরি না বললেও মোদী সরকার এই বোঝাপড়ার কৃতিত্ব ট্রাম্পকে দিতে রাজি হয়নি।
এর পরেও রবিবার সকালে ট্রাম্প নতুন করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বোঝাপড়ার কৃতিত্ব দাবি করেছেন। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘‘বহু মৃত্যু ও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ভারত ও পাকিস্তানের মজবুত নেতৃত্ব শক্তি ও বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে এখন যে আগ্রাসনে ইতি টানার সময় বুঝতে পেরেছে, তাতে আমি গর্বিত। না হলে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষের মৃত্যু হত। আমি গর্বিত যে আমেরিকা আপনাদের এই সাহসীয় ও নায়কোচিত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করেছে। যদিও আলোচনা হয়নি, তবে আমি দুই দেশের সঙ্গেই যথেষ্ট পরিমাণে বাণিজ্য বাড়াতে চলেছি।’’ এর সঙ্গেই কাশ্মীর প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প জানান, ‘‘আমি আপনাদের দুই পক্ষের সঙ্গেই কাজ করব, যাতে হাজার বছর পরে কাশ্মীর নিয়ে সমাধানে পৌঁছনো যায়। ঈশ্বর ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্বকে ভাল কাজের জন্য আশীর্বাদ করুন।’’
ঘরোয়া ভাবে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব খারিজ করলেও মোদী সরকার মুখে এ নিয়ে কিছু না বলায় বিরোধীরা এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস নেতা তথা ইউপিএ সরকারের মন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘পাকিস্তানের ডিজিএমও শনিবার বিকেল ৩টে ৩৫ মিনিটে ভারতের ডিজিএমও-কে ফোন করে সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব দিলেন। ভারত রাজি হল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা টুইট করে বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে জানিয়ে দিলেন। তার কয়েক মিনিট পরে আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো জানালেন, ভারত ও পাকিস্তান কোনও
নিরপেক্ষ স্থানে বৈঠকে বসবে। ভারতের বিদেশসচিব সন্ধ্যা ছ’টায় ছোট্ট বিবৃতি দিলেন। কিন্তু তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়োর দাবি বা বৈঠক নিয়ে কোনও কথা বললেন না। এই সময় ও ঘটনা পরম্পরা খুবই কৌতূহলজনক।’’