লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাইয়ের বক্তব্য, ‘‘অপারেশন সিঁদুর-এর লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিকে নিশানা করা। সেই লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হয়েছে।’’ তাঁর যুক্তি, সামরিক হানায় ইউসুফ আজহার, আবদুল মালিক রউফ, মুদাস্সির আহমেদের মতো সন্ত্রাসবাদীরা নিহত হয়েছে। যারা আইসি-৮১৪ বিমান অপহরণ ও পুলওয়ামার সন্ত্রাসবাদী হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। ন’টি জঙ্গি ঘাঁটিকে নিশানা করা হয়েছে। ১০০ জনের বেশি সন্ত্রাসবাদী নিহত।
কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, পহেলগামের সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাবে এ বার ভারত সামরিক অভিযানের মাধ্যমে দিয়েছে। সেই অভিযানে বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে ও মুজফ্ফরাবাদের জঙ্গি ঘাঁটি মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সন্ত্রাসের ঘাঁটি মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। তাই হয়েছে। এর মধ্যে জইশ-ই-মহম্মদের বাহাওয়ালপুরের শিবিরে হামলা আসলে আইএসআই-কে শাস্তি হিসেবে দেখছে ভারতের সামরিক ও গোয়েন্দা বাহিনী। কারণ আইএসআই জইশ-ই-মহম্মদ তৈরি করেছিল। সামরিক বাহিনীর এক কর্তা বলেন, ‘‘এ বার সাপের মাথায় লাঠি মারা হয়েছে।’’ ডিজিএমও বলেন, ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে পাকিস্তানের সেনা ড্রোন, ইউএভি-র মাধ্যমে ভারতে হামলা চালিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি চালানো হয়েছে। তাই পাল্টা জবাব দিতে হয়েছে ভারতকে। ভারতের পাঁচ জন জওয়ান মারা গিয়েছেন। পাকিস্তানের ৩৫-৪০ জন সেনা মারা গিয়েছেন। যদিও ভারতের সেনা পাকিস্তানি সেনার মৃত্যুর সংখ্যা গুনছে না। কারণ, লক্ষ্য পাকিস্তানের সেনা ছিল না।
সরকারি সূত্র বলছে, রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে ভারত সন্ত্রাসের সঙ্গে সিন্ধু জল চুক্তিকে জুড়ে দিয়েছে। পহেলগামের পরেই সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেছিল বিদেশ মন্ত্রক। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ বিরতি পড়লেও সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতই থাকছে, যত দিন না সীমান্ত পারের সন্ত্রাস বন্ধ হবে। পহেলগামের পরে ভারতের অবস্থানই হল, আগের মতো সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে চলবে না। যথেষ্ট হয়েছে বলে ভারত এ বার পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। পাকিস্তান সন্ত্রাসে মদত দেবে, অথচ জল বণ্টনে সহযোগিতা আশা করবে, তা চলবে না। এটাই ‘নিউ নর্মাল’।
মনস্তাত্বিক লক্ষ্য পূরণ হিসেবে মোদী সরকারের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, ভারত এ বার থেকে সন্ত্রাসকে যুদ্ধ হিসেবে দেখবে বলে নতুন রণনীতি নিয়েছে। যার অর্থ, যুদ্ধের মোকাবিলা যুদ্ধের মাধ্যমেই করা হবে। শুধু তা-ই নয়। ভারত এ বার পাকিস্তানের ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভারতে ঢুকে হামলা চালিয়েছে। প্রথমে সন্ত্রাসবাদী শিবির। তার পরে সারগোদার মতো পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ভারত হামলা চালিয়েছে। যেখানে পাকিস্তানের অত্যাধুনিক বিমান থাকে। বার্তা স্পষ্ট, যতই পাকিস্তানের গভীরে সন্ত্রাসবাদীরা লুকিয়ে থাকুক, তাকে নিশানা করা হবে। পাকিস্তান এ বার কিছু করার আগে দু’বার ভাববে। তারা জেনে গিয়েছে, কী জবাব আসছে। ভারতের সামরিক ক্ষমতা, কৌশল ও প্রস্তুতিও পাকিস্তান টের পেয়েছে।
ডিরেক্টর জেনারেল অব নাভাল অপারেশনস ভাইস অ্যাডমিরাল এ এন প্রমোদ বলেন, ‘‘এ বার পাকিস্তান যদি কোনও পদক্ষেপের দুঃসাহস দেখায়, তা হলে পাকিস্তান জানে কী হতে চলেছে।’’
আজ প্রধানমন্ত্রী সামরিক বাহিনীর কর্তা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। তার পরে সেনাপ্রধানও সেনাকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শনিবার সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্তের পরেও পাকিস্তান তা লঙ্ঘন করেছিল। রবিবারও কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেনাপ্রধান আগেই নির্দেশ দেন, সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন হলে পাল্টা মারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।