টেলিপাড়ার তিন কন্যা...
ঘড়ির কাঁটা তখন প্রায় রাত এগারোটার কাছাকাছি। রেস্তরাঁর দরজা খুলে দিব্যানী (মণ্ডল) ঢুকেই চমকে উঠলেন আরাত্রিকাকে (মাইতি) দেখে। ‘আরে তুই! জানতাম না’। সারাদিন শুটিংয়ের পরেও তাঁদের চোখে-মুখে বিন্দুমাত্র ক্লান্তির ছাপ নেই। স্ট্রবেরি শেকে গলা ভিজিয়ে দুই বন্ধু খোশগল্পে মগ্ন হতেই সেখানে হাজির ঈশানী (চট্টোপাধ্যায়)। জ়ি বাংলার ‘ফুলকি’, ‘মিঠিঝোরা’ ‘পরিণীতা’র তিন অভিনেত্রী এক টেবিলে আনন্দ প্লাস-এর সঙ্গে।
প্র: আপনাদের দেখে মনে হচ্ছে বেশ বন্ধুত্ব রয়েছে?
আরাত্রিকা: আগে বলি এই আড্ডার সুযোগটা দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমাদের তিনজনের মধ্যে একটা মিল আছে আর সেটাই আমাদের বন্ধুত্বের কারণও।
দিব্যানী: আমরা তিনজনই মফস্সল থেকে এসেছি। আমি মুর্শিদাবাদের মেয়ে। আরাত্রিকা এসেছে ঝাড়গ্রাম থেকে। ঈশানীর বাড়ি দুর্গাপুরে।
ঈশানী: এখন তো টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির বেশির ভাগ শিল্পী মফস্সল থেকেই উঠে আসছে। আসলে কলকাতায় এসে একা থাকাটা আমাদের সকলের কাছেই বিরাট চ্যালেঞ্জ। এটা আমার প্রথম সিরিয়াল। এমনও হয়েছে বাড়ি ফিরে মেকআপ না তুলে ফোনে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছি। আবার এমনও হয়েছে রাতে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে মনে মনে সিরিয়ালের দৃশ্যে ঢুকে পড়তাম।
দিব্যানী: (মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে) আমার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা হয়েছে। ‘ফুলকি’ আমারও প্রথম সিরিয়াল। টানা ১৪ ঘণ্টা শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা আগে ছিল না। একদিন মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ‘চুড়ি দাও, চুড়ি দাও’ বলছি। সে দিন ফ্লোরে চুড়ি হারিয়ে ফেলেছিলাম বলে বকুনি খেয়েছিলাম। বাড়ি ফেরার পরেও সেটা মাথা থেকে যায়নি। তবে আরাত্রিকাকে দেখে আমার হিংসে হয় মাঝেমাঝে (মুচকি হাসি দিয়ে ঠান্ডা পানীয়তে চুমুক দিলেন)
আরাত্রিকা: ওদের সঙ্গে আমার একটাই অমিল। আমার সঙ্গে বাবা-মা থাকে। আমি একা থাকতে পারব না বলে মা ঝাড়গ্রাম থেকে চাকরি ছেড়ে আমার সঙ্গে কলকাতায় চলে এসেছিল। পরে বাবাও চলে আসে। কিন্তু দিব্যানী-ঈশানীর এই সুবিধে নেই। তবে ওদের কষ্টটা আমি বুঝি। আমি তো দিব্যানীকে কখনও কখনও আমার বাড়িতে ডেকে নিই। কয়েক মাস আগে ছুটি পেয়েছিলাম, একসঙ্গে দার্জিলিং ঘুরে এলাম।
ঈশানী: আরাত্রিকাকে দেখি, ও বাড়ি ফিরে মায়ের হাতের খাবারটুকু পায়। বাড়ি ফিরে নিজের হাতে সবকিছু জোগাড় করা বা রান্না করা ভীষণ কষ্টকর। এমনিতে সিরিয়াল থেকে ছুটি পাই না। একমাত্র দ্বিতীয় রবিবার ছুটি পেলে বাড়ি যাই। এই সময়টা খুব আনন্দের। সেটা আমরা তিনজনই খুব বুঝতে পারি।
ইতিমধ্যে টেবিলে এসে গিয়েছে ডেভিল ক্র্যাব, নিরামিষ পরোটা, ত্রিভুবন পোলাও, ঘি রোস্ট মাটন... দিব্যানীর পাতে মাটন পরিবেশন করতে গিয়ে বাধা এল
দিব্যানী: আমি পুরোপুরি নিরামিষাশী। আর খুব দেরি হলে ডিনার করি না। কিছু দিন আগে একটু পেটের সমস্যায় ভুগেছি।
আরাত্রিকা: আমি কাঁকড়া ভালবাসি। চল ঈশানী, আমরা শেয়ার করে খাই। আমার কোনও খাবারেই আপত্তি নেই।
ঈশানী: যত জাঙ্ক ফুড আছে আমি সব খাই। শুটিংয়ের ফাঁকে ফুচকা খাই। তবে সবচেয়ে প্রিয় মায়ের হাতে মাখা আলু সিদ্ধ, ডাল আর ভাত। ওটা মিস করি।
প্র: অভিনয়ের সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান সবাই?
ঈশানী: পড়াশোনা তো শেষ করতেই হবে। কিন্তু এই বছর হবে না। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়ার সময়ে মাঝপথে ছেড়ে দিয়েছিলাম।
আরাত্রিকা: আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু অভিনয়ে সুযোগ পাওয়ায় সেটাও ছাড়তে হল।
দিব্যানী: আমিও যাদবপুরে ইংরেজি নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম, ‘ফুলকি’ শেষ হলে লেখাপড়াটা সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করব।
প্র: এই বন্ধুত্বের মধ্যে কোনও প্রতিযোগিতা নেই? সিরিয়ালের দুনিয়ায় সবটাই তো টিআরপি নির্ভর...
দিব্যানী: টিআরপি আমাদের কাছে গুরুত্ব পায় না। তাই পর্দার বাইরে এ নিয়ে কখনও আলোচনাও করি না। আজ ‘পরিণীতা’ প্রথম, কাল ‘ফুলকি। পরশু অন্য কেউ হতে পারে। আমরা নিজেরা কাজ নিয়ে কখনওই আলোচনা করি না। তাই নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
আরাত্রিকা: ‘মিঠিঝোরা’ কখনও টিআরপি তালিকায় প্রথম পাঁচে আসতেই পারেনি। কিন্তু প্রায় দেড় বছর হতে চলল ধারাবাহিকের। পাশের ফ্লোরে তিনটে সিরিয়াল বন্ধ হতে দেখলাম। আমার আগের সিরিয়াল ‘খেলনা বাড়ি’ অবশ্যই দুর্দান্ত টিআরপি রেটিং দিয়েছিল। আলোচনায় আছি, এটাও তো কম নয়। টিআরপি তালিকায় উপরের দিকে না থেকেও যে সিরিয়ালটি চলছে, সেটা ভাল বিষয়। তার মানে টিআরপি ছাড়াও দর্শকের ভালবাসা পাওয়া যায়।
ঈশানী: টিআরপি রেটিং নয়, আমরা বেশি আগ্রহী কোন সিরিয়ালের কেমন প্রোমো বেরোল, তা নিয়ে। কী রে, তাই তো? (সকলে হো হো করে হেসে উঠল)
দিব্যানী: আসলে আমরা সবাই নিজের সেরাটা দিতে চাই। প্রতিযোগিতা, টিআরপি দিয়ে সেরা বিচার করা যায় না।
আরাত্রিকা: সবাই ১৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করছি। এর পর কোন সিরিয়াল চলবে বা চলবে না সেটা দর্শক বিচার করবেন।
দিব্যানী: আরও অনেক বছর পর এ ভাবেই যেন আমরা রাত বারোটা অবধি আড্ডা দিতে পারি, এটুকুই চাওয়া। এই বন্ধুত্ব বজায় থাকুক আর সাফল্য আমরা ঠিক অর্জন করে নেব।
ঈপ্সিতা বসু
ছবি: সর্বজিৎ সেন
লোকেশন ও হসপিটালিটি:
বাবু কালচার, ডোভার লেন