রাজনীতি নেই: ট্রাম্প-পুত্রের সংস্থা
বাণিজ্য চুক্তির ট্রাম্প-মুনির যোগে এখন নজর দিল্লির
নয়াদিল্লি, ১৬ মে: পহেলগাম কাণ্ড এবং ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জেরে প্রশ্ন উঠেছে আমেরিকার অবস্থান নিয়ে। আর তার জেরেই নজরে এসেছে আমেরিকার একটি সংস্থার সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্যিক চুক্তি। সেই চুক্তিতে যেমন রয়েছে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবারের সদস্যদের যোগ, তেমনই জড়িত আছেন পাকিস্তানি সেনাপ্রধান আসিম মুনির।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির সমঝোতায় তাঁর প্রশাসনই মধ্যস্থতা করেছে বলে সমাজমাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। পরে ভারত দাবি করেছিল, পাকিস্তানি সেনার তরফেই প্রথমে সংঘর্ষবিরতির সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও ট্রাম্প দাবি করেন, দু’দেশকে সংঘাত বন্ধ করে বাণিজ্য করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। তার ফলেই সংঘাত মিটেছে বলে দাবি তাঁর। ট্রাম্প দাবি আরও করেছেন, অন্য কোনও আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বাণিজ্যকে এ ভাবে ব্যবহার করেননি।
এই বাণিজ্য নিয়ে চাপ দেওয়ার দাবির সূত্রেই বিভিন্ন শিবিরের নজর পড়েছে একটি বাণিজ্য চুক্তির উপরে।
সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, পহেলগামে পর্যটকদের উপরে জঙ্গি হামলার কয়েক দিন আগে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় আমেরিকার ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিনান্সিয়াল’ ও পাকিস্তানের নবগঠিত ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি কাউন্সিল’-এর মধ্যে। বেসরকারি ডিজিটাল মুদ্রা (ক্রিপ্টোকারেন্সি) ও ব্লকচেন সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিনান্সিয়াল’-এর অন্যতম অংশীদার ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে এরিক, ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র এবং জামাই জ্যারেড কুশনার। এই তিন জন অংশীদারের কাছে ওই সংস্থার ৬০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এপ্রিল মাসে ‘পাকিস্তান ক্রিপ্টো কাউন্সিল’-এর সঙ্গে ওই সংস্থার একটি প্রাথমিক চুক্তি হয়।
সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, ‘ক্রিপ্টো কাউন্সিল’ গঠনের কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তানকে দক্ষিণ এশিয়ার ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি রাজধানী’ করে তোলার কথা ঘোষণা করে সে দেশের সরকার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ঝানপেং ঝাও-কে পাক ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি কাউন্সিল’-এর পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, পাক ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি কাউন্সিল’-এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে ওয়াশিংটন থেকে ইসলামাবাদে গিয়েছিল ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল’-এর একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। নেতৃত্বে ছিলেন ওই সংস্থার অন্যতম অংশীদার জ়্যাকারি উইটকফ। তিনি ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের বাণিজ্য-সহযোগী ও বর্তমানে পশ্চিম
এশিয়া সংক্রান্ত আমেরিকার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের ছেলে।
সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, ওই দলটিকে ব্যক্তিগত ভাবে অভ্যর্থনা জানান পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সঙ্গে ওই দলটির দু’টি রুদ্ধদ্বার বৈঠকেই হাজির ছিলেন মুনির। পহেলগাম হামলায় যে মুনিরের সরাসরি ভূমিকা আছে বলে মনে করছে দিল্লি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন একটি বাণিজ্যিক চুক্তির ক্ষেত্রে মুনিরের উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ। এই চুক্তির সঙ্গে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তার কোনও সম্পর্ক আছে কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। তবে এখনও তেমন কোনও যোগের প্রমাণ মেলেনি।
পহেলগাম কাণ্ডের পরে এই চুক্তি নিয়ে নানা শিবিরে আলোচনার জেরে ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিনান্সিয়াল’-এর তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই চুক্তির পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। বিষয়টি নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি ট্রাম্প পরিবার এবং হোয়াইট হাউস।
ভারতীয় কৌশলগত বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ‘অস্বচ্ছ আর্থিক চুক্তি’।
সংবাদ সংস্থা