আম পাড়ার ‘দোষে’ মারধর, কিশোরের মৃত্যুতে উত্তেজনা
নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যারাকপুর: মামার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এসে বন্ধুদের নিয়ে কাছেই একটি আমবাগানে ঢুকে আম পেড়েছিল বছর সতেরোর কিশোর। অভিযোগ, ঘটনাটি দেখতে পেয়ে বাগানের ইজারাদার তাকে মারধর করে ও ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। ওই কিশোরের সঙ্গে থাকা দুই বন্ধু লোকজন ডেকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় ছেলেটির। এই ঘটনা ঘিরে শুক্রবার সকাল থেকে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়াল নৈহাটির শিবদাসপুর থানা এলাকার আতিসারা গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত সুদীপ্ত পণ্ডিতের বাড়ি কাঁচরাপাড়ার বাসন্তীতলায়। অভিযুক্ত ইজারাদার শেখ ফারহাদ ওরফে ফুরাদ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরে ক্ষুব্ধ জনতা ওই আমবাগানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পথ অবরোধ করে, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয় কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার আতিসারা গ্রামে সুদীপ্তের মামার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে সুদীপ্ত ও তার দুই বন্ধু বেরিয়েছিল। মামার বাড়ির কাছেই স্থানীয় একটি বড় আমবাগানে গাছ ভর্তি আম দেখে তারা ঢিল ছুড়ে যখন সেগুলি পাড়ছিল, তখনই ঘটনাটি চোখে পড়ে যায় আমের গুদামে বসে থাকা ইজারাদার ফারহাদের। সে তাড়া করে সুদীপ্তদের। দুই বন্ধু কোনও মতে পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে যায় সুদীপ্ত। অভিযোগ, তাকে মারধর করে ফারহাদ। সুদীপ্তের দুই বন্ধু স্থানীয় এক দম্পতিকে ঘটনার কথা জানায়। বেশ কিছু ক্ষণ পরেও সুদীপ্ত না ফেরায় সকলে মিলে খুঁজতে এসে দেখেন, বাগানের মধ্যে অচৈতন্য অবস্থায় উপুড় হয়ে পড়ে আছে ওই কিশোর। মাথায় ও মুখে আঘাতের চিহ্ন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মারধরের পরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় মাথায় চোট পেয়ে মৃত্যু হয়েছে সুদীপ্তের।
এই ঘটনা ঘিরে শুক্রবার দুপুর থেকে উত্তেজনা ছড়ায় শিবদাসপুরে। গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে আমের গুদামে আগুন ধরিয়ে দেন। দমকল গিয়ে আগুন নেভায়। পথে নামে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও। বিজেপি ও সিপিএমের প্রতিনিধিরা ওই কিশোরের বাড়িতে যান। পথ অবরোধ হয়। ব্যারাকপুরের নগরপাল অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘আমরা অভিযুক্তকে শালিদহের পূর্বপাড়ার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছি। কিন্তু অবাক হচ্ছি এই ঘটনায়। কিশোর বয়সের একটি ছেলে আমই তো পেড়েছে। তাকে মেরে ফেলা হল?’’
নৈহাটির বিধায়ক সনৎ দে বলেন, ‘‘কিশোর বয়সে এ ভাবে আম পাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। তার জন্য এমন মারতে হল যে, ছেলেটি মারাই গেল! আমরা পরিবারের পাশে আছি।’’ সিপিএম নেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্যায় ও বিজেপি নেতা প্রিয়াঙ্গু পাণ্ডেও মৃত কিশোরের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
সুদীপ্তের বাবা তাপস পণ্ডিত বলেন, ‘‘যখন ঘটনাটি জানতে পারলাম, ছেলের নিথর দেহ তখন নৈহাটি হাসপাতালে। দুটো আমই তো পেড়েছিল, খায়ওনি। কেড়ে নিয়েছিল ইজারাদার। তা হলে কেন মেরে ফেলা হল আমার ছেলেকে?’’
জনরোষ: কিশোরের মৃত্যুর খবরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে আমের গুদামে। শুক্রবার, নৈহাটির শিবদাসপুরে। নিজস্ব চিত্র