রদবদলের আগে জেলায়
‘মেন্টর’ ফেরাচ্ছেন মমতা
রবিশঙ্কর দত্ত
জেলা পরিষদে ‘মেন্টর’ ব্যবস্থা ফেরাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা ভোটের আগে জেলা পরিষদগুলিতে এই নিয়োগ শুরু করেছে রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর। ‘মেন্টর’ পদটি সরকারি ভাবে স্বীকৃত হলেও রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে এই রাজনৈতিক নিয়োগ আগে এক বার শুরু করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে অবশ্য সেই পদে কাউকে রাখা হয়নি। এখন আবার সেই ব্যবস্থা ফেরানো হচ্ছে।
বারবার আলোচনা হলেও সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে টানাপোড়েন এখনও অব্যাহত। তার আগেই ‘মেন্টর’ নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর সাংগঠনিক ভাবনাই দেখছেন দলীয় নেতৃত্বের একাংশ। ইতিমধ্যেই হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমানের মতো জেলায় পঞ্চায়েত দফতরের এই বিজ্ঞপ্তি পৌঁছেছে। হাওড়ায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাক্তন মন্ত্রী অখিল গিরি, বাঁকুড়ায় প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ খাঁ-কে জেলা পরিষদের ‘মেন্টর’ করা হয়েছে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘বিধানসভা ভোটের আগে পঞ্চায়েত স্তরে কাজকর্মে বাড়তি গতি আনতে একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
বাস্তবে ‘আলঙ্কারিক’ হলেও মর্যাদায় ‘মেন্টর’ জেলা পরিষদের সর্বোচ্চ পদাধিকারী সভাধিপতি স্তরের সমান। জেলায় জেলায় সভাধিপতি পদের জন্য একাধিক দাবিদার থাকায় রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে এই ‘মেন্টর’ পদ তৈরি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন জেলায় প্রথম সারির যে নেতাদের চাহিদা মতো পদ দেওয়া যায়নি, তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হয় এই পদে। কিন্তু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে তুলে দেওয়া সেই পদ কেন ফিরিয়ে আনা হল, তা নিয়েই দলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের একাংশের মতে, এ বার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী-পদের দাবিদার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই এই দাবিদারদের একাংশকে ‘জায়গা’ দেওয়ার জন্যই এই পথ নেওয়া হয়েছে।
এই পদক্ষেপে অবশ্য দলের অন্দরে ‘জটিলতা’ তৈরির আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। চলতি সপ্তাহে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা শুরু হতেই দু’টি জেলা থেকে নির্দিষ্ট আপত্তি এসে পৌঁছেছে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। ফলে, ভোটের আগে জেলায় জেলায় ক্ষমতার নতুন কেন্দ্র তৈরি হয়ে গেলে তা সামগ্রিক ভাবে
দলের সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। সাধারণ ভাবে এই ‘মেন্টর’দের হাতে কোনও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা না থাকলেও অনুগামী-ভিত্তিক রাজনীতি জেলা পরিষদের পাশাপাশি দলের দৈনন্দিন কাজেও বাধা তৈরি
করতে পারে।
দলীয় সূত্রে খবর, খুব দ্রুত সাংগঠনিক রদবদলের প্রক্রিয়াও শুরু করে দেবেন তৃণমূল নেত্রী। কারণ, প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংগঠনিক রদবদলে সিদ্ধান্ত ঝুলে রয়েছে। যদি শেষ পর্যন্ত রদবদল করতেই হয়, তবে তা আরও পিছিয়ে দেওয়া ভুল হবে বলেই মনে করছেন দলীয় নেতৃত্বের একাংশ। একই ভাবে এই পর্বেই তৃণমূলের শাখা সংগঠনেও বদলের সম্ভাবনা রয়েছে।