বাবা-ছেলেকে খুনের তদন্তেই জোর মুর্শিদাবাদে
শিবাজী দে সরকার
ওয়াকফ আইনের বিরোধিতার নামে মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ান এবং শমসেরগঞ্জে হিংসা এবং খুনের ঘটনায় প্রায় ১২০টি মামলা রুজু করা হয়েছিল। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য শমসেরগঞ্জের জাফরাবাদে বাবা-ছেলেকে খুনের ঘটনা। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই মামলাগুলির মধ্যে প্রাথমিক ভাবে পাঁচ-ছ’টি মামলার তদন্তকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে বাবা-ছেলেকে খুন, বেতবোনায় একটি চায়ের দোকানে ভাঙচুর করে আগুন লাগানো, জাফরাবাদে মৃৎশিল্পীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার মতো ঘটনা।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, প্রশাসনের তরফে ওই মামলাগুলির তদন্তের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বাবা-ছেলেকে খুনের ঘটনাকে। ওই ঘটনার তদন্ত যাতে দ্রত শেষ করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যায়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
গত ৮ এপ্রিল ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জের মতো এলাকায় অশান্তি শুরু হয়। দু’দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার পরে ১১ এপ্রিল শমসেরগঞ্জের পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর, আগুন লাগানো থেকে শুরু করে পুলিশ অফিসারের সার্ভিস রিভলভার লুট করার মতো ঘটনাও ঘটে। সেই রাতে এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী নামিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও ১২ এপ্রিল শমসেরগঞ্জের বেতবোনা, দিঘরি, জাফরাবাদের মতো গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে অত্যাচার চালায় একদল স্থানীয় দুষ্কৃতী। তাদের হাতেই জাফরাবাদে খুন হন বাবা ও ছেলে। ওই ঘটনাগুলির তদন্তের জন্য নবান্নের তরফে রাজ্য
পুলিশের বাছাই অফিসারদের নিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করা হয়। যারা স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে তদন্ত করছে।
প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা জেনেছেন, বাবা ও ছেলেকে কোপানোর সঙ্গে জড়িত কমপক্ষে পাঁচ জন, যারা ঘটনার দিন ধারাল অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করেছিল। বর্তমানে তারা ভিন্ রাজ্যে পালিয়ে যেতে পারে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। এক পুলিশকর্তা জানান, ওই ঘটনায় ধৃত কালু নাদাবের আরও দুই আত্মীয় জড়িত রয়েছে। তাদেরও খোঁজ করছে সিট এবং জেলা পুলিশ। সেই সঙ্গে মৃতদের পড়শি ইউসুফ শেখ, আকবর শেখ-সহ আরও কয়েক জনকে খোঁজা হচ্ছে। ওই পুলিশকর্তা জানান, অভিযুক্ত বা ধৃতেরা সকলেই একই গ্রাম বা পাশের গ্রামের বাসিন্দা। ফলে খুনের কারণ কী, তা জানার চেষ্টা চলছে।
সূত্রের খবর, ওই খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চার জনকে ধরা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে খুনের জন্য সকলকে নিয়ে জমায়েত করা এবং খুনের নেতৃত্ব দেওয়া জিয়াউল হক বা চাচা। তাকে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার আগে ইনজামুল হক, কালু নাদাব ও দিলদার নাদাব নামে তিন জনকে ধরা হয়েছিল। কালু ও দিলদার দুই ভাই। ধৃতদের বাড়ি জাফরাবাদের বাশের শুলিতলাতে।