ভরসার কাঁধ কাশ্মীরেই, বলছেন পর্যটকরা
শ্রীনগর, ২৪ এপ্রিল: জখমকে কাঁধে তুলে নিয়ে ছুটে চলেছেন যুবক, পাহাড়ি পথে প্রাণপণে— এমনই এক টুকরো ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে ভরসার বার্তা নিয়ে। বৈসরন উপত্যকার সেই পথে এখনও কাদার মধ্যে ইতস্তত ছড়িয়ে চটিজুতো। জঙ্গি হামলার পরে অচেনা জখম পর্যটককে কাঁধে তুলে নিয়ে পিছল, দুর্গম এই পথ পেরিয়ে গত মঙ্গলবার পহেলগাম হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিলেন বেশ কয়েক জন জন কাশ্মীরি যুবক।
এমনই এক জন সাজ্জাদ আহমেদ ভাট। শাল বিক্রেতা। ওয়টস্যাপ গ্রুপে পর্যটকদের উপরে জঙ্গি হামলার খবর পেয়েই ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “আমার কাছে ধর্মের অনেক আগে মানবতা।” সাজ্জাদ বলছিলেন, “বিকেল ৩টের দিকে ওখানে পৌঁছই। আহতদের জল খাওয়াই। পর্যটকদের কাঁদতে দেখে আমার চোখেও জল আসছিল। হাঁটতে পারছিলেন না যাঁরা, তাঁদের মধ্যে কয়েক জনকে আমিও কাঁধে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। এই পর্যটকদের সূত্রে আমাদের অন্নের সংস্থান হয়। পর্যটকেরা না থাকলে তো আমাদের জীবন অসম্পূর্ণ।” যে দুর্গম পথ তাঁদের অভ্যস্ত পায়েও পার হতে মিনিট পঁচিশ লেগে যায়, সেই দিন জখমদের কাঁধে নিয়ে কুড়ি মিনিটে তা পেরিয়ে গিয়েছিলেন সাজ্জাদরা।
ওয়টস্যাপ গ্রুপে পহেলগাম পনি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল ওয়াহিদ ওয়ান হামলার পরে খবরটি দিয়েছিলেন, যা দেখে সাজ্জাদের মতো অনেকে ছুটে যান। গুলির আওয়াজ শুনে ছুটে গিয়ে ওয়াহিদ সেই বীভৎস দৃশ্য দেখেছিলেন। বলছিলেন, “প্রথম যেটা মনে হয়েছিল, যা-ই ঘটে যাক না কেন, এখান থেকে সরে যাওয়া যাবে না। এই মানুষগুলোকে ফেলে রেখে আমি চলে যেতে পারি না। যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের তো ফেরানো যাবে না, সেটাই বাস্তব। কিন্তু যাঁদের দেহে এখনও প্রাণ আছে, তাঁরা যেন বাঁচতে পারেন।” দশ-বারো জনকে ঘোড়ায়, কারও কাঁধে বা চারপাইয়ে চাপিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন সেই দিন।
সমাজমাধ্যমে উঠে এসেছে আরও এক কাশ্মীরি যুবকের কথা। গাড়ি চালক আদিল। একটি ভিডিয়োয় মহারাষ্ট্রের একটি পর্যটক পরিবারকে বলতে শোনা গিয়েছে, কী ভাবে তিনি নিজের বাড়িতে এনে তাঁদের আশ্রয় দেন। আদিল বলছিলেন, “অন্য কারও ভুলের মাসুল সবাইকে দিতে হবে।” তবে আদিলদের ভরসার জোরও অনেক। কারণ, মরাহাষ্ট্র থেকে ঘুরতে আসা দুই মহিলা পর্যটক বলেছেন, সেই দিনের পরে তাঁরা পহেলগাম থেকে চলে এলেও এখন কাশ্মীরেই আছেন। ঘোরা শেষ করে তবেই ফিরবেন।
সংবাদ সংস্থা