সমাজমাধ্যমে বন্ধুত্ব, গয়নার লোভেই খুন প্রেমিকাকে
নিজস্ব সংবাদদাতা
গল্পের মণিমালিকা স্বামী ফণিভূষণের সংসার ছেড়ে চলে গিয়েছিল গয়না সম্বল করে। তার পরে এক রাতে ফণিভূষণ দেখেছিল, গয়না পরা মণিমালিকার কঙ্কাল। মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের এক তরুণীর খুন হওয়ার ঘটনাটি অনেকটাই মিলে গিয়েছে মণিমালিকার কাহিনির সঙ্গে।
আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকার গয়না ও বেশ কিছু নগদ টাকা সমেত ওই তরুণী নবগ্রাম থেকে বারাসতে চলে এসেছিলেন সমাজমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া এক বন্ধুর কাছে। নিজেকে মার্চেন্ট নেভির আধিকারিক বলে পরিচয় দেওয়া সেই যুবককে ভালবেসে তার সঙ্গে থাকতেও শুরু করেছিলেন। কিন্তু রিয়া ধর নামে ওই তরুণী বুঝতেই পারেননি যে, তিনি নন, প্রেমিকের আসল লক্ষ্য ছিল তাঁর গয়না হাতিয়ে নেওয়া। পুলিশের দাবি, ওই বিপুল টাকার গয়নার জন্যই খুন হতে হয়েছে রিয়াকে। পুলিশ জেনেছে, রিয়া তাঁর গয়না দিতে অস্বীকার করেছিলেন প্রেমিক কৌশিক প্রামাণিককে। সেই কারণেই কৌশিক খুন করে তাঁকে। বারাসতের একটি বিলাসবহুল আবাসনে ফ্ল্যাট কিনেছিল কৌশিক। বিপুল টাকার চাহিদা ছিল তার।
গত মঙ্গলবার বাগুইআটি থানার পুলিশ স্থানীয় প্রতিবেশীপাড়ায় ট্রলি ব্যাগে ভরা রিয়ার দেহ উদ্ধার করে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে কৌশিকের হদিস পায় পুলিশ। তারা এ-ও জানতে পারে যে, রিয়াকে অপহরণের অভিযোগে তার আগেই কৌশিককে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে নবগ্রাম থানার পুলিশ। কৌশিকের বিরুদ্ধে রিয়াকে খুনের অভিযোগে বাগুইআটি থানায় মামলা দায়ের হলেও, সেটি শেষ পর্যন্ত নবগ্রাম থানার কাছেই পাঠানো হবে বলে বিধাননগর পুলিশ সূত্রে খবর।
পুলিশ জানাচ্ছে, দেহ উদ্ধারের পরে এলাকার বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু হয়। তাতে দেখা যায়, গত সোমবার একটি কালো ট্রলি ব্যাগ নিয়ে কেউ এক জন হেঁটে যাচ্ছে ঘটনাস্থলের দিকে। সেই ফুটেজ থেকে একটি অ্যাপ-ক্যাবকে চিহ্নিত করে সেটির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, গত সোমবার সন্ধ্যায় বারাসতের ওই বহুতল থেকে কৌশিক ক্যাব বুক করেছিল। একটি সন্দেহজনক ভারী সুটকেস নিয়ে সেই ক্যাবে উঠেছিল। দেশবন্ধুনগরে নেমে যায় সে।
তদন্তকারীরা জানান, ক্যাবচালকের বয়ানের ভিত্তিতে বাগুইআটি থানার পুলিশ ও বিধাননগরের গোয়েন্দারা বারাসতের ওই আবাসনে হানা দিয়ে জানতে পারেন, নবগ্রাম থানা একটি অপহরণের মামলায় কৌশিককে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে। এর পরে বাগুইআটি থানা নবগ্রাম থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, কৌশিকের বিরুদ্ধে অমিতকুমার ধর নামে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী রিয়াকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর পরেই সুটকেসবন্দি তরুণীর দেহের ছবির সঙ্গে রিয়ার ছবি মিলিয়ে বোঝা যায়, রিয়াই খুন হয়েছেন। গত সোমবারই রিয়াকে খুন করার পরে তাঁর দেহটি প্রতিবেশীপাড়ায় ফেলে গিয়েছিল কৌশিক। বিধাননগর কমিশনারেটের এক পদস্থ আধিকারিকের কাছে ভিডিয়ো কলে কৌশিক অপরাধ স্বীকার করে নেয় বলে দাবি পুলিশের।
নবগ্রামে রিয়ার শ্বশুরবাড়ির তরফে জানানো হয়েছে, সংখ্যালঘু পরিবারের ওই তরুণী অমিতের সঙ্গে বিয়ের পরে নাম বদলে রিয়া ধর হয়েছিলেন। তাঁর মা-বাবার বাড়ি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়। অমিতের ঝুটো গয়নার ব্যবসা রয়েছে। তাঁদের দু’টি সন্তানও রয়েছে। পুলিশের দাবি, রিয়ার স্বামী অভিযোগে জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সমাজমাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে কৌশিকের। গত ২ এপ্রিল রিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন। অমিত নিখোঁজ ডায়েরি করার পরে জানতে পারেন, রিয়া বারাসতে কৌশিকের সঙ্গে থাকছেন। এমনটাই দাবি পুলিশের।
গত ২২ এপ্রিল নবগ্রাম থানায় রিয়াকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়। আবার ওই দিন সকালেই বাগুইআটিতে রিয়ার মৃতদেহ মেলে একটি ট্রলি ব্যাগে বন্দি অবস্থায়। অপহরণের অভিযোগের মামলায় আপাতত নবগ্রাম থানায় পুলিশি হেফাজতে রয়েছে কৌশিক।