ত্বক থাক নিরাপদে শামুকের খোলসে
রূপচর্চায় জনপ্রিয়তা বাড়ছে শামুকজাত প্রসাধনীর। ভারতীয় ত্বকের জন্য তা কতটা উপযোগী?
সম্প্রতি প্রসাধনীতে জনপ্রিয় হচ্ছে শামুকের মিউসিনের ব্যবহার। ত্বকের যত্নে কোরিয়ান প্রসাধনীর ব্যবহার বেশ কয়েক বছর ধরে চর্চায় রয়েছে। বেশির ভাগ কোরিয়ান প্রডাক্টের অন্যতম উপাদান স্নেল মিউসিন। ত্বক টানটান করে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। তবে স্নেল মিউসিনের ব্যবহার নতুন নয়। এক সময়ে মিশর ও চিনের রানিরা ত্বকচর্চায় শামুকের মিউসিনের ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়।
স্নেল মিউসিন আসলে কী?
শামুকের পৃষ্ঠদেশ থেকে এক ধরনের জলীয় পদার্থের নিঃসরণ হয়, যা শামুকের দেহের শুষ্কতা রোধ করে, ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। এই নিঃসৃত সান্দ্র পদার্থটিই হল স্নেল মিউসিন। এটি আর্দ্রতা বজায় রাখে, যার জন্য রূপচর্চায় এর চাহিদা বাড়ছে। অন্য দিকে, যে ভাবে শামুকের শরীরের ক্ষত সারাতে সহায়ক এই মিউসিন, ঠিক সে ভাবেই আমাদের ত্বকের ক্ষত, ব্রণ সারাতেও এটি কার্যকর।
রূপবিশেষজ্ঞ শেহনাজ় হুসেন বললেন, “স্নেল মিউসিনে অ্যালানটয়েন, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, পেপটাইডসের মতো প্রোটিন উপাদান থাকে। এই প্রোটিন উপাদান ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন বৃদ্ধি করে। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতে সহায়ক। অন্য দিকে, অ্যালানটয়েন ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। শুষ্ক ত্বক টানটান হয়। ত্বকে যদি কোনও দাগছোপ বা ক্ষতচিহ্ন থাকে, তা-ও সারিয়ে দিতে সক্ষম এই মিউসিন।”
এর অ্যান্টি-এজিং প্রপার্টি বলিরেখাও দূর করে। অনেককে কাজের সূত্রে দীর্ঘক্ষণ রোদে বা চড়া আলোয় থাকতে হয়। সে ক্ষেত্রে ত্বক পুড়ে যেতে পারে, ত্বকে পোড়া দাগ তৈরি হয়। তার সুরাহাও মেলে স্নেল মিউসিনের ব্যবহারে। এককথায় ত্বকের সব সমস্যার মুশকিল আসান হতে পারে এই পদার্থটি। তাই ইদানীং বিভিন্ন সেরাম, ময়শ্চারাইজ়ারের মতো প্রসাধনী দ্রব্যে ব্যবহার বাড়ছে স্নেল মিউসিনের।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
রোজকার রূপচর্চার রুটিনে স্নেল মিউসিন সেরাম রাখতে পারেন। গরমে এর ব্যবহার ত্বককে ভিতর থেকে সতেজ রাখবে। প্রত্যেক দিন ত্বক ক্লেনজ়িংয়ের পরে ভিজে ত্বকেই এই প্রডাক্ট লাগাতে পারেন। ত্বক খুব শুষ্ক হলে দিনে দু’বারও স্নেল মিউসিন সেরাম ব্যবহার করা যায় বলে জানালেন শেহনাজ়। স্নেল মিউসিন ময়শ্চারাইজ়ার ও বিভিন্ন জেলেও থাকে। নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী বেছে নিন কোন প্রডাক্ট লাগাবেন।
এর ব্যবহার শুরু করার এক-দু’সপ্তাহের মধ্যেই ত্বকের জেল্লা ফিরে পাবেন। স্নেল মিউসিন ত্বকের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা জোগান দেওয়ায় আগের চেয়ে ত্বক নরম ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
স্বাভাবিক ত্বকে এই উপাদান ব্যবহারে তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। তবে খুব স্পর্শকাতর ত্বকে লাল দাগ, চুলকানির মতো সমস্যা হলে এর ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে। কারও ত্বকে যদি সমস্যা থাকে তা হলে স্নেল মিউসিন রয়েছে, এমন প্রসাধনী ব্যবহারের আগে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।
বিতর্কও সঙ্গী
তবে রূপচর্চায় শামুকের মিউসিন ব্যবহার করা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। স্নেল মিউসিন সংগ্রহ শামুকের প্রাণের ক্ষতি করে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পরিবেশবিদরা। তবে প্রসাধনী সংস্থাগুলোর দাবি, তারা শামুকদের একটা যন্ত্রে সংগ্রহ করে রাখে। সেখানে তাদের নিঃসৃত মিউসিন সংগ্রহ করে আবার পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাই শামুকের প্রাণ সংশয় থাকে না। তবে কিছু সংস্থা শামুকের খোলস সরিয়ে এই মিউসিন সংগ্রহ করেছে, এমন উদাহরণও রয়েছে, যার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন পরিবেশবিদরা। তাই শামুকের ক্ষতি না করে কী করে মিউসিন সংগ্রহ করা যায়, সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে প্রসাধনী সংস্থাগুলো।
মডেল:
সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়;
ছবি: জয়দীপ মণ্ডল
ভারতীয় ত্বকের জন্য উপকারী
ভারতীয় মহিলারা ত্বকের শুষ্কতায় ভোগেন। ফলে তাড়াতাড়ি ত্বকে বলিরেখাও পড়ে। তাই ভারতীয় ত্বকে স্নেল মিউসিন সেরাম বা প্রসাধনী লাগালে উপকার পাবেন। স্নেল মিউসিন যেহেতু একটি প্রাণিজ উপাদান, তাই স্পর্শকাতর ত্বকে কী প্রতিক্রিয়া হবে, তা দেখে নেওয়া জরুরি। র্যাশ দেখা দিলে এটির ব্যবহার বন্ধ করে দিন।
রূপবিশেষজ্ঞ শেহনাজ় হুসেন