শিখ দাঙ্গার দায় নিলেন রাহুল, খোঁচা বিজেপির
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ৪ মে: চার দশক আগের শিখ দাঙ্গার দায় স্বীকার করে নিলেন রাহুল গান্ধী। কংগ্রেসের ইতিহাসের সমস্ত ভুলের দায়িত্ব নিতেও তিনি প্রস্তুত। আর সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি প্রশ্ন তুলল, তা হলে শিখনিধন যজ্ঞের যাঁরা মূল মাথা বলে অভিযুক্ত, সেই সজ্জন কুমার ও কমলনাথকে কেন কংগ্রেস দল থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে না। একই সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে রামকে পৌরাণিক চরিত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করায় রাহুলকে ‘রামদ্রোহী’ বলে আক্রমণ
করেছে পদ্মশিবির।
১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর দুই শিখ নিরাপত্তারক্ষীর হাতে নিহত হলে দেশ জুড়ে শুরু হয় শিখ নিধন পর্ব। খুন করা হয়েছিল কয়েক হাজার শিখ সম্প্রদায়ের মানুষকে। গত চার দশকেও সেই কালি মুছতে পারেনি কংগ্রেস। গত মাসে আমেরিকা সফরে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাস অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি আলোচনা সভায় ধর্মাচারণের স্বাধীনতা নিয়ে রাহুলের বক্তব্যের সূত্র ধরে এক শিখ যুবক তাঁকে বলেন, ‘‘আপনার কথা মতো বিজেপি জমানায় শিখদের মাথায় পাগড়ি, হাতে বালা কিংবা সঙ্গে কৃপাণ রাখার অনুমতি থাকছে না। কিন্তু আমরা কেবল সেটাই চাইছি না। আমরা ধর্মাচরণের স্বাধীনতা যেমন চাই তেমনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। যা কংগ্রেস আমলে বারংবার লঙ্ঘিত হয়েছে।’’ জবাবে রাহুল বলন, ‘‘আমি বলতে চেয়েছিলাম এমন এক ভারত গঠন হওয়া উচিত, যেখানে কেউ তাঁর ধর্মাচরণ করতে ভয় পাবে না। আর কংগ্রেস পার্টির ভুলের কথা যদি বলেন, তা হলে একাধিক ভুল হয়েছে যখন আমি রাজনীতিতে ছিলাম না। কিন্তু আমি হাসিমুখে কংগ্রেসের সেই সব ভুলের জন্য দায় স্বীকার করতে প্রস্তুত।’’
শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের প্রসঙ্গ তুলে লোকসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে একাধিক বার বলেছি যে আশির দশকে হওয়া শিখ দাঙ্গা ভুল হয়েছিল। আমি একাধিক বার স্বর্ণমন্দির গিয়েছি। আমার সঙ্গে শিখ সম্প্রদায়ের ভালবাসার
সম্পর্ক রয়েছে।’’
রাহুলের ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের শিখ নেতা আর পি এন সিংহ বলেন, ‘‘রাহুল কি শিখ দাঙ্গা নিয়ে আদৌও আন্তরিক? যদি আন্তরিক হতেন তা হলে শিখ দাঙ্গার মূল হোতা সজ্জন কুমার ও কমলনাথকে দল থেকে বহিষ্কার করতেন। কিন্তু রাহুলের হাতে দলের দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও তিনি তা করেননি।’’
ওই অনুষ্ঠানেই রাহুলের রামকে পৌরাণিক চরিত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করার তীব্র সমালোচনা করেছে বিজেপি। রাহুল বলেছিলেন, ‘‘...আমাদের সকল পৌরাণিক চরিত্র যার মধ্যে রামও রয়েছেন। তাঁরা সকলেই ক্ষমাশীল, সহানুভূতিশীল। বিজেপির হিন্দুত্ববাদী ধারণাকে আমি মানি না। কারণ আমার মতে হিন্দুত্ব অনেক বেশি বহুত্ববাদী, খোলা, সহ্যশীল ও সকলকে নিয়ে চলতে সক্ষম। কিন্তু বিজেপির হিন্দুত্ব সেই কথা বলে না।’’
কেন রাহুল রামকে পৌরাণিক চরিত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন তা নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র প্রদীপ ভাণ্ডারির আক্রমণ, ‘‘এটাই কংগ্রেসের মানসিকতা। আর রাহুল হলেন রামদ্রোহী। কংগ্রেস হল রামবিদ্বেষী। এদের লক্ষ্যই হল হিন্দু ধর্মকে কটাক্ষ করা, প্রভু রামের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং ভোটের সময়ে সনাতন ধর্মের প্রতি লোক দেখানো ভালবাসা দেখানো। আসলে কংগ্রেস হল চরম হিন্দুবিদ্বেষী দল।’’