ফিরছেন খালেদা, ভোটের জন্য
ঝাঁপাতে চাইছে বিএনপি-জামাত
অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি, ৪ মে: দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর আগামী মঙ্গলবার লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। লন্ডনে তাঁর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এবং নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের-এর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের তিন সপ্তাহ পরে খালেদার প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পুরনো দুই জোটসঙ্গী বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী এ বার যৌথভাবে ভোটের জন্য ঝাঁপাতে পারে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে এ ব্যাপারে তাঁদের নিজেদের নেতৃত্বের মধ্যে আসন রফা নিয়েও কথা হয়েছে।
আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোট শেষ করে নতুন সরকার তৈরি করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের উপর চাপ তৈরি করা হবে। সূত্রের খবর, সম্মানজনক রফাসূত্র হিসাবে ইউনূসকে প্রেসিডেন্ট পদটি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে নেতৃত্ব। কিন্তু তাতে রাজি নন খালেদার পুত্র তথা বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান। এ ব্যাপারে উভয় পক্ষ মতৈক্যে পৌঁছতে পারেনি।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের কে কতগুলিতে লড়বে, তা নিয়ে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা হয়েছে বিএনপি এবং জামায়েতের মধ্যে, এমনটাই জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর জামায়েতেকে ৫০টি আসন ছাড়ার কথা বলেছেন বিএনপি নেতৃত্ব। তাঁদের নিজেদের লড়াই করার ভাবনা রয়েছে ২০০টি আসনে। হেফাজতে সমর্থিত ইসলামী রাজনৈতিক দল খেলাফতে মজলিশকে ৪ থেকে ৫টি আসন ছাড়ার ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ২০২২-এ গঠিত বারো দলীয় জোটকে ৮টি আসন, গণ অধিকার পরিষদের ভি পি নূরকে একটি বা দু’টি আসন (তার মধ্যে একটি বরিশালের পটুয়াখালিতে) দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। তবে সব আলোচনাই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। ইউনূসের অন্যতম উপদেষ্টা তথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা নেতা আসিফ মাহমুদ যদি নতুন গড়ে ওঠা ছাত্রদের জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগ না দেন, তা হলে তাঁর বিএনপি-তে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে খবর।
তবে নির্বাচনে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে এই আসন সংখ্যার হিসাব যথেষ্টই আগাম বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ এবং রাজনৈতিক মহল। পরিস্থিতি আগামী কয়েক মাসে অনেকটাই বদলাতে পারে। তা ছাড়া ইউনূস সরকার এত তাড়াতাড়ি ক্ষমতা ছেড়ে দেবে কি না, বাংলাদেশে সেনার কী ভূমিকা থাকবে, তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে শফিকুর রহমান এবং বিএনপি শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকের পর তাদের যৌথ লক্ষ্যের দু'টি তাৎপর্যপূর্ণ দিক উঠে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমত, আওয়ামী লীগকে ভোটে লড়তে দেওয়া কথা ভাবা হচ্ছে, যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তর্জনী না তুলতে পারে। কিন্তু বিষয়টি ততটাও সাদা-কালো নয়। আওয়ামী লীগকে লড়তে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নাম কা ওয়াস্তে। অর্থাৎ শেখ হাসিনা এবং যাঁরা আত্মগোপন করে রয়েছেন, তাঁদের বাদ দিয়ে ‘নিষ্কলঙ্ক আওয়ামী লীগ’ ভোটে অংশ নিতে পারবে, এমন চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি-জামায়াতে। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর প্রভাব তৈরি করা হবে, যাতে নভেম্বরের মধ্যে হাসিনা-সহ সমস্ত বড় নেতাদের বিচার করে সাজা ঘোষণা করে দেওয়া হয়, যাতে তাঁরা দেশে ফিরতে না পারেন। আর আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতাদের মনোনয়নে আপত্তি রাখা হবে না। কিন্তু যদি দেখা যায়, তাঁরা ভাল প্রচার করছেন বা জনসমর্থন তাঁদের দিকে যাচ্ছে, তা হলে প্রচারে এবং ভোটদানে বাধা দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে।
পাশাপাশি ইউনূসের সরকার যে বিএনপি বা জামায়াতের দাবি পুরোটাই মেনে নেবে, এমন নয়। জামায়েতের দাবি, ইউনূসকে সম্মানজনক ভাবে বিদায় জানাতে তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদটি দেওয়া হক। বিএনপি-র সঙ্গে লন্ডনের বৈঠকে এই প্রস্তাবে প্রবল আপত্তি জানান তারেক। আরও উল্লেখ্য, গোটা আলোচনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দলকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যেই ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম বিএনপি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, প্রশাসন বিএনপি-র হয়ে কাজ করছে। বিএনপি তার পাল্টা জবাব দিয়েছে। শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব। নাহিদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি এখনও ভোটের জন্য প্রস্তুত নয়, তারা স্বাভাবিক ভাবেই আরও সময় চাইছে। কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব ভোটে যেতে চাওয়া বিএনপি ছাত্রদের জোট থেকে বাদ দিয়েই জামায়েতেকে সঙ্গে নিয়ে ভোটে যেতে পারে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।