আত্মঘাতী হয়েছে কি মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র, দেখছে পুলিশ
নিজস্ব সংবাদদাতা
রহড়ায় মাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে অনেকটা উঁচু থেকে পড়ে। ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে এমনটাই জানা গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। সেই রিপোর্ট এবং অন্যান্য তথ্য পর্যবেক্ষণ করে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, সাগর চৌধুরী নামে ওই ছাত্র আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারে। যদিও মৃত্যুর কারণের অন্যান্য দিকও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
কিন্তু যে ছাত্র মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছে, সে আচমকা আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে কেন, সেই প্রশ্নই ভাবাচ্ছিল তদন্তকারীদের। শনিবার সাগরের দেহ উদ্ধারের পরে তার পরিবার দাবি করেছিল, ওই কিশোর তিনটি বিষয়ে লেটার-সহ ৮০ শতাংশের উপরে মোট নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে। তবে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বিষয়টি আদপেই তা নয়। সাগরের মোট প্রাপ্ত নম্বর ২৭৩। বাড়িতে সে মিথ্যে কথা বলেছিল। আর সেটাই বিশ্বাস করে আনন্দ করেছিলেন সাগরের বাবা, পেশায় দিনমজুর শম্ভু এবং অন্যেরা।
তাঁরা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, শুক্রবার মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে সাগরকে রেজাল্ট দেখানোর কথা বলা হলে সে দাবি করেছিল, শনিবার স্কুল থেকে মার্কশিট নিয়ে আসবে। কিন্তু সে দিনই ভোরে বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরে একটি আমগাছের নীচে ওই কিশোরের হাড়গোড় ভাঙা দেহ উদ্ধার হয়।
রবিবার স্থানীয় পাতুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কিশোর বৈশ্য বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, ওই কিশোর আসলে কত নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। তখনই বোঝা যায়, আশানুরূপ ফল হয়নি সাগরের। কিন্তু বাড়িতে সে লজ্জায় মিথ্যা বলেছিল।’’ ছেলের কথা বিশ্বাস করে আত্মীয়, প্রতিবেশীদের তা জানিয়েও ছিলেন শম্ভুরা।
পরিজনেরা জানাচ্ছেন, শান্ত স্বভাবের সাগর সব সময়েই তার মাকে বলত, সে এমন ফল করবে, যাতে বাড়িতে সংবাদমাধ্যমকে আসতে হয়। শেষ পর্যন্ত আশানুরূপ ফল না হওয়ায় প্রথমে মিথ্যা বলা এবং সেটি কোনও ভাবেই সত্যি প্রমাণ করার সুযোগ নেই বুঝে হয়তো লজ্জা থেকে বাঁচতে ওই কিশোর আত্মহত্যার পথ বেছেছিল বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী পুলিশ জানিয়েছে, আমগাছ নয়। তার থেকেও উঁচু কোনও
জায়গা থেকে পড়ে ঘাড়, কোমর-সহ বিভিন্ন জায়গার হাড় ভেঙেছিল সাগরের। চোট লেগেছিল মস্তিষ্কেও। তার জেরেই মৃত্যু হয়েছে। আমগাছের থেকেও উঁচু জায়গা বলতে সংলগ্ন মোবাইল টাওয়ার রয়েছে।
পুলিশের অনুমান, গভীর রাতে বাড়ির সামনের ওই টাওয়ারের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে ঝাঁপ দিয়ে থাকতে পারে সাগর। এতটা উঁচু থেকে পড়ার জন্য মাটির যেখানে তার পা ও কোমর পড়েছিল, সেখানে গর্ত হয়। আমগাছের উপর দিয়ে পড়ায় একটি ডালও ভেঙে ছিল।
মৃত্যুর নেপথ্যে শুধুই কি আশানুরূপ ফল না হওয়া, না কি অন্য রহস্য রয়েছে, তা দেখছেন তদন্তকারীরা। মৃতের পরিবারের তরফে অভিযোগ দায়ের হয়নি। ব্যারাকপুরের সহকারী নগরপাল (ঘোলা) তনয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তদন্তে এখনও সন্দেহজনক কিছু মেলেনি। তা-ও সব দিক দেখা হচ্ছে।’’ সাগরের চার বন্ধুকে ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। রবিবার সাগরের বাড়িতে যান স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।