দুঃস্বপ্নের রাত শেষে
শান্তি চান মীনাক্ষী, বলদেবরা
সাবির ইবন ইউসুফ
শ্রীনগর, ১০ মে: অবশেষে সংঘর্ষ বিরতি। কিছুটা শান্তি! অন্তত বিকেলে সেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন তাঁরা। কিন্তু রাত গড়াতেই ফের সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে শ্রীনগরের নানা জায়গায় ধেয়ে এসেছে পাক ড্রোন। আবারও শোনা গিয়েছে বিস্ফোরণের শব্দ। ফলে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের চিন্তাটা থেকেই গিয়েছে দিনের শেষে।
গত কয়েকটা দিন দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে ভয়ে, আতঙ্কে, অনিশ্চয়তায়, ঘরের ভিতরে বন্দি হয়ে। হঠাৎ হঠাৎ বেজে উঠেছে সাইরেন। ভেসে এসেছে বিস্ফোরণের শব্দ। সাম্বার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক বলদেব রাজ বলছিলেন, “ব্যাপারটা শুধুমাত্র গুলিগোলার নয়, এই যুদ্ধ মনস্তাত্ত্বিক।”
আর্নিয়ার বাসিন্দা মীনাক্ষী শর্মা ফোনে বললেন, “বহু বছর আমরা এমন পরিস্থিতি দেখিনি। বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দ আর তার পরেই সাইরেনের আর্তনাদ। বাচ্চাদের নিয়ে ঘরের
সমস্ত দরজা-জানলা এঁটে দুশ্চিন্তায় কেঁপেছি শুধু। ভয় আবার জাঁকিয়ে বসছিল।” আরএসপুরার ১৯ বছর বয়সি তরুণ ইরফান মালিকের কথায়, “গত কাল বিকেলের দিকে আমরা কয়েক জন বাইরে খেলছিলাম। সাইরেন বেজে ওঠে হঠাৎ। আতঙ্কে চিৎকার-চেঁচামিচি শুরু হয়ে যায়। আমার ঠাকুমা ভয়ে সংজ্ঞা
হারিয়ে ফেলেছিলেন।”
জম্মু জেলা প্রশাসনের সূত্রের বক্তব্য, নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সব রকমের তৎপরতা সব সময় রয়েছে। তবে গত কালের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি কী হয়েছে, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট ভাবে কিছু বলছে না প্রশাসন। রাতে দফায় দফায় পাকিস্তান থেকে ধেয়ে আসা গোলায় বেশ কয়েক জন জখম বলে সূত্রের খবর। জানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক বাড়ি। কোনও কোনও বাড়ির ছাদের ঢালাই গোলায় উড়ে বেরিয়ে এসেছে ভিতরে থাকা লোহার খাঁচা। সীমান্তের গ্রামগুলির বাসিন্দাদের অস্থায়ী বাঙ্কারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তা ছাড়াও অধিকাংশ মানুষই সব সময় ব্যাগ গুছিয়ে প্রস্তুত থাকতেন, কখন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে হতে পারে সেই ভেবে।
জম্মু শহরের বাজার এলাকাগুলি আজ সকাল থেকে ছিল জনশূন্য, দোকানপাটের ঝাঁপ ফেলা। সীমান্ত এলাকার স্কুলগুলিও বন্ধ ছিল। সাম্বার স্কুল শিক্ষক বলদেব বলেন, “আমাদের সন্তানেরা শিরায় শিরায় এই আতঙ্ক নিয়ে বড় হয়ে উঠবে। এই কয়েকটা দিন রোজ শুতে যাওয়ার আগে সবাই ভেবেছি, পরের দিন সকালটা দেখে উঠতে পারব তো?”
জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ একটু শান্তি চান শুধু, একটু শান্তি তাঁদের প্রাপ্য— বলছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ। মীনাক্ষীর কথায়,
“এই রকমের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা এর আগেও গিয়েছি। কিন্তু তাতে কিছু সহজ হয়ে যায় না। আমরা খুব ক্লান্ত, শুধু একটু শান্তি চাই, আর কিছু না।”