নব্বইয়ের ইতিহাস গড়েও রুপো
নিজস্ব প্রতিবেদন
১৬ মে: যেখানেই যান না কেন, প্রশ্নটা তাড়া করত তাঁকে। অলিম্পিক্সে সোনা, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা, ডায়মন্ড লিগে দাপট দেখানোর পরেও ৯০ মিটার পেরোতে পারেননি। কবে পেরোবেন সেই মহার্ঘ লক্ষ্য? আর তিনি, বারবার একটা কথাই বলতেন, যখন সময় আসবে হবে। শেষ পর্যন্ত সেই দিনটা এল শুক্রবার দোহায়। যে দিন ৯০ মিটারের বাধা পেরোলেন তিনি— নীরজ চোপড়া। কিন্তু দুর্লভ ৯০ মিটারের বাধা পেরিয়েও দ্বিতীয় স্থান পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল নীরজকে। প্রথম স্থান পেলেন জার্মানির য়ুলিয়ান ওয়েবার ৯১.০৬ মিটার
অতিক্রম করে।
দোহা ডায়মন্ড লিগে তৃতীয় থ্রোতে নীরজের জ্যাভলিন অতিক্রম করে ৯০.২৩ মিটার দূরত্ব। প্রথম প্রয়াসে নীরজ ছোড়েন ৮৮.৪৪ মিটার। এই থ্রোতেই নীরজ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কেমন ছন্দে আছেন। তাঁর দ্বিতীয় থ্রো বাতিল হয়। তৃতীয় থ্রো-তে তিনি ভেঙে দেন নিজের গড়া জাতীয় রেকর্ড (৮৯.৯৪ মিটার)। যে নজির তিনি ২০২২ সালে স্টকহোম ডায়মন্ড লিগে গড়েছিলেন। চতুর্থ থ্রোতে নীরজ ছোড়েন ৮০.৫৬ মিটার। পঞ্চম থ্রো ফের ফাউল হয়। শেষ থ্রোতে তিনি ছোড়েন ৮৮.২০ মিটার।
ওয়েবার প্রথম থ্রেতে ৮৩.৮২ মিটার ছোড়ার পরে নীরজের উপরে ক্রমাগত চাপ তৈরি করে যাচ্ছিলেন। তাঁর পরবর্তী চারটি থ্রো ছিল যথাক্রমে ৮৫.৫৭ মিটার, ৮৯.০৬ মিটার, ৮৮.০৫ মিটার এবং ৮৯.৮৪ মিটার। চূড়ান্ত থ্রোতেই বাজিমাত করে ফেলেন তিনি ৯১.০৬ মিটার ছুড়ে। ফলে নীরজকে ইতিহাস গড়ার রাতেও দ্বিতীয় স্থানে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। প্যারিস অলিম্পিক্সেও রুপো পেয়েছিলেন নীরজ। তাঁকে টপকে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের আর্শাদ নাদিম।
সব মিলিয়ে ২৫তম জ্যাভলিন থ্রোয়ার এবং তৃতীয় এশীয় হিসেবে এই নজির গড়লেন অলিম্পিক্সে জোড়া পদকজয়ী নীরজ। ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম। পাকিস্তানের আর্শাদ নাদিম (৯২.৯৭ মিটার) এবং চিনা তাইপের চাও-সুন চেং (৯১.৩৬ মিটার) অপর দুই এশীয় যাঁরা ৯০ মিটারের বাধা পেরিয়েছেন আগে।
দোহাতে নামার আগেই নীরজ জানিয়েছিলেন, কী ভাবে তিনি বর্তমান কোচ ইয়ান জ়েলেজ়নির তত্ত্বাবধানে উন্নতি করেছেন। যাঁর দখলে আছে জ্যাভলিন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করার রেকর্ড (৯৮.৪৮ মিটার)। তবে তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়াটা সহজ ছিল না। কারণ তাঁর আগের কোচ ক্লাউস বার্তোনিয়েজ়-এর অধীনে এক রকম ভাবে প্রশিক্ষণ নিতেন নীরজ। তিনি ভারতীয় তারকাকে কয়েকটি পর্বে ভাগ করে প্রশিক্ষণ দিতেন। সেখানে তিন বারের অলিম্পিক্স সোনাজয়ী চেক কিংবদন্তি জ়েলেজ়নি তাঁকে থ্রোয়িং ও লিফ্টিংয়ে আরও উন্নতি করার দিকে জোর দেন। ধীরে ধীরে জ়েলেজ়নির কাছে অনুশীলন করার ফলে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী নীরজ।
শুধু নীরজই নন দোহা ডায়মন্ড লিগে নীরজের সঙ্গে লড়াইয়ে নামেন আর এক ভারতীয় কিশোর জেনাও। তবে তিনি প্রথম থ্রোয়ে ৬৮.০৭ মিটার ছোড়েন। দ্বিতীয় থ্রোয়ে তিনি ৭৮.৬০ মিটার পেরোন। ফলে তিনি পরের থ্রোয়ের জন্য অষ্টম স্থান নিশ্চিত করে ফেলেন। কিন্তু তাঁর শেষ দুটি থ্রো ছিল যথাক্রমে ৭৪.৮০ এবং ৭৭.২৮ মিটার। ফলে প্রথম তিন স্থানে থাকতে পারেননি। তিনি শেষ করেন
আট নম্বরে।
কয়েক দিন আগেই নীরজ নিজের নামাঙ্কিত প্রতিযোগিতায় আর্শাদ নাদিমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আবহে সেই প্রতিযোগিতা পিছিয়ে যায়। নীরজও জানিয়ে দেন এই পরিস্থিতিতে আর্শাদের ভারতে আসার কোনও প্রশ্ন নেই। পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েছিলেন যে, আর্শাদের সঙ্গে তাঁর কখনই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল না।
এই বিতর্ক কাটিয়ে নীরজ আবার অ্যাথলেটিক্স বিশ্বে দেশের নাম উজ্জ্বল করলেন। তবে আফসোস একটাই ৯০ মিটার পেরিয়েও সোনা জেতা হল না।
লক্ষ্যভেদ: প্রথম ভারতীয় হিসেবে ৯০ মিটারের বাধা পেরিয়ে ইতিহাস গড়ার পথে নীরজ। শুক্রবার দোহা ডায়মন্ড লিগে। রয়টার্স
হুঙ্কার: সোনা জিতলেন জার্মানির য়ুলিয়ান ওয়েবার। রয়টার্স