টোস্ট হোক বা সুপ, গলা ভাত বা পরোটা— শুধু এক চামচ মাখনেই বদলে যায় যে কোনও খাবারের স্বাদ। বাজারে বিভিন্ন রকমের মাখন পাওয়া যায়। নুন দেওয়া, নুন ছাড়া, গ্রাস-ফেড গরুর দুধ থেকে তৈরি, অর্গ্যানিক মাখন। এমনকি, উদ্ভিজ্জ তেল বা বাদাম থেকে তৈরি মাখনও পাওয়া যায়— যেমন পিনাট বাটার, আমন্ড বাটার। কিন্তু কোন ধরনের মাখন স্বাস্থ্যকর? খাবারের স্বাদ বাড়ায় বলেই কি খেতে পারা যায় যত ইচ্ছে? মাখনের পুষ্টিগুণই বা কেমন?
মাখনের পুষ্টিমূল্য
মাখন হল দুধ থেকে তৈরি এক ধরনের প্রাণিজ স্নেহ পদার্থ, যাতে থাকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ভিটামিন এ, ডি, ই, কে এবং কিছু মিনারেল। ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট অনন্যা ভৌমিক বলছেন, “১০০ গ্রাম মাখন থেকে মেলে মোটামুটি ৭১৭ কিলোক্যালরি। রয়েছে প্রায় ৮১ গ্রাম ফ্যাট। তার মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ ৫১ গ্রাম। মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ২১ গ্রাম, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ৩ গ্রাম, কোলেস্টেরল ২১৫ মিলিগ্রাম। মাখনে ভিটামিন এ রয়েছে দৈনিক প্রয়োজনের প্রায় ৭৬ শতাংশ। সোডিয়াম থাকে ১১ গ্রাম। তবে নুন-সহ মাখনে সোডিয়ামের মাত্রা এর চেয়ে অনেকটাই বেশি হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা ১০০ গুণ বেশিও হতে পারে।”
নুন দেওয়া নাকি নুন ছাড়া মাখন?
নুন দেওয়া মাখন সাধারণত রান্নায় ব্যবহৃত হয়। তাতে রান্নার স্বাদ-গন্ধ বাড়ে। এ ধরনের মাখন সহজলভ্য। “যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদ্রোগের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের এ ধরনে মাখনের পরিমাণ নিয়ে সতর্ক হতে হবে,” বললেন অনন্যা ভৌমিক। নুন ছাড়া মাখন মূলত ব্যবহার করা হয় কেক, কুকিজ় তৈরির জন্য। এই মাখন হৃদ্রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে তুলনায় কম ক্ষতিকর। ছোটদের জন্য তৈরি খাবারেও আনসল্টেড বাটার আদর্শ। যাঁরা অন্য কোনও কারণে লো-সোডিয়াম ডায়েটে রয়েছেন বা খাবারে নুনের মাত্রা কমাতে চান, তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন এই মাখন।
গ্রাস-ফেড বাটার
যে গরুকে ঘাস খেতে দেওয়া হয়, তার দুধ থেকে পাওয়া মাখনে বেশি পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন কে টু এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। এই মাখন হৃদ্যন্ত্র ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তবে এ ক্ষেত্রেও স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে।
অর্গ্যানিক মাখন
রাসায়নিক সার বা অ্যান্টিবায়োটিক-মুক্ত পরিবেশে গরু পালন করে সেই দুধ থেকে তৈরি মাখনকে অর্গ্যানিক মাখন বলা হয়। হরমোন ও কীটনাশক মুক্ত হওয়ায় এই মাখন খেলে লিভার ও কিডনির উপরে কম চাপ পড়ে। শারীরিক কারণে যাঁরা জৈব উপায়ে উৎপন্ন আনাজ, শস্য খাচ্ছেন, তাঁদের জন্য ভাল এটি। শিশুদের জন্যও এটি তুলনামূলক ভাবে ভাল।
ভিগান বাটার
চিনাবাদাম, আমন্ড, নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বা অন্য বীজ থেকেও তৈরি হয় মাখন। দুধ থেকে তৈরি মাখনের স্বাদ-গন্ধের চেয়ে এটি অনেক আলাদা। যাঁরা ভিগান ডায়েট মেনে চলেন, তাঁদের জন্য এটি ভাল। এই মাখনে প্রোটিন ও ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে দুগ্ধজাত মাখনের চেয়ে। কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম। তবে অনেক ক্ষেত্রে এগুলি বেশি প্রসেসড হয়, থাকে প্রিজ়ারভেটিভও। যাঁদের বাদামে অ্যালার্জি রয়েছে, তাঁদেরও একেবারেই চলবে না এ ধরনের মাখন।
মাখন নিয়ে সতর্কতা
অনন্যার কথায়, “হৃদ্রোগের সমস্যা ও কোলেস্টেরল বেশি থাকলে, বিপদ বাড়াতে পারে মাখনের স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা। দুগ্ধজাত পণ্যে অ্যালার্জি থাকলেও মাখনে সমস্যা হতে পারে। মাখন সরাসরি রক্তে শর্করা বাড়ায় না, তবে অতিরিক্ত ফ্যাট ইনসুলিন রেজ়িসট্যান্স বাড়াতে পারে। লিভার বা গলব্লাডারে সমস্যা থাকলে ফ্যাট হজমে সমস্যা হয়। ফলে এঁদেরও মাখন ও উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।” এ ছাড়া, যাঁরা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদেরও মাখনের পরিমাণ কমাতে হবে।
পুষ্টিবিদেরা জানাচ্ছেন, মাখন দিয়ে তৈরি খাবার বা খাবারে মাখন দেওয়ার কথা শুনে যেমন আঁতকে ওঠার দরকার নেই, তেমনই বেহিসেবে মাখন খেলেও চলবে না। দেহে ফ্যাটের প্রয়োজন হয় নানা কাজে, যেমন — হরমোন তৈরি, কোষের গঠন, ভিটামিন শোষণ ইত্যাদি। কিন্তু আর পাঁচটা খাবারের মতোই ঠিক পরিমাণে খাওয়ার দিকে নজর রাখতে হবে। তা হলেই স্বাদের পাশাপাশি বজায় থাকবে স্বাস্থ্য।
সুনীতা কোলে