নয়াদিল্লি, ১৬ মে: পহেলগাম সন্ত্রাস এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ সংক্রান্ত পরিস্থিতি দিয়ে বিভিন্ন দেশের কাছে পৌঁছতে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার সমান্তরালে এক অভিনব পন্থা নিল মোদী সরকার। দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের সাংসদদের নিয়ে তৈরি ৩২ জনের প্রতিনিধি দলকে ভাগে ভাগে বিদেশের বিভিন্ন সরকারের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, ২০ মে নাগাদ শুরু হবে এই বিদেশ সফর।
কংগ্রেস, তৃণমূল, শিবসেনা (উদ্ধব), এনসিপি (শরদ), এসপি, ডিএমকে-র মতো বিরোধী দলগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজেজু। গত রাতেই যোগাযোগ করা শুরু হয়েছে। প্রতিটি প্রতিনিধি দলে পাঁচ-ছ’জন করে সাংসদ থাকবেন। মণীশ তিওয়ারি, শশী তারুর, প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী, অনুরাগ ঠাকুর, সস্মিত পাত্র, শ্রীকান্ত শিন্ডের মতো বিভিন্ন দলের সাংসদরা ওই সব দলে থাকছেন। তাঁরা আমেরিকা, ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি-সহ নানা দেশে যাবেন। এ ভাবে ভারত বোঝাতে চাইছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে দেশ এককাট্টা, তেমনই ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তানের প্ররোচনামূলক আচরণও তুলে ধরতে চাওয়া হচ্ছে।
গত রাতে তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রিজিজু। আজ বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকেও তাঁকে ফোন করা হয়। কিন্তু তৃণমূল নেতা জানান, এত কম সময়ের নোটিসে এত দূরে সফর সম্ভব নয়। তাঁকে আমেরিকায় যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। ওই প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে তারুরকে বেছে নিয়েছিল কেন্দ্র। সফরের আনুমানিক মেয়াদ ছিল ১০ দিন। সুদীপবাবু জানিয়েছেন, তাঁর শরীর এই মুহূর্তে ভাল নয়, তাড়াহুড়ো করে এতটা সফর করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি তৃণমূল সূত্রে বলা হয়েছে, মোদী সরকারের এ প্রয়াস নিজেদের অস্বস্তিকে আড়াল করতে রাজনৈতিক চাল ছাড়া কিছুই নয়। যে ভাবে তড়িঘড়ি ‘আমেরিকার চাপে’ সংঘর্ষবিরতিতে যেতে হয়েছে সরকারকে, তাতে তাদের হিন্দুত্বের চড়া স্বর ধাক্কা খেয়েছে। তৃণমূলের আরও বক্তব্য, শশী তারুরের মোদী-বন্দনায় কংগ্রেসও অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে। তৃণমূলের দাবি, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র মধ্যে বোঝাপড়া করে এই সফরের কথা ভাবা হয়েছে যাতে নজর ঘোরানো যায়। তবে এ কথা স্পষ্ট, কংগ্রেসের দাবি মেনে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদের কোনও বিশেষ অধিবেশন ডাকবে না সরকার।
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, সব দলের সাংসদদের বিদেশ পাঠানোর বিষয়টি মোদীর মোক্ষম চাল। এ ভাবে দেশে নিজেদের উদার ছবিকে সামনে রেখে কংগ্রেসের অস্ত্র ভোঁতা করে দেওয়া যাচ্ছে। কারণ, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, জওহরলাল নেহরুর সময়ে অটলবিহারী বাজপেয়ীকে বা বাজপেয়ীর সময়ে সনিয়া গান্ধীকে রাষ্ট্রপুঞ্জে বলতে পাঠানো হয়েছিল। ওই বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা, অপারেশন সিঁদুরের পর হিন্দু হাওয়ার মধ্যে সরকারের পাশে থাকা ছাড়া কংগ্রেসের গত্যন্তর ছিল না। বড়জোর তারা ট্রাম্প প্রসঙ্গে মোদী সরকারের দুর্বলতা নিয়ে বলার পরিকল্পনা করছিল। তবে এই নিয়ে রাহুল গান্ধীর আজ সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা থাকলেও তা বাতিল হয়ে যায়।
এ দিকে, শশী তারুরকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব, রাহুল গান্ধী ভৎর্সনাই করেছেন আগ বাড়িয়ে মোদীর প্রশস্তির জন্য। সেই তারুরকে একটি প্রতিনিধি দলের নেতা করতে চাইছে বিজেপি। কংগ্রেস বলছে প্রতিনিধি দলে কোন দলের কে যাবেন তা সরকার ঠিক করবে না, করবে দল। আর এরই বিপরীত ভাষ্য তৃণমূলের এক নেতার। তাঁর কথায়, সরকারই যোগাযোগ করছে। কারণ, এটা কোনও দলের নয় সাংসদদের কর্মসূচি। এখানে স্পিকার বা সংসদীয় মন্ত্রী সাংসদদের প্রতিনিধি তালিকা স্থির করছেন। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২৫ মে শুধু এনডিএ-র মুখ্যমন্ত্রীদের ডেকেছেন অপারেশন সিঁদুরের রাজনৈতিক মুনাফা তুলতে। কিন্তু এখন তিনি চান সব দলের সাংসদরা বিদেশে গিয়ে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করুক। উদ্যোগটি অবশ্যই জরুরি, কিন্তু এই দ্বিচারিতা কেন?’