এভারেস্টেই চিরঘুমে সুব্রত
নিজস্ব সংবাদদাতা
খারাপ আবহাওয়ার জেরে এভারেস্টের শীর্ষে পৌঁছেছিলেন সকলের শেষে, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো নাগাদ। তার পরে আর সমতলে ফেরা হল না রানাঘাটের স্কুলশিক্ষক সুব্রত ঘোষের (৪৫)। এই মরসুমের দ্বিতীয় পর্বতারোহী হিসাবে এভারেস্টের বুকেই চিরঘুমে তলিয়ে গেলেন তিনি।
নদিয়ার রানাঘাট শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬/৪ খিরকিবাগান লেনের বাসিন্দা সুব্রত এবং রানাঘাটের স্কুল শিক্ষিকা রুম্পা ঘোষ বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌঁছেছিলেন শিখরে। কিন্তু নামার সময়ে ঘটে বিপত্তি। আয়োজক সংস্থা ‘স্নোয়ি হরাইজ়ন’-এর কর্ণধার বোধরাজ ভান্ডারি কাঠমান্ডু থেকে বলেন, ‘‘নামার সময়ে উচ্চতাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন সুব্রত। হিলারি’স স্টেপের (৮৭৯০ মিটার) কাছে এসে উনি আর নীচে নামতে চাননি। শেরপা কান্নাকাটি করলেও উনি কথা শোনেননি। অনেকটা দেরি হয়ে যাওয়ায় তখন সেখানে রুম্পা-সুব্রত ও তাঁদের শেরপা দু’জন ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। রুম্পা নামতে পারলেও সুব্রত রয়ে যান হিলারি’স স্টেপেই। রাতের দিকে তিনি মারা যান। সকালে ওঁর শেরপা চম্পল তামাং ক্যাম্প ৪-এ নেমে আসেন।’’
এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী বসন্ত সিংহ রায়ের সঙ্গে একাধিক অভিযানে গিয়েছেন সুব্রত ও রুম্পা। সেই স্মৃতি ঘেঁটে বসন্ত জানাচ্ছেন, এর আগে ২০২৩ সালে অরুণাচল প্রদেশের গোরিচেন শৃঙ্গাভিযানে গিয়েও সম্ভবত অধিক উচ্চতাজনিত শারীরিক সমস্যা (পালমোনারি এডিমা) আক্রান্ত হন সুব্রত। তাঁর কথায়, ‘‘তখন বেসক্যাম্পেই সুব্রত অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখান থেকে ওঁকে নামিয়ে সেনা হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। পরে পিজিতেও চিকিৎসা চলেছিল। সম্ভবত এ বার অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ায় ওঁর শারীরিক শক্তিও নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই আর নামতে পারেননি।’’ তবে এ দিন রুম্পাকে নিয়ে দুই শেরপা নেমে এসেছেন ক্যাম্প ২-তে।
এ বছর প্রায় ৪৫৯ জন পর্বতারোহীকে এভারেস্টের পারমিট দিয়েছে নেপাল। গ্রীষ্মকালীন মরসুম শুরু হওয়ার পরে গত বুধবার সুব্রতদেরই দলের সদস্য, ফিলিপিন্সের ফিলিপ সানতিয়েগো ক্যাম্প ৪-এ পৌঁছে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরে বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় সুব্রতের। তবে, কী ভাবে তাঁর দেহ নামানো হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। বোধরাজের কথায়, ‘‘আগামী কয়েক দিন ওই পথেই আরোহীরা শীর্ষবিন্দুর (সামিট) দিকে যাবেন। তাই তার মধ্যে উদ্ধারকাজ চালানো কঠিন। উদ্ধারের একটা বড় খরচও রয়েছে। সেটা কে, কী ভাবে দেবেন, তা ঠিক হয়ে গেলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেহ নীচে নামানো যেতে পারে।’’
এ দিকে শুক্রবার সকাল থেকেই সুব্রতের বাড়িতে ছিল পরিজনদের আনগোনা। দুঃসংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা সুনীলকুমার, মা কবিতা। দেখা করতে আসেন রানাঘাটের পুরপ্রধান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। সুব্রতের এক আত্মীয় প্রতাপ সাহা বলেন, ‘‘আয়োজক সংস্থার ভূমিকায় আমরা অসন্তুষ্ট। দুঃসংবাদ পেয়ে বার বার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু ওদের তরফে ঠিক করে কিছুই জানানো হচ্ছে না। এটুকুই জেনেছি যে, সুব্রতের সঙ্গে থাকা শেরপা ক্যাম্প ৪-এ একা ফিরেছেন।’’
বৃহস্পতিবারই এভারেস্টের শিখরে পৌঁছন বর্ধমান শহরের বাসিন্দা সৌমেন সরকারও। তবে তাঁর সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা যায়নি। এ দিন তাঁর বাড়িতেও কেউ ছিলেন না। পূর্ত দফতরে (সড়ক) জাতীয় সড়ক সাব ডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার হিসাবে কর্মরত সৌমেন। প্রায় ২০ বছর ধরে পর্বতারোহণ করছেন। দেও তিব্বা, নুনের মতো একাধিক শৃঙ্গে আরোহণ করেছেন। গত ১ এপ্রিল রওনা দিয়েছিলেন বাড়ি থেকে। যাওয়ার আগে বলেছিলেন, ‘‘দেশের পতাকাকে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছে দিয়ে যুব সমাজকে লক্ষ্য স্থির রাখার পরামর্শ দিতে চাই।’’