বিরাট কোহলির টেস্ট অবসর নিয়ে মুখ খুললেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, তিনি অবাকই হয়েছেন।
টেস্ট থেকে বিরাট অবসর নেওয়ার পরে সমাজমাধ্যমে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা যায়নি সৌরভকে। কিন্তু শনিবার কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সৌরভ জানিয়েছেন, বিরাট যে টেস্ট থেকে অবসর নেবেন, তা
ভাবতে পারেননি।
সৌরভ বলেন, ‘‘বিরাটের টেস্ট জীবন অসাধারণ। নিজের ইচ্ছেতে খেলা ছেড়েছে। এক দিন না এক দিন সকলকেই ছাড়তে হয়।’’ যোগ করেন, ‘‘তবে আমি অবাকই হয়েছি।’’
সৌরভের এই মন্তব্যে খুব একটা খুশি হয়তো হবেন না ভারতীয় দলের কোচ গৌতম গম্ভীর। টেস্ট ক্রিকেটই যাঁর সব চেয়ে প্রিয় ফর্ম্যাট ছিল, তিনি কেন সেখান থেকে সরে দাঁড়ালেন? সৌরভের মনেও এই প্রশ্ন হয়তো উঁকি দিয়েছে। কারণ, বিরাটের অবসর নিয়ে মন্তব্য করার সময় তিনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। হয়তো আরও কিছু বলতে গিয়েছিলেন, কিন্তু বলেননি।
বিরাটের অবসর নিয়ে একই রকম বিস্মিত হয়েছেন ইশান্ত শর্মাও। বয়সভিত্তিক স্তর থেকে বিরাটের সঙ্গে খেলে আসছেন ইশান্ত। তিনি মনে করেন, অন্তত ৪০ বছর পর্যন্ত টেস্ট খেলতে পারতেন তাঁর বন্ধু। ৩৬ বছরে দলের অন্যতম ফিট ক্রিকেটার হওয়ার পরেও টেস্ট থেকে তাঁর সরে দাঁড়ানো মানতে পারছেন না।
ইশান্ত বলেছেন, ‘‘বিরাট অভিজ্ঞ। ও জানে কী করছে। অবসরের পরে ওর সঙ্গে আমার কথা হয়নি। কিন্তু বিরাট কোনও কিছু নিয়ে অতিরিক্ত ভাবে না। তাই আমার সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব এত ভাল। আমরা কেউই বেশি চাপ নিই না।’’ যোগ করেন, ‘‘অবসর নেওয়ার আগে ও নিশ্চয়ই এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের পরামর্শ নিয়েছে। তার পরেই এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
এখানেই না থেমে ইশান্ত আরও বলেন, ‘‘ওর অবসরের সিদ্ধান্ত জানার পরে আমি মানতে পারিনি। ও আমাকে আবারও বিস্মিত করল। এখনও ২-৩ বছর খেলতে পারত। অন্তত ৪০ বছর পর্যন্ত টেস্ট খেলা উচিত ছিল ওর।’’
বিরাটের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক ইশান্তের? তা ব্যাখ্যা করার জন্য অভিজ্ঞ পেসার বলেছেন, ‘‘ওকে বিরাট বলে আমি কখনও ডাকতে পারব না। আমার কাছে ও ‘চিকু’ (বিরাটের ডাক নাম)। বয়সভিত্তির স্তর থেকে একসঙ্গে খেলছি। অনূর্ধ্ব-১৭ পর্যায়ে খেলার সময়েও আমরা একই ঘরে থেকেছি। আমাকেও ও ইশান্ত হিসেবে দেখে না। ছোটবেলার বন্ধু হিসেবেই দেখে।’’
একটি ঘটনার কথা বলেন ইশান্ত। ‘‘ভারতীয় দলে যখন আমার নাম এলো, তখন বিরাট আমার পাশেই শুয়ে ছিল। আমি ঘুমোচ্ছিলাম। ও আমাকে ধাক্কা মেরে তুলে বলেছিল, ‘তুই সত্যি ভারতের হয়ে খেলবি?’ আমি বলেছিলাম, একটু ঘুমোতে দে। যা হবে দেখা যাবে।’’ যোগ করেন, ‘‘এখনও দেখা হলে ওর সঙ্গে অন্য রকম গল্প হয়। ক্রিকেট নিয়ে বেশি আলোচনা হয় না। আমরা একেবারে ছোটবেলার দুই বন্ধুর মতো গল্প করি। অন্য বন্ধুদের খবর নিই। এ ভাবেই চলছে আমাদের বন্ধুত্ব।’’
বিরাট ও রোহিত টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পরে এখন সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, ভারতের টেস্ট অধিনায়ক কে হবেন? শুভমন গিল, কে এল রাহুল, ঋষভ পন্থ, যশপ্রীত বুমরা রয়েছেন দৌড়ে। সৌরভ যদিও এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি। প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘‘টিম ম্যানেজমেন্টের যাকে মনে হবে, তাকেই অধিনায়ক করা হবে। অনেক কিছু নির্ভর করে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই অধিনায়ক বাছা উচিত। যে দীর্ঘদিন টেস্ট খেলতে পারবে।’’
ইশান্ত সরাসরি এ ব্যাপারে যশপ্রীত বুমরার নাম বলেছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘বুমরা যদি ফিট থাকে তা হলে ওকেই অধিনায়ক করা উচিত। ওর নাম এই তালিকার
উপরে থাকা উচিত। কারণ, ওর মতো অভিজ্ঞতা বর্তমান দলের অনেকের নেই। কিন্তু ও যদি টানা পাঁচ টেস্ট খেলতে না পারে, তা হলে শুভমনকে করে দেওয়া হোক।’’
ভারতকে দু’টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন বুমরা। কিন্তু ফিটনেসই তাঁর সব চেয়ে বড় সমস্যা। পেসার হিসেবে টানা পাঁচ টেস্ট খেলা তাঁর পক্ষে কার্যত অসম্ভব। তাই অধিনায়কের দৌড়ে বুমরা পিছিয়ে পড়তে পারেন। শুভমন, রাহুল, ঋষভের মধ্যে কাকে অধিনায়ক করা হয় সেটাই দেখার।