‘দিদির সময় শেষ’, হুঙ্কার শুরু শাহের
নিজস্ব সংবাদদাতা
বাংলায় এসে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারের সুর বেঁধে দিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পিঠোপিঠি রাজ্য সফরে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরাসরি ২০২৬ সালে রাজ্যে সরকার বদলের ডাক দিলেন। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে একেবারে মণ্ডল স্তর পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বকে সামনে বসিয়ে রবিবার শাহ হুঙ্কার দিলেন, “দিদি, আপনার সময় শেষ হয়ে গিয়েছে! আগামী ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সরকার তৈরি হতে চলেছে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শাহের চ্যালেঞ্জ, “গণতন্ত্রে হিংসা কাম্য নয়। হিম্মত থাকলে হিংসা, রিগিং না করে ভোটে লড়ে দেখান। আপনার নিজের জামানতটুকুও জব্দ হয়ে যাবে!” রাজ্যে ২০২১ সালের নির্বাচনের আগেও বিজেপির শীর্ষ নেতাদের এই হুঙ্কার শোনা গিয়েছিল বারবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২০০ আসন জয়ের কথা বলে তাঁদের থেমে যেতে হয়েছিল ৭৭টি আসনেই। যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে কথা মাথায় রেখে দলের কর্মীদের উদ্দেশে শাহের সতর্ক-বার্তা, ‘‘এই সভা শেষের পর থেকে গণনা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত দিনরাত এক করে আপনারা মাটি কামড়ে লড়াই করে যান। দলের জন্য পরিশ্রম করুন।’’
দুর্নীতি, তোষণ, কেন্দ্রের টাকার অপচয়-সহ নানা অস্ত্রে মোদী রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারকে বিঁধে যাওয়ার পরে তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এ বার শাহকে জবাব দেওয়ার জন্য তৃণমূল নেত্রী এগিয়ে দিয়েছেন তাঁর দলের তিন মহিলা মুখ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও সাগরিকা ঘোষকে। বিএসএফ-কে দিয়ে সীমান্তে অনুপ্রবেশ রুখতে না-পারা, পহেলগামে জঙ্গি হানার কোনও আগাম খবর না-থাকার প্রসঙ্গ তুলে তাঁরা শাহের পদত্যাগ দাবি করেছেন। জামানত জব্দ নিয়ে শাহের মন্তব্যের পাল্টা চন্দ্রিমার দাবি, ‘‘২৫০ আসন পেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চতুর্থ বার ক্ষমতায় আসবেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, সন্ত্রাস-রিগিং ছাড়া ভোট করে দেখান। আমরা প্রশ্ন করতে চাই, ভোটটা করবে তো আপনার নির্বাচন কমিশন? আপনি বলছেন, আমরা সন্ত্রাস করব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সন্ত্রাস করাবেন। তা হলে ব্যর্থতা কার?’’
দু’দিনের বঙ্গ সফরে শনিবার রাতে কলকাতায় এসে পৌঁছন শাহ। নিউ টাউনে এ দিন সকালে তিনি সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির নতুন ভবন উদ্বোধন করেন। তার পরে নেতাজি ইন্ডোরে ‘বিজয় সঙ্কল্প কার্যকর্তা সম্মেলনে’ উপস্থিত হন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বক্তৃতা করার সময়ে শুভেন্দুকে শাহ তাঁর ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেন। সেই সঙ্গে শুভেন্দু সম্পর্কে তিনি বলেন, “যাঁকে দাঁড়াতে দেখলেই দিদি ভয়ে কেঁপে ওঠেন!” ওই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই তুমুল হাততালি পড়ে। মঞ্চে ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল, পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে-সহ কেন্দ্র ও রাজ্যের শীর্ষ নেতারা। সভায় দুর্নীতি, অনুপ্রবেশ, ভোট পরবর্তী-সন্ত্রাস সহ একাধিক বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চাঁছাছোলা আক্রমণ করেছেন শাহ। সভা শেষ করে তিনি সিমলা স্ট্রিটে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
বক্তৃতার শুরুতে কর্মীদের অভিবাদনের মাঝে শাহ বলেছেন, “এখন শুনুন। জিন্দাবাদ অবশ্যই বলবেন, তবে ২৬-এর নির্বাচন জিতে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী শপথ নেওয়ার পরে!” এর পরেই তাঁর তোপ, “গোটা দেশে এখন নির্বাচনী হিংসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেই একমাত্র নির্বাচনের সময় এবং দিদির জেতার পরে শয়ে শয়ে বিজেপি কর্মীদের খুন করা হয়েছে। দিদি কত দিন বাঁচাবেন অপরাধীদের? আমার কথা শুনুন, আপনার সময় শেষ হয়ে এসেছে!” তাঁর হুঁশিয়ারি, “২০২৬-এ বিজেপি’র সরকার হবে। হাজার হাজার মণ্ডল সভাপতিকে আমি কথা দিচ্ছি, এখানে তৃণমূল সরকার চলে যাওয়ার পরেই, আমাদের কর্মীদের যারা খুন করেছে, প্রয়োজন হলে তাঁদের মাটির ভিতর থেকে খুঁজে বার করে শাস্তি দেব!”
শাহের কথায় উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক হিংসার