ঝুঁকি সত্ত্বেও বিনিয়োগ বাড়ছে শেয়ার এবং ফান্ডে
অমিতাভ গুহ সরকার
বিশ্ব জুড়ে অনিশ্চয়তা। বিভিন্ন অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে বহু দিন ধরে। কিছু দেশের সমস্যা শ্লথ হয়ে আসা অর্থনীতি। কিন্তু সে সবকে পিছনে ফেলে গোটা বিশ্বকে অনিশ্চয়তায় ভরে দিয়েছে মূলত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশির ভাগ দেশে পাল্টা চড়া শুল্ক বসানোর নীতি। যা অনেককে বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে রেখেছে। ঝুঁকি বেড়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। যে কারণে শেয়ার বাজার এখন খুবই অস্থির।
লগ্নির দুনিয়ায় ঝুঁকি বড় ব্যাপার। কিছু মানুষ আছেন, ঝুঁকি যাঁদের ধাতে সয়না। তাঁরা সব সময় সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আয় কম হলেও, তাঁরা সুরক্ষার সঙ্গে আপস করতে রাজি নন। এই শ্রেণির লগ্নিকারীরা মূলত সরকারি প্রকল্প পছন্দ করেন। এড়িয়ে চলেন বেসরকারিগুলিকে। কম হলেও, নিয়মিত স্থির আয় তাঁদের একমাত্র চাহিদা। বাজারে তেমন একগুচ্ছ প্রকল্প
আছে মূলত ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়ে। তবে আপাতদৃষ্টিতে ব্যাঙ্ক আমানতকে সুরক্ষিত বলে মনে হলেও, বাস্তবে ব্যাঙ্কে জমা মাত্র ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ডিআইসিজিসি দ্বারা গ্যারান্টি প্রদত্ত। তবু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পিছনে যেহেতু সরকার থাকে, তাই সেখানে লগ্নি নিরাপদ বলে মনে করা হয়। পিপিএফ ও সুকন্যা সমৃদ্ধির মতো স্বল্প সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট ছাড়া বাকি সব সুরক্ষিত প্রকল্পের সুদই করযোগ্য। তাই যাঁদের আয়কর দিতে হয়, তাঁদের কাছে স্থির আয়যুক্ত প্রকল্পগুলি আকর্ষণীয় বলে না-ও মনে হতে পারে। কারণ কর দেওয়ার পরে প্রকৃত আয় কমে আসে।
অপর শ্রেণির লগ্নিকারী আছেন, যাঁরা বেশি আয়ের জন্যে ঝুঁকি নিতে পিছপা নন। তাঁদের আছে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের জগত। ঝুঁকির কারণে অতীতে বহু মানুষ শেয়ারের দিকে ঝুঁকতেন না। কিছু বছর হল ছবিটা
পাল্টেছে। এখন ঝুঁকি মাপা সহজ। অভিজ্ঞ বিশ্লেষকদের পরামর্শ লগ্নির সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। বাজারে শেয়ার ছাড়া সংস্থা এবং ফান্ডগুলিকে সেবির কঠোর শর্ত মানতে হয় বলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমেছে। শুধু তাই নয়, বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে এমন সব তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করতে হয় সংস্থাগুলিকে। তথ্য গোপন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তিন মাস অন্তর প্রকাশ করতে হয় আর্থিক ফল। অর্থাৎ নথিবদ্ধ প্রতিটি সংস্থার কাজ এখন অনেক বেশি স্বচ্ছ। সব জেনেবুঝে লগ্নির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে ঝুঁকি অনেকটা বাগে রাখা যায়।
বড় মেয়াদে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করেও বহু মানুষ মোটা রিটার্ন পাচ্ছেন। যাঁরা একলপ্তে মোটা টাকা লগ্নি করতে চান না, তাঁরা প্রতি মাসে এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করে দীর্ঘ মেয়াদে বড় সম্পদ গড়ে তুলতে পারেন। করের দিক থেকেও আছে অনেক সুবিধা। শেয়ার ও শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে লগ্নি এক বছর ধরে রাখার পরে বিক্রি করে লাভ হলে, তার প্রথম ১ লক্ষ টাকা থাকে পুরো করমুক্ত। বছরে লাভ এর বেশি হলে কর বসে ১২.৫% হারে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে লোকসানের ঝুঁকি নিয়েও বিরাট অংশের কাছে শেয়ার ও ফান্ডে লগ্নি বেশ আকর্ষণীয়। বিশেষত যাঁরা চড়া হারে কর দেন তাঁদের কাছে।
কোভিডের পরে গত কয়েক বছর ভারতীয় শেয়ার বাজার লগ্নিকারীদের ভাল আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। গত অর্থবর্ষে জিডিপি ৬.৫০ শতাংশে নামলেও, বিশ্বের নিরিখে তা আছে প্রথম সারিতে। আশা, আগামী দিনেও বাজার লগ্নিকারীদের হতাশ করবে না। ভাল রিটার্ন দিতে পারে শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডগুলিও। করের সুবিধা ও
আকর্ষণীয় আয় দেখে অত্যন্ত সাবধানী মানুষদের অনেকেও শেয়ার ও ফান্ডের দুনিয়াকে এড়াতে পারছেন না। ফলে লগ্নিকারী তথা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট বাড়ছে এই দুই ক্ষেত্রে। ব্যাঙ্ক থেকে লগ্নি ছুটছে শেয়ার ও ফান্ডের দুনিয়ায়। বিশেষত ব্যাঙ্ক আমানতে সুদ যেহেতু কমছে। আগামী দিনে আরও কমতে পারে। সুদ কমলে তার অনুকূল প্রভাব পড়ে শিল্প ও শেয়ার বাজারে। লগ্নি বাড়ে। আমানতে সুদ আরও নামলে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আরও মানুষ পাড়ি জমাতে পারেন ফান্ড-শেয়ারের বৃত্তে। এতে সমস্যায় পড়তে পারে ব্যাঙ্কগুলি। টান পড়তে পারে ঋণের তহবিলে।
(মতামত ব্যক্তিগত)