৪ জুন: আমদাবাদে আইপিএল ফাইনাল জেতার রাতে বিরাট কোহলি বলেছিলেন, বেঙ্গালুরুতে দারুণ ভাবে জয়োৎসব হবে।
সেই জয়োৎসবে যে কী বিপর্যয় নেমে আসবে, তা কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। শোকের আবহেও চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বুধবার সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংবর্ধিত করা হল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ক্রিকেটারদের। বুধবার দুপুরে বেঙ্গালুরু পৌঁছে যান বিরাট
কোহলিরা। সেখান থেকে বেঙ্গালুরুর বিধান সৌধয় পৌঁছন ক্রিকেটাররা। যেখানে ক্রিকেটারদের সংবর্ধিত করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। এর পরে বিরাটরা পৌঁছে যান
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে।
ভিড়ে ঠাসা স্টেডিয়ামে মাইক হাতে দাঁড়ানো বিরাট মিনিট দু’য়েক কিছু বলতেই পারেননি। গ্যালারির গর্জনে চাপা পড়ে যায় বিরাটের কথা। তখন ঘোষক বলে ওঠেন, ‘‘আপনারা একটু শান্ত হন। দয়া করে বিরাট কোহলি কী বলছে, শুনুন।’’
তাও গর্জন চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত মাইক হাতে নিয়ে বিরাট বলে ওঠেন, ‘‘আমাদের হাতে সময় খুব কম। তাই আমি কী বলছি, তা একটু শুনুন।’’
দর্শকরা শান্ত হলে বিরাট বলতে থাকেন, ‘‘আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি। এই ট্রফি যতটা আমাদের, ততটাই আপনাদের। ততটাই বেঙ্গালুরুর মানুষদের। আপনাদের মতো সমর্থক আমি কখনও দেখিনি।’’ বিরাট আরও বলেন, ‘‘আঠারো বছর ধরে আপনারা আমাদের পাশে থেকেছেন। সব রকম পরিস্থিতিতে আমাদের সমর্থন করেছেন। আপনাদের ভালবাসায় আমি আপ্লুত।’’
এ দিন ট্রফি হাতে মাঠে ঢোকেন আরসিবি অধিনায়ক রজত পাটীদার। বিরাট বলেন, ‘‘আমি মরসুমের শুরুতেই বলেছিলাম, রজতের পাশে থাকুন। ওকে সমর্থন করুন। আপনারা করেছেন। আর রজত অধিনায়ক হিসেবে প্রথম মরসুমেই ট্রফি জিতেছে।’’ মঙ্গলবার পঞ্জাব কিংসকে হারিয়ে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় আরসিবি। জয়ের পরে ইনস্টাগ্রামে নিজের অনুভূতির কথা তুলে ধরেন বিরাট। তিনি লেখেন, “অবশেষে এই দল স্বপ্নপূরণ করেছে। এই মরসুম আমি কোনও দিন ভুলব না। গত আড়াই মাস ধরে আমরা এই যাত্রাপথ উপভোগ করেছি।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘ব্যর্থ হলেও আরসিবির সমর্থকরা মুখ ফিরিয়ে নেননি। এই ট্রফির সমান ভাগীদার তাঁরাও। যাঁরা হতাশ হয়েছেন এবং বারবার ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁরাও এই ট্রফির অংশীদার।
যে দলটা মাঠে প্রত্যেক মুহূর্তে লড়াই করেছে, এই ট্রফি তাদের জন্যে। দীর্ঘ ১৮ বছর ট্রফির জন্যে অপেক্ষা করতে হয়েছে। শেষে বলতেই হবে, অপেক্ষার দাম সবসময় অমূল্য হয়।”
বিরাটের প্রাক্তন দুই সতীর্থ এবি ডিভিলিয়ার্স এবং ক্রিস গেলও সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, “ই সালা কাপ নামদু’। অর্থাৎ ‘এই বছরে আমরা
কাপ জিতেছি।’
আইপিএল জেতার পরেও বিরাট কোহলির মুখে শোনা গিয়েছে টেস্ট ক্রিকেটের উৎকৃষ্টতার কথা। হঠাৎই বিরাট গত মাসে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেন। সারা বিশ্ব তখনই স্তম্ভিত
হয়ে গিয়েছিল। আসন্ন ইংল্যান্ড সফরের জন্য অধিনায়ক নির্বাচিত হন শুভমন গিল। অবসরের গ্রহে চলে গেলেও বিরাট যে
তাঁর পছন্দের ক্রিকেট ঘরানাকে ভুলতে পারেননি, তা আইপিএল জয়ের রাতেই
বোঝা গিয়েছে। ধারাভাষ্যকার ম্যাথু হেডেন জিজ্ঞাসা করেন, টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে তরুণ ক্রিকেটারদের বিরাট কী বলতে চান? বিরাটের পরামর্শ, আরও বেশি করে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে হবে তরুণদের। তিনি মনে করেন, টেস্ট ক্রিকেট এখনও সর্বোত্তম।
বিরাটের কথায়, “আমার ক্রিকেটজীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর মধ্যে অবশ্যই এই ট্রফি জয় থাকবে। তা সত্ত্বেও বলতে চাই, টেস্টে প্রাপ্তির তুলনায় এই ট্রফি জয় পাঁচ ধাপ নীচে থাকবে। টেস্ট ক্রিকেটকে আমি এতটাই উপরে রাখতে চাই। এতটাই টেস্ট ক্রিকেটকে ভালবাসি।”
এর পরেই বিরাটের পরামর্শ, “তরুণ ক্রিকেটারদের বলব, সম্মানের সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে। টেস্টে ভাল খেললে বিশ্বের যে কোনও জায়গায় মাথা উঁচু করে হাঁটতে পারবে। লোকে তোমার দিকে তাকিয়ে দেখবে। এগিয়ে এসে করমর্দন করে বলবে,
দারুণ খেলেছ।”