অবসরের পরেই সরকারি পদ
গ্রহণে উদ্বিগ্ন প্রধান বিচারপতি
নয়াদিল্লি, ৪ জুন: চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরেই বিচারপতিদের সরকারি পদে বসা বা ভোটে লড়াটা ‘রীতিমতো নৈতিক উদ্বেগ’-এর বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি ভূষণ আর গাভাই। এতে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ণ হয় বলেই মনে করেন তিনি। মঙ্গলবার ব্রিটেনের শীর্ষ কোর্টে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা বিষয়ক একটি আলোচনায় এই কথা বলেছেন তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, “অবসরের সঙ্গে সঙ্গেই যদি কোনও বিচারপতি সরকারি কাজে নিয়োগ গ্রহণ করেন বা নির্বাচনে লড়তে বেঞ্চ থেকে ইস্তফা দেন, সেটা উল্লেখযোগ্য নৈতিক উদ্বেগ তৈরি করে, এই বিষয়ে বৃহত্তর পরিসরে ভাবনা উস্কে দেয়।”
প্রধান বিচারপতির মতে, এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে বিচারপতি থাকাকালীন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দেওয়া রায়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে। ওঠে স্বার্থের সংঘাত বা সরকারি আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টার অভিযোগও। নষ্ট হতে পারে বিচারবিভাগের উপরে মানুষের আস্থা। তিনি ও তাঁর অনেক সহকর্মী ‘অবসর-পরবর্তী কোনও ভূমিকা বা সরকারের থেকে কোনও পদ গ্রহণ না করার যে প্রকাশ্য প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছেন, তা এই সূত্রেই উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি গাভাই। এবং জানান, বিচারবিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্বাধীনতা বজায় রাখতেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত।
অবসরের পরেই বিচারপতিদের সরকারি পদে বসা উচিত কি না, সেই বিতর্ক দীর্ঘদিনের। সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্টের কিছু বিচারপতি অবসরের পরে সরকারের পদ গ্রহণ করায় তা আরও জোরালো হয়েছে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে রামজন্মভূমি মামলায় শীর্ষ কোর্টের যে বেঞ্চ রায় দিয়েছিল অযোধ্যার জমি হিন্দু পক্ষকে হস্তান্তরের, তাতে এস এ নাজির একমাত্র মুসলিম বিচারপতি ছিলেন। ২০২৩-র জানুয়ারিতে অবসর গ্রহণের ৪০ দিনের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল করা হয় তাঁকে। আর সেই বেঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়া তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ২০১৯ সালেরই নভেম্বরে অবসর নেন এবং বিজেপির থেকে রাজ্যসভায় মনোনীত হন।
অবশ্য রাজ্যসভায় যাওয়া দ্বিতীয় প্রধান বিচারপতি ছিলেন গগৈ। এর আগে ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত কংগ্রেসের হয়ে রাজ্যসভায় মনোনীত ছিলেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ফতিমা বিবি তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল ছিলেন (১৯৯৭-২০০১)। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি পি সদাশিব ২০১৪-২০১৯ কেরলের রাজ্যপাল ছিলেন। প্রাক্তন বিচারপতি কে সুব্বা রাও চতুর্থ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়েন, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত প্রাক্তন বিচারপতি মহম্মদ হিদায়াতুল্লাহ উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন। অবসরের এক বছরের মধ্যেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে নিয়োগ করা হয় বিচারপতি অরুণ মিশ্রকেও। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে গত লোকসভা ভোটে লড়ে বিজেপির সাংসদ হন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, যা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল বিস্তর।
কারও নাম না করলেও দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এবং বর্তমানে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে বিপুল অঙ্কের নগদ উদ্ধারের আবহে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, শীর্ষ আদালত অসদাচরণ মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক ও যথাযথ ব্যবস্থা ধারাবাহিক ভাবে নিয়ে এসেছে। তাঁর মতে, এই ডিজিটাল যুগে, যেখানে তথ্য অবাধে প্রবাহিত হয় এবং উপলব্ধি দ্রুত আকার ধারণ করে, বিচার বিভাগকে অবশ্যই তার স্বাধীনতার সঙ্গে আপস না করে এবং বোধগম্য জবাবদিহি করতে হবে এবং সেটা মানুষের নাগালের রাখতে হবে। সংবাদ সংস্থা