অনড় কেন্দ্র, বিশেষ
অধিবেশনের দাবি
কার্যত খারিজ
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ৪ জুন: রাহুল গান্ধী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদব-সহ ১৬টি বিরোধী দলের নেতানেত্রীরা মঙ্গলবারই প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও)-এ চিঠি পাঠিয়ে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানিয়েছিলেন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই দাবি ‘কার্যত’ খারিজ করে দিয়ে মোদী সরকার ২১ জুলাই থেকে সংসদের বাদল অধিবেশনের ঘোষণা করে দিল। সাধারণত সংসদের অধিবেশনের দু’সপ্তাহ আগে তার দিনক্ষণ ঘোষণা হয়।
এ বার বাদল অধিবেশনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হল ৪৭ দিন আগে। মোদী সরকার বুঝিয়ে দিল, এর আগে আর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকতে তারা নারাজ।
বিরোধীদের দাবি ছিল, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তানের সেনাকে যখন ভারতের সেনা বাগে পেয়ে গিয়েছিল, সেই সময় কেন সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা হল? কেনই বা ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকায় বসে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করলেন? মোদী সরকারকে বিশেষ অধিবেশন ডেকে তার জবাব দিতে হবে। এই দাবি নিয়ে গতকাল ১৬টি দলের নেতানেত্রীর চিঠি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জমা পড়েছিল। আজ এই দলগুলির শ’দুয়েক সাংসদের চিঠি পিএমও-য় জমা পড়েছে। কিন্তু মোদী সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে, বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রশ্ন নেই। এমনকি, জরুরি অবস্থার ৫০ বছর নিয়ে মোদী সরকার ২৫-২৬ জুন বিশেষ অধিবেশন ডাকতে পারে বলে কংগ্রেসের দাবিকেও ‘বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা।
তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন একে মোদী সরকারের ‘পার্লামেন্টোফোবিয়া’ বা ‘সংসদাতঙ্ক’ বলে তকমা দিয়েছেন। তাঁর কটাক্ষ, এই ‘সংসদাতঙ্ক’ হল সংসদের মুখোমুখি হওয়ার ভয়। যে কারণে মোদী সরকার বিশেষ অধিবেশন থেকে পালাচ্ছে। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বিশেষ অধিবেশন থেকে পালাতে পারেন। কিন্তু তাঁকে বাদল অধিবেশনে কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। পহেলগামের সন্ত্রাসবাদী হামলা রুখতে ব্যর্থতা, জড়িত সন্ত্রাসবাদীদের ধরতে না পারা, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রভাব, তার রাজনীতিকরণ, সিঙ্গাপুরে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়া নিয়ে যা বলেছেন, তার ব্যাখ্যা, ভারত-পাকিস্তানের একই বন্ধনীতে চলে আসা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বারবার দাবি যে তিনিই মধ্যস্থতা করে
সংঘর্ষবিরতি করিয়েছেন এবং কূটনৈতিক ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে।’’ ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সংসদে আলোচনা হলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জবাব দেবেন।
সরকারি সূত্রের যুক্তি, ২১ জুলাই থেকে ১২ অগস্ট পর্যন্ত বাদল অধিবেশন চলবে। বিরোধী শিবির যদি ‘অপারেশন সিঁদুর’, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা বা ভারতের কূটনীতি নিয়ে আলোচনা চায়, তা হলে সংসদীয় নিয়ম মেনে নোটিস দিতে পারে। লোকসভার স্পিকার ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তৃণমূল নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ ২১ জুলাই থেকে বাদল অধিবেশন ডাকা নিয়েও। কারণ, ২১ জুলাই তৃণমূল ‘শহিদ দিবস’ পালন করে। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটাই শেষ শহিদ দিবস। রাজনৈতিক ভাবে তার গুরুত্বও বেশি। ফলে তৃণমূল সাংসদদের পক্ষে বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনে হাজির থাকা মুশকিল হবে।
সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বাদল অধিবেশনেই বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে ‘ইমপিচমেন্ট’ বা অপসারণের জন্য প্রস্তাব আনা হবে। বিচারপতির দিল্লির বাসভবন থেকে বস্তা ভর্তি টাকা উদ্ধার হয়েছিল। রিজিজু জানান, ‘‘এ নিয়ে কোনও রাজনীতি নেই। বিচারবিভাগে দুর্নীতির বিষয়। ঐকমত্য গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছি।’’ মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে গিয়ে বৈঠক করেন শাহ। এর পরে শাহ তিনি দলের সভাপতি তথা রাজ্যসভার নেতা জে পি নড্ডার সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পরে দু’জনে মিলে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত, বিচারপতিকে ইমপিচমেন্ট-এর প্রস্তাব প্রথমে রাজ্যসভায় আনা হবে।