শিলচর ও গুয়াহাটি, ৪ জুন: অসমের বাকি অংশে বন্যা পরিস্থিতি একই থাকলেও এক দিনে ৪০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাতের ফলে শোচনীয় অবস্থা বরাক উপত্যকার। শ্রীভূমি থেকে শিলচর পর্যন্ত উপত্যকার বিশাল অংশ ডুবে গিয়েছে। প্রতিবেশী মিজ়োরাম এবং মণিপুরে ভারী বর্ষণের ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এ দিনও অসমে বন্যায় ২ জনের মৃত্যু হয়। ফলে এ বছর এখনও পর্যন্ত বন্যায় অসমে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৪। ধসে মারা গিয়েছেন ৫ জন। অরুণাচলে ১২ জন, মিজ়োরামে ৫ জন মারা গিয়েছেন। অসমের ২১টি জেলা বন্যা কবলিত। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৬,৭৯,৪২৩। ১৯০টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ৪১,৩১৭ জন।
সড়ক ও রেলপথে বাইরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বরাক। তিন দিন ধরে পাঁচগ্রাম ও শালচাপড়ায় জাতীয় সড়ক জলমগ্ন। এরই মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কিছু যানবাহন চলছিল। কিন্তু গত কাল রাতে ওই সব জায়গায় জলস্তরের উচ্চতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি তীব্রতর হয় জলস্রোত। ফলে আজ সকাল থেকেই জাতীয় সড়কে শুধুই নৌকা চলছে। জলের তলায় চলে যায় রেললাইনও। হাইলাকান্দি জেলার পাঁচগ্রাম ও কাছাড় জেলার শালচাপড়া রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী অংশে বহু জায়গায় লাইনের নীচ থেকে পাথর সরে গিয়েছে।
আগেই শিলচর রেলস্টেশনের পিটে জল জমে যাওয়ায় বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়েছিল। কিছু ট্রেনের সূচি বদল করা হয়েছিল। কিন্তু আজ লাইন পুরোপুরি জলে ডুবে যাওয়ায় বদরপুর-শিলচর অংশে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। শিলচরগামী ট্রেনগুলিকে বদরপুর পর্যন্ত
চালানো হচ্ছে।
ভৈরবী-শিলচর ট্রেনকে কাটাখাল পর্যন্ত চালানো হচ্ছে।
সেখান থেকেই পরদিন ভৈরবীর উদ্দেশে রওনা হবে ট্রেন। এর মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়া শিলচর থেকে বিমান পরিষেবা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আকাশপথে যোগাযোগও সঙ্কুচিত হয়েছে। বিমানের সংখ্যা কমায় ইন্ডিগো এবং অ্যালায়েন্স এয়ারের টিকিটের দাম একলাফে বেড়ে গিয়েছে।
বরাক-সহ সমস্ত নদীর জল এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়েই বইছে। হাইলাকান্দি জেলার যে সব এলাকায় কাটাখালের জল ঢুকে পড়ে, সেই জল এখন দ্রুত বরাক নদীর দিকে ছুটে আসায় নতুন করে বৃষ্টি না হলেও জাতীয় সড়কে জলস্ফীতি ঘটে চলেছে। মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল বলেছেন, রেকর্ড বৃষ্টিপাতের জেরে বরাক উপত্যকায় বন্যা পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর।
অরুণাচল প্রদেশে সপ্তাহব্যাপী টানা বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং রাজ্যের ২৩টি জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নাগাল্যান্ডের কোহিমা, কিফিরে, পেরেন, জুনহেবোটো, মককচং শামাতোর, তুয়েনসাং, মেলুরি, নোকলাকে বহু স্থানে ধস নেমে রাস্তা বন্ধ।
ওখায় ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুতের বহু স্তম্ভ ও গাছ উপড়েছে। মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫ হাজারের বেশি বাড়ি ও বহু চাষের জমি। মারা গিয়েছেন ১ জন। বিভিন্ন পার্বত্য জেলা থেকে শতাধিক ধসের খবর এসেছে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গৌরব গগৈ আজ বন্যাক্লিষ্ট বরাক উপত্যকা সফরে আসেন। গত কাল মু্খ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা শিলচর শহরের ছ’টি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছিলেন। গৌরব আজ কাটিগড়া, বড়খলার মতো গ্রামীণ এলাকায় ছুটে যান। বন্যার্তদের খোঁজখবর নেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, ‘‘এই বিপর্যয়ের সময়ে কংগ্রেস নেতাদের নিন্দামন্দ করে সময় নষ্ট না করে হিমন্ত বরং দুর্গত মানুষদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে মনোযোগ দিন।’’ বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রশ্ন সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে গেলেও রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার নতুন সরকারি নীতি প্রসঙ্গে গৌরব বলেন, ‘‘সীমান্ত এলাকায় অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে রাজ্যকে অশান্ত করতে চাইছেন হিমন্ত। তাতে অপরাধ বাড়বে, বাড়বে
সামাজিক অস্থিরতা।’’
তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আকাশপথে উত্তর-পূর্বের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শুধু অসমের বরাক উপত্যকা বা লখিমপুর জেলা নয়, গোটা উত্তর-পূর্ব এখন বন্যাদুর্গত।
সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ, ত্রিপুরা, মিজ়োরাম, মেঘালয়, মণিপুর, সব জায়গায় মানুষ বানভাসি। সুস্মিতা সাংবাদিকদের কাছে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের
নির্বাচনী জনসভায় অমিত শাহের ভাষণের একটি ক্লিপিং তুলে ধরেন, যেখানে শাহ বলেছিলেন, “বিজেপিকে ক্ষমতায় ফেরান, কথা দিলাম, অসমকে বন্যামুক্ত করব।” আগামী
বছর ফের ভোট। সুস্মিতার প্রশ্ন, কোথায় গেল ‘শাহি’ প্রতিশ্রুতি? তাই তিনি শাহকেও উত্তর-পূর্ব সফরের অনুরোধ করেন।