প্র: ব্যাডমিন্টন খেলা ছেড়ে এলেন?
উ: হ্যাঁ, খেলতে খেলতে সময়ের ঠিক থাকে না। সাক্ষাৎকার না থাকলে হয়তো খেলেই যেতাম (হাসি)।
প্র: ওজন কমানোর জন্যই কি খেলা শুরু করলেন?
উ: এক্সারসাইজ়, ব্যাডমিন্টন সবই করি। দ্বিতীয় বার যখন মা হলাম, তখন অনেকে ভেবেছিলেন আমি আগের চেহারায় ফিরে আসতে পারব না। কেউ সরাসরি না বললেও, তাদের আকারে ইঙ্গিতে বুঝতে পারতাম। আমার কাছে এটা চ্যালেঞ্জ ছিল। শুধু তাদের ভুল প্রমাণ করার জন্য ওজন কমিয়েছি বলব না, নিজের তাগিদেই এটা করেছি।
প্র: আপনি বরাবরই জেদি...
উ: তা তো আছিই। জেদি না হলে চলবে (হাসি)!
প্র: ইন্ডাস্ট্রি বলছে ইনি ‘শুভশ্রী টু পয়েন্ট ও’। আপনি কী বলবেন?
উ: আগে জানতে চাইব কথাটা কেন বলা হচ্ছে?
প্র: গত কয়েক বছরে আপনার মধ্যে একটা বদল এসেছে। ‘গৃহপ্রবেশ’, ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’-সহ অনেক বড় প্রজেক্টের প্রধান মুখ আপনি।
উ: ফিটনেস, লাইফস্টাইল সব কিছুর পিছনেই খাটছি। শুধু এগুলোই যে আমার মধ্যে বদল এনেছে, তা নয়। আসল হল, মন। আমার মনটা কেমন আছে? আমি কি আনন্দে আছি? আমি জীবনের পজ়িটিভ দিকগুলোকে গুরুত্ব দিই। এই যে নতুন শুভশ্রীর কথা বললেন, তার কৃতিত্ব আমার পরিবারের। আমি ইতিবাচক মানুষদের সাহচর্যে থাকি। আর হাতে এখন যে কাজগুলো রয়েছে, সেগুলো পাওয়ার জন্য কৃতজ্ঞ। ইন্ডাস্ট্রিতে ১৯ বছর কাজ করার পর এই রকম ছবিই তো করতে চাইব, যেটা নিয়ে সকলে আলোচনা করবে। ছবিগুলো আমাকে এতটাই চ্যালেঞ্জ দেবে যে, করতে গিয়ে রাতের ঘুম উড়ে যাবে।
প্র: ‘পরিণীতা’, ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ থেকেই কি কেরিয়ারে একটা বদল এল?
উ: এই সুযোগগুলোর জন্য আমি অপেক্ষা করে ছিলাম। ‘পরিণীতা’ দেখাল ‘আরে শুভশ্রী এটাও পারে’। ওই পারার জন্যও তো আমার একটা ময়দান লাগত, সেটা আমাকে রাজ (চক্রবর্তী) দিয়েছে। তার পরেও আমার চ্যালেঞ্জ শেষ হয়নি। প্রত্যেকটা ছবিতেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। নইলে পিছিয়ে যাব।
প্র: যে প্রযোজনা সংস্থা আপনাকে একটা সময়ে কাজ দেয়নি, তারা এখন ডাকছে। ইতিমধ্যেই সেখানে কাজ করেছেন, আগামীতেও অনেক ক’টা কাজ আছে। এখানেও কি একটা ‘দেখিয়ে দেওয়া’র মনোভাব কাজ করেছে?
উ: (হেসে) এখানে সকলে পেশাদার। ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই ব্যবসা বোঝে। আমি ভাল কাজ করলে, তারা আমাকে ডাকবেই। আমি কখনও ভাবিনি, কে ডাকল আর কে ডাকল না। আমি নিজের ভাগ্য নিয়ে এসেছি। নিজেকে আগের চেয়ে উন্নত করব, এটাই এখন লক্ষ্য। চাই পরিচালকেরা কঠিন কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলুন আমাকে।
প্র: ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর ‘গৃহপ্রবেশ’-এ সে রকমই চ্যালেঞ্জ পেলেন?
উ: তিতলি চরিত্রটার সঙ্গে আমি ভীষণ ভাবে জড়িয়ে। আমাদের সব ক’টা আবেগ এই ছবিটার নানা পরতে জড়িয়ে রয়েছে। আমরা অনেক সময়ে নিজেদের ইমোশনকে গুরুত্ব দিই না। কষ্ট পাওয়ারও সময় নেই। মাঝেমাঝে চুপচাপ বসে কোনও কাজ না করে নিজের ভিতরটা বোঝা, মনকে বোঝা জরুরি।
প্র: আপনার চরিত্রে একটা আত্মত্যাগের বিষয় রয়েছে। আপনার কাছে আত্মত্যাগের মানে কী?
উ: স্যাক্রিফাইস কথাটা অনেক সময়ে নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমার মনে হয় না, কেউ কাউকে জোর করে কিছু করাতে পারে। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পর মেয়েরা সেখানকার সব কিছু আপন করে নেয়। তার পর সমস্যা হলেও, সেই আবেগ, মায়া ছেড়ে বেরোনো কঠিন হয়ে পড়ে। আর্থিক স্বনির্ভরতা না থাকায় অনেকে মুখ বুজে থেকে যান। কেউ আবার আবেগের বশেই হয়তো স্যাক্রিফাইস করেন।
প্র: অভিনেত্রী শুভশ্রীকে কি তাঁর মাতৃসত্তার জন্য স্যাক্রিফাইস করতে হয়েছে, অথবা উল্টোটা?
উ: আমি ওই ভাবে জীবনকে দেখি না। মায়েদের আত্মত্যাগ করতেই হয়। শর্তহীন ভালবাসা কী, মা হওয়ার পরেই তা বোঝা যায়। ঘুম নেই, খাওয়া নেই... ন্যূনতম প্রয়োজনগুলো ত্যাগ করে দিতে হয় কিন্তু তার মধ্যে একটা অদ্ভুত আনন্দ আছে। ওই আনন্দটাই বড় পাওনা। আমি কাজ আর বাড়ি ব্যালান্স করে চলি। ‘গৃহপ্রবেশ’-এর ট্রেলার রিলিজ়ের পর বাড়ি ফিরে ফোনটা একদম দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম। জানি প্রচুর ফোন, মেসেজ আসবে, সেগুলোর উত্তরও দিতে হবে। কিন্তু কাজের পর বাড়িতে আমাকে ওই ছোট দু’জনকে সময় দিতেই হবে। যতই ক্লান্ত থাকি, সেটা ওরা বুঝবে না। আমাকে ওখানে মায়ের ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্র: শুভশ্রী এখন রেগে যান না?
উ: আমি আগে চট করে রেগে যেতাম। এখন অনেকটা বদলে গিয়েছি। নিজেকে অ্যানালাইজ় করি, ভুলগুলো খতিয়ে দেখি। একটা পুরনো কথা বলি। আমার সঙ্গে কুড়ি বছর ধরে রয়েছে মামন। ‘চ্যালেঞ্জ’-এর শুটিংয়ের সময়ে একটা জিনিস আমি নিজে রেখে ভুলে গিয়েছি। মামনের উপরে ভয়ঙ্কর চোটপাট করছি। ওর দিকে তাকাইওনি। কিছুক্ষণ পরে জিনিসটা পেয়ে ওর দিকে তাকিয়েই মুখটা দেখে বুঝতে পারলাম, কী বড় ভুল করেছি আমি। ওই দিনের পর থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে শুধরেছি। এটা তো এক দিনে হয় না। একটা মানুষকে আঘাত করার অধিকার নেই আমার। আর এখন তো আমি জ়েন মোডে চলে গিয়েছি প্রায়। বাচ্চাদের উপরে যদি কখনও চিৎকার করেও ফেলি, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করি। মাঝেমধ্যেই এমন সব দুর্ঘটনা ঘটাতে যায় যে আতঙ্কে চিৎকার করে ফেলি। তার পর নিজেকে বোঝাই আমি ৩৪, আর ও ৪! কার উপরে রাগ দেখাচ্ছি? চিৎকার করাটা সহজ, শান্ত থাকাটা কঠিন। আমি কঠিন রাস্তাটাই বেছে নিয়েছি। তাতে উল্টো দিকের মানুষটাকে বোঝানো সহজ হয়।
প্র: রাজের সঙ্গে ঝগড়া হয়?
উ: না।
প্র: সব কিছুতেই মতের মিল হয়?
উ: একেবারেই নয়। মতের অমিল বেশি হয় বাচ্চাদের বিষয়েই। তবে আমরা দু’জনেই ঠান্ডা মাথার, তাই ঝগড়া হয় না। আমরা আলোচনা করি। যুক্তি-পাল্টা যুক্তি চলতে থাকে। একে অপরের সমালোচনা করি। চিৎকার চেঁচামেচি করি না। মানুষ হিসেবে নিজেকে কী ভাবে আরও উন্নত করা যায়, সেই প্র্যাকটিসটা আমি আর রাজ দু’জনেই করি।
দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ