কথার জালে
ডিজিটাল গ্রেফতারি থেকে বাঁচবেন কী ভাবে?
মাসকয়েক আগে ডিজিটাল অ্যারেস্টের শিকার হয়ে কোটি টাকা হারান মধ্য কলকাতার এক চিকিৎসক দম্পতি। সম্প্রতি এর শিকার হয়েছেন এক পুলিশ আধিকারিকও। সতর্কতা জারি করা হলেও ক্রমশ বেড়েই চলেছে এমন ঘটনা। কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার (ক্রাইম) রূপেশ কুমার বলছেন, “আদতে ডিজিটাল গ্রেফতারি বলে কিছু হয় না। এটি আসলে সাইবার প্রতারণার একটা ফাঁদ। অনলাইন জালিয়াতি চক্রের নতুন হাতিয়ার এই শব্দবন্ধ। দেশের কোনও
আইনে এই ধরনের গ্রেফতারির কথা বলা নেই।”
কী এই ডিজিটাল অ্যারেস্ট?
এ ক্ষেত্রে জালিয়াতেরা পুলিশ, সিবিআই, আয়কর বা শুল্ক
দফতরের আধিকারিক পরিচয়
দিয়ে ফোন করেন। ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত, তার পার্সেলে মাদকদ্রব্য পাওয়া গিয়েছে, তার ফোন নম্বরটি সন্দেহের তালিকায় রয়েছে... এমন নানা কথা বলে ভয় দেখানো হয়। রেকর্ডেড কল করেও অনেক সময়ে ট্যাপিং করা হয়। জয়েন্ট কমিশনার জানালেন, বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখতে আজকাল সরাসরি ডিজিটাল গ্রেফতারির কথা না বলে ফিজ়িক্যাল গ্রেফতারির অপশনও দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল ফরেন্সিক অ্যান্ড ফিনানশিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেটর পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলছেন, “হোটেল, রিসর্ট, অনলাইন অ্যাপ বিভিন্ন জায়গায় ইদানীং ভেরিফিকেশনের জন্য আধার কার্ড চাওয়া হয়। এ সব জায়গা থেকেই সাধারণ মানুষের তথ্য চুরি করে বা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কিনে নেয় জালিয়াতরা। তার পর দেশ জুড়ে সেই সব পরিচয়ের আড়ালে চলে এই কুকীর্তি।”
তারা যতই ভয় দেখাক...
এই জালিয়াতির প্রধান অস্ত্র ভয়। সাধারণ মানুষ যত ভয় পান, জালিয়াতদের তত সুবিধে হয়। হুমকি, ধমক, ব্ল্যাকমেল করে ব্যক্তির বাড়ির বাইরে বেরোনো, লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলা বন্ধ করে জালিয়াতেরা। সর্বক্ষণ ক্যামেরার নজরদারিতে থাকতে বাধ্য করা হয়। রূপেশ কুমার বলছেন, “ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে জানিয়ে প্রাথমিক ভাবে এ সময়ে তার সমস্ত টাকা জালিয়াতের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। জানানো হয়, তদন্ত শেষে সুদ-সহ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।” রূপেশ আশ্বস্ত করছেন, পুলিশ বা সরকারি অন্য কোনও বিভাগ থেকে এ রকম ফোন করে গ্রেফতারির কথা বলা হয় না।
নিজেকে বাঁচাতে
ডিজিটাল গ্রেফতারির শিকার হয়েছেন বুঝতে পারলে:
- প্রমাণের জন্য ভিডিয়ো কল বা মেসেজের স্ক্রিনশট তুলে রাখুন।
- ফোন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেটে দিন। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করুন।
- যাবতীয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও সাময়িক ভাবে বন্ধ করিয়ে দিতে পারেন।
- স্থানীয় থানা বা ফোনে উল্লিখিত সরকারি সংস্থার হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।
- সরকারি হেল্পলাইন নম্বর ১৯৩০-এ ফোন করুন। অনলাইনে ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টালে (এনসিসিআরপি) অভিযোগ দায়ের করা যায়।
কোভিডের সতর্কবার্তার নামেও এখন ডিজিটাল স্ক্যামের ফাঁদ পাতা শুরু হয়েছে। অচেনা নম্বর থেকে আসা ফোনে বিশ্বাস করবেন না। ফোনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, আইডি শেয়ার করবেন না। ভুয়ো ফোন এলে সেই নম্বর ব্লক ও রিপোর্ট করুন। খেয়াল রাখবেন, পরিচয়পত্র হিসেবে সব জায়গায় আধার কার্ড দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। বরং অন্যান্য পরিচয়পত্র ব্যবহার করুন। পরিচয়পত্র দেওয়ার সময় প্রতিলিপিতে কেন দিচ্ছেন, লিখে তারিখ আর সময় বসিয়ে সই করে দেওয়া নিরাপদ।