মায়ের জন্য ছাড়পত্র?
দীপিকা পাড়ুকোনের আট ঘণ্টা কাজের দাবির পক্ষে-বিপক্ষে দ্বিধাবিভক্ত বলিউড। কী বলছেন টলিউডের মায়েরা?
শিল্পীদের কাজের সময় কি বেঁধে দেওয়া উচিত? সদ্য মা হয়েছেন, এমন অভিনেত্রীকে ঠিক কতখানি ছাড় দেওয়া হবে? দীপিকা পাড়ুকোনের আট ঘণ্টা কাজ করার দাবি ন্যায্য কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলিউডে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কার্যত দ্বিধাবিভক্ত এ নিয়ে। ‘অ্যানিমাল’-খ্যাত পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভঙ্গা এই মর্মে দীপিকার প্রতি অপেশাদারিত্বের অভিযোগ এনেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর ‘বায়নাক্কা’ নিয়ে। তবে সত্যিই কি এই দাবি অন্যায্য? এই ঘটনা সামনে আসার পরে ইন্ডাস্ট্রির একাধিক শিল্পী দীপিকাকে সমর্থন জানিয়ে যথেচ্ছ ওয়ার্ক আওয়ারের প্রতিবাদ করেছেন। আবার কেউ বলছেন, প্রযোজক-নির্মাতাদের দিকটিও ভেবে দেখা দরকার এ ক্ষেত্রে। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যে বাজেট ও সীমিত পরিসরের মধ্যে কাজ করতে হয়, সেখানে কতখানি যুক্তিযুক্ত এই দাবি? এই প্রশ্নই রাখা হয়েছিল টালিগঞ্জের অভিনেত্রীদের কাছে।
পাহাড়প্রমাণ কাজ, বাড়ি ও আরও দশ দিক একসঙ্গে সামলে চলার জন্য বিখ্যাত ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। দুই সন্তানের মা হওয়ার সময়, আগে বা পরে বিশেষ ফুরসত নেননি কাজ থেকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়ার সুবিধে-অসুবিধে দুই-ই আছে। আমি যখন মা হয়েছিলাম, কাজের জায়গায় অনেক সময়েই আমাকে ছাড় দেওয়া হত। আবার অনেক সময়ে হতও না। দুটোই ফেস করেছি। বাড়ি আর কাজ ব্যালান্স করা নিয়ে এক সময়ে সঞ্জয়ের (স্বামী) সঙ্গেও কম ঝামেলা হয়নি।’’ শুধু অভিনেত্রী নন, ঋতুপর্ণা একজন প্রযোজকও বটে। তাই মুদ্রার উল্টো পিঠটাও তিনি জানেন। ‘‘নির্মাতাদেরও অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে একটা ছবি তৈরি করতে হয়। সেখানে যদি নায়িকা দাবি করেন, নির্দিষ্ট সময়ের বেশি তিনি কাজ করবেন না, তা হলে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তবে কিছু জিনিস আবার মুখ ফুটে দাবি না করলে পাওয়া যায় না, সেটাও সত্যি,’’ মত তাঁর।
প্রথম সন্তান কবীর হওয়ার সময়ে একটি বাংলা ওয়েব সিরিজ়ের কাজ ছেড়েছিলেন কোয়েল মল্লিক। পরে সেটি করেছিলেন অন্য অভিনেত্রী, অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল সেই সিরিজ়। তবে তা নিয়ে আক্ষেপ নেই কোয়েলের। কারণ সেই সময়ে সন্তানকেই প্রাধান্য দিতে চেয়েছিলেন তিনি। ‘‘সদ্য মা হওয়ার পরে কতক্ষণ কাজ করব, কী ভাবে বাড়ি আর কাজ সামলাব, পুরোটাই ব্যক্তিবিশেষের উপরে নির্ভর করে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে লিখিত চুক্তি নয়, বরং মুখের কথা, বিশ্বাসের উপরে ভিত্তি করেই কাজ হয় মূলত। আমিও এ ভাবেই কাজ করে এসেছি এত দিন। মা হওয়ার পরে আমাকে কখনও সে ভাবে বলতেও হয়নি, বাকিরা নিজে থেকেই অ্যাডজাস্ট করে নিয়েছেন,’’ বললেন অভিনেত্রী। একটি প্রযোজনা সংস্থার অন্যতম কর্ণধার বলেই কি মা হওয়ার পরেও কোয়েলের পক্ষে নিজের শর্তে কাজ করা সহজ হয়েছে? জবাবে নায়িকার বক্তব্য, ‘‘নিজের সুবিধে-অসুবিধের কথা সকলেই বলতে পারেন। তবে এটাও মাথায় রাখা দরকার, শুটিংয়ের বাঁধাধরা সময় থাকলে দিনের মোট সংখ্যাও বেড়ে যায়। প্রযোজক হয়তো বাজেট
নিয়ন্ত্রণ করে একটা ছবি করছেন। সেখানে যদি নায়িকা বলেন তিনি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি থাকতে পারবেন
না, তা হলে হয়তো প্রযোজকের
পক্ষে সেই নায়িকাকে বিবেচনা করা কঠিন হবে।’’
নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়ার ক্ষেত্রে ছোট পর্দার শিল্পী ও কলাকুশলীরা দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি জানিয়ে এসেছেন। এখন তা কমবেশি মেনেই কাজ করা হয় টেলি ইন্ডাস্ট্রিতে। জনপ্রিয় নন-ফিকশন শোয়ের সঞ্চালক ও অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন, ‘‘আমার ছেলে হওয়ার সময়ে কয়েক বছরের একটা বিরতি নিয়েছিলাম। ‘দিদি নং ওয়ান’ দিয়ে যখন কাজে ফিরলাম, তখন নিজের দাবিদাওয়া প্রথমেই স্পষ্ট জানিয়েছিলাম চ্যানেলকে। ওরাও সাহায্য করেছিল। তবুও বলব, কাজের জায়গায় একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকা উচিত আর তা কঠোর ভাবে মানা উচিত।’’ নির্দিষ্ট সময়ের বেশি শুটিং চালিয়ে যাওয়া, রাতে ফেরার ব্যবস্থা না করার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটে, মেনে নিলেন রচনা। ‘‘এগুলো অন্যায়। কেউ সদ্য মা হয়েছেন কি না, তার চেয়েও বড় কথা তিনি একজন মানুষ। সকলেরই ব্যক্তিগত জীবন আছে। একটা স্বাভাবিক সময়ে কাজ শুরু ও শেষ হওয়াটা সকলের
পক্ষেই শ্রেয়।’’
নিয়ম করে কাজের সময় বেঁধে দেওয়ার পরেও পুরোটাই যে দু’পক্ষের বোঝাপড়ার উপরে নির্ভর করে, সে বিষয়ে একমত সকলে। পেশাদারিত্বের দায় আসলে উভয় পক্ষেরই, সন্দেহ নেই তাতে।
নির্মাতাদের অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে ছবি তৈরি করতে হয়। সেখানে যদি নায়িকা দাবি করেন নির্দিষ্ট সময়ের বেশি কাজ করবেন না, তা হলে সমস্যা।