প্র: ঘোঁতন-পপিনস নাকি মহাব্রত-অনুমেঘা?
মহাব্রত: স্কুলের বন্ধুরা দুটো নামেই ডাকে। তবে আমার আর একটা নাম আছে, হুলো।
প্র: তোমরা থাকো কোথায়?
অনুমেঘা: আমি থাকি শোভাবাজারে। আমাকেও স্কুলের বন্ধুরা পপিনস বলে ডাকে।
প্র: পাড়ায় খেলা করো?
মহাব্রত: এখন তো কেউ খেলে না, কিন্তু ‘রেনবো জেলি’ ছবিটার সময়ে সবাই খেলত। আমি বিজয়নগরে থাকি। পাড়ায় ক্রিকেট, ফুটবল... সব খেলতাম, আর আমার ছোটবেলা কেটেছে ফরাক্কায়। ওখানে আমার মামাবাড়ি।
প্র: বাহ! সে তো দারুণ জায়গা? খুব ভাল ইলিশ পাওয়া যায়...
মহাব্রত: শুধু ইলিশ? আম, লিচু, কাঁঠাল আহা... যা স্বাদ।
প্র: তার মানে খেতে খুব ভালবাসো?
মহাব্রত: হ্যাঁ, খুবই। তবে এখন বেশি খাই না। ‘পক্ষীরাজের ডিম’ ছবিটার আগে যখন সৌকর্যদা (ঘোষাল) দেখা করতে এসেছিল, তখন আমার প্রায় ৯২ কেজি ওজন হয়ে গিয়েছিল। তার পর ডায়েট মেনে দু’মাসের মধ্যে সেই ওজনটা ঝরিয়েও ফেলেছি। আসলে লকডাউনে তো কোথাও যেতাম না। বাড়িতে বসে কোনও কাজও নেই! কী আর করব, মনে হত এটা খাই, ওটা খাই। একটু একটু খেয়ে ওজনটা একটু বেশিই বেড়ে গিয়েছিল।
প্র: কী খেতে ভালবাসো তোমরা?
অনুমেঘা: চকলেট। যে কোনও সময়ে চকলেট দিলেই পুরোটা খেয়ে নেব।
মহাব্রত: আমি সর্বভুক। এবং স্বল্পাহারী। যেমন বর্ষাকালে ইলিশ, গরমে আম, লিচু। আবার রসগোল্লাও... সবই ভাল লাগে। আবার সারা বছরই যে রসগোল্লা ভাল লাগছে এমন নয়। পাল্টে-পাল্টে সব খেতে হবে।
প্র: তুমি তো টুয়েলভে দারুণ রেজ়াল্ট করেছ, ৯২ পারসেন্ট পেয়েছ। অনুমেঘার সামনে বোর্ডের পরীক্ষা। ওকে কী পরামর্শ দেবে?
মহাব্রত: আমি তো এই প্রথম নাইন্টি টু। ও তো সচিন তেণ্ডুলকর। সেঞ্চুরির কাছাকাছি চলে গিয়েছে। ওকে আমি আর কী পরামর্শ দেব? সেটেও বই এনে পড়াশোনা করে।
অনুমেঘা: আসলে এই ছবিটা যখন শুট করছি, তখন আমি ক্লাস টেন। ফলে তখনও আমার পরীক্ষা ছিল। তাই সেটে যখনই সময় পেতাম, পড়তাম।
প্র: অনুমেঘার পরীক্ষার ঠিক আগেই ছবির কাজ চলে আসে?
অনুমেঘা: হ্যাঁ। এ বার ‘পক্ষীরাজের ডিম’ মুক্তি পাবে। আর তার পরেই আবার বোর্ড।
মহাব্রত: আর আবার ৯৮-৯৯ পারসেন্ট। ও না! এ বার তো সেঞ্চুরি।
প্র: আর মহাব্রতর পড়াশোনা করতে কেমন লাগে?
মহাব্রত: আমি পড়াশোনার ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহী, কিন্তু বিশেষ আগ্রহী নই। মানে আমি জানতে চাই বইটায় কী আছে, কিন্তু ওটা যদি পড়তে হয়, তখনই আগ্রহটা কমে যায়।
প্র: বড় হয়ে কী হওয়ার ইচ্ছে তোমাদের?
অনুমেঘা: আমি অ্যাস্ট্রো-ফিজ়িক্স নিয়ে পড়তে চাই। আসলে স্পেস সায়েন্টিস্ট হতে চাই। তা ছাড়াও আরও অনেক দিকে আমার আগ্রহ আছে। এআই, রোবোটিকস নিয়েও পড়ার ইচ্ছে আছে।
মহাব্রত: আমি আর্টিস্ট হতে চাই। আমার আঁকতে খুব ভাল লাগে। আসলে আমার আগের স্কুলে রোজ ছবি আঁকানো হত। আর সেটা ড্রয়িং খাতায় না। বড় একটা চার্ট পেপারে ছবি আঁকতাম। আমি তখন যে ভাবে ছবি আঁকতাম ভাবাই যায় না। চার্ট পেপারের উপরে উঠে উবু হয়ে বসে, শুয়ে, দু’হাতে রং নিয়ে ছবি এঁকেছি। যেহেতু সেখানে কোনও নিয়ম ছিল না, আঁকাটা আমার ভাল লাগত। কিন্তু পড়াশোনা মানেই যেন নিয়মে বন্দি, তাই আর ভাল লাগে না।
পাশেই ছিলেন ছবির পরিচালক সৌকর্য ঘোষাল। বললেন, “ওর আর্ট কলেজে পড়ার ইচ্ছে। কিন্তু ওর দুর্ভাগ্য যে, সে দায়িত্বও পড়েছে আমার উপরে। ও কোনও নিয়মে চলবে না, ইচ্ছেমতো আঁকবে। ওকে পারস্পেক্টিভ ড্রয়িং, স্কেলিটন শেখাব বলে বললাম, ‘একটা লোকের ছবি আঁক তো।’ কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ছবি এঁকে দিল, একটা লোক ঢোলা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে, হাতদুটো পিছনে মুড়ে দাঁড়িয়ে। কারণ ও আঙুল আঁকতে পারে না। এ বার বোঝো কেমন অ্যানাটমি শিখছে।”
প্র: কার কাজ ভাল লাগে তোমার? নন্দলাল বসু, যামিনী রায়ের ছবি দেখেছ?
মহাব্রত: ওঁদের আঁকা তো খুবই ভাল। তবে আমার লিওনার্দো দা ভিঞ্চির কাজ খুব ভাল লাগে।
প্র: সেখানেও যে অ্যানাটমি। তা হলে শিখবে কী করে?
মহাব্রত: ওই লিওনার্দো দার আঁকা দেখে-টেখেই...
প্র: আর বৈজ্ঞানিক গবেষণা ভাল লাগে? বাড়িতে এটাসেটামিক্স করে দেখা হয়?
মহাব্রত: করা হয়। কিন্তু তার ফল ভাল হয় না।
প্র: মানে?
মহাব্রত: একদিন পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে ভলক্যানো বানানোর চেষ্টা করছিলাম। কখনও সত্যিকারের আগুন বেরোচ্ছে, কখনও সেটা ফুস করে নিভে যাচ্ছে। সেটা ঠিক করতে করতে একটু উঠেছি। ফিরে এসে দেখি ভলক্যানো ধুয়েটুয়ে, মুছেটুছে তুলে রেখেছে আমাদের বাড়ির দিদি। ধোঁয়া বেরোনোর আগেই ভলক্যানো ধুয়ে সাফ। তার পর আর এক্সপেরিমেন্ট হয়?
প্র: আর অনুমেঘা?
অনুমেঘা: আমার তো ফিজ়িক্স প্রিয়। কেমিস্ট্রির দিকটায় নেই।
প্র: তুমি তো ভাল গাও। গান শেখো?
অনুমেঘা: শিখি না। নিজে নিজেই গাই। নিয়ম করে কিছু করতে ভাল লাগে না।
মহাব্রত: আসলে নিয়ম আমাদের জন্য তৈরি হয়েছে, আমরা নিয়মের জন্য তৈরি হইনি।
এ বার ছবি তোলার পালা। করিডোরে গুটিসুটি দাঁড়িয়ে মহাব্রত-অনুমেঘা। দৃশ্যে প্রবেশ ‘পক্ষীরাজের ডিম’ ছবির অন্যতম অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের। ঘোঁতনকে আদর করে, ‘কী রে! নতুন বরের মতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন?’ আর অনুমেঘার গাল টিপে বললেন, ‘তোর গালগুলো আরও গোলু হয়ে গিয়েছে।’ ঠিক সেই মুহূর্তটাই কী ভাবে যেন ছবি (উপরের ফ্রেমটা) হয়ে গেল একটা।
নবনীতা দত্ত
ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক