ন্যাক-এ মর্যাদা রক্ষায় পিছিয়ে কলকাতা, চিন্তা
ঋজু বসু
পুরনো স্বীকৃতির মেয়াদ শেষ হয়েছে তিন বছর আগেই। কিন্তু নতুন পর্যায়ে ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল বা ‘ন্যাক’-এর মর্যাদার জন্য চেষ্টাই করেনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতেও ওই স্বীকৃতি আবশ্যক বলে ধরা হয়েছে।
গত দু’বছরে রাজ্যের কলেজগুলির জন্য ন্যাক স্বীকৃতি নিয়ে অনেকটাই তৎপর রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতর। রাজ্যের ৫০৬টি কলেজের মধ্যে ৮০ শতাংশের কাছাকাছির জন্য ন্যাক স্বীকৃতি চলেও এসেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ও এ বিষয়ে সজাগ। কিন্তু দেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ই ন্যাক মর্যাদা অর্জনের লড়াইয়ে দৃষ্টিকটু ভাবে পিছিয়ে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সঙ্কটের দিকটি উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেও মত সংশ্লিষ্টদের।
২০১৭ সালে শেষ বার ‘এ’ গ্রেড-সহ ন্যাক-এর স্বীকৃতি পায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। তখন অস্থায়ী উপাচার্য ছিলেন আশুতোষ ঘোষ। সহ-উপাচার্য থেকে রেজিস্ট্রার পদেও স্থায়ী কেউ ছিলেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যাচ্ছে, মূল্যায়নের সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাদি প্রকল্পের ভূয়সী প্রশংসা করেও প্রশাসনিক পরিস্থিতির সমালোচনা করেন ন্যাক কর্তৃপক্ষ। মূল্যায়নেও তার প্রভাব পড়ে বলে সূত্রটির দাবি।
নবান্ন বনাম রাজভবনের সুদীর্ঘ সংঘাতের জেরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জট এখন গোটা দেশেই চর্চিত। দু’বছর ধরে অন্তর্বর্তী উপাচার্যের ভূমিকায় শান্তা দত্ত দে। সহ-উপাচার্য পদগুলিও তিনি সামলাচ্ছেন। বিভিন্ন আধিকারিক, অধ্যাপক পদও শূন্য। ২০২২-এই ফের ন্যাক মর্যাদা আদায়ে পদক্ষেপ করার কথা ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। একই সঙ্গে প্রযুক্তিবিদ্যা পাঠের বিভাগগুলির জন্য এনবিএ তকমাও আবশ্যক বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট মহল। কারণ এনবিএ মর্যাদা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগের গুরুত্বই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে খাটো হবে। এনবিএ স্বীকৃতি থাকলে ডিগ্রিধারীদের আমেরিকা-সহ নানা দেশে চাকরি, গবেষণায় বিশেষ সুবিধাও হবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক তথা এনবিএ সংক্রান্ত কমিটির কো-অর্ডিনেটর নবেন্দু চাকী অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, “এনবিএ মর্যাদা আদায়ের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে তা পেতে আরও দেড়-দু’বছর লাগার কথা।”
ন্যাক মর্যাদা লাভের চেষ্টায় দেরির জন্য প্রশাসনিক সঙ্কটজনিত নানা বাধা কার্যত মানছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকেরা। অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে জানাচ্ছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল কোয়ালিটি অ্যাশিয়োরেন্স সেল বা অভ্যন্তরীণ মান নিশ্চয়তাকরণ বিভাগ (আইকিউএসি) ঢেলে সাজা দরকার ছিল। ন্যাক-এর জন্য তথ্য সংগ্রহ, উপস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আইকিউএসি-এর। শান্তা বলেন, “সব দিক দেখে আইকিউএসি-র এক জন স্থায়ী ডিরেক্টর ঠিক করতে পেরেছি। ন্যাকের মূল্যায়নের জন্য প্রস্তুত। আশা করি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা রক্ষা করতে পারব।”
গত ৫ জুনের পরে ন্যাকের পদ্ধতিতে বদল আসার কথা আগেই জানিয়েছেন ন্যাক কর্তৃপক্ষ। নতুন নিয়মে সম্ভবত গ্রেড থাকবে না। মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, তথ্যভিত্তিক ভাবে করার কথা ভাবা হচ্ছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি সনাতন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ন্যাক স্বীকৃতির জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবশ্যই তৎপর হওয়া উচিত। বিষয়টি নিয়ে আমরাও অন্তর্বর্তী উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। সমস্যা থাকলেও ওঁরা এখন ইতিবাচক ভাবে এগোচ্ছেন। আশা করছি শীঘ্রই ভাল কিছু ঘটবে।”