সংস্কারের কাজের মাঝে বাড়ির একাংশ ভেঙে মৃত্যু শ্রমিকের
নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরনো বাড়ির সংস্কারের কাজ চলাকালীন সেটির একাংশ ভেঙে মৃত্যু হল এক শ্রমিকের। রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বৌবাজার থানা এলাকার শ্রীনাথ দাস লেনে।
অভিযোগ, প্রশাসনের নাগের ডগায় কোনও রকম অনুমতি ছাড়াই শুরু হয়েছিল প্রায় ১০০ বছরের পুরনো ওই তেতলা বাড়িটি সংস্কারের কাজ। বাসিন্দাদের না সরিয়ে সেই সংস্কার চলাকালীন এ দিন ভেঙে পড়ে বাড়িটির একাংশ। ধ্বংসাবশেষের নীচে চাপা পড়ে এক শ্রমিক গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত শ্রমিকের নাম আশুতোষ অধিকারী (৪০)। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলায়। বর্ষা শুরুর আগেই শহরে পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ার এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে পুরসভার নজরদারি নিয়েও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার সময়ে পাঁচ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। চার জনকে দ্রুত ধ্বংসাবশেষের নীচ থেকে উদ্ধার করা গেলেও আশুতোষ ভিতরেই আটকে যান। পুলিশ এবং দমকলকর্মীরা এসে তাঁকে উদ্ধার করে সঙ্কটজনক অবস্থায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মৃত্যু হয় আশুতোষের। জানা গিয়েছে, শনিবারই আশুতোষ এই কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
শ্রীনাথ দাস লেনে তেতলা বাড়িটি প্রায় ১০০ বছরের। বাড়ির মালিকদের কেউ এখানে না থাকলেও ২০-২৫টি পরিবার ভাড়া থাকত। বিশাল এলাকা জুড়ে থাকা ওই বাড়িতে ঠাকুরদালান ও গুদাম রয়েছে। এ দিন ঠাকুরদালানের সংস্কার চলাকালীন বেলা ১১টা নাগাদ আচমকা ছাদ-সহ একাংশ ভেঙে পড়ে। এর ফলে বাড়িতে থাকা বাসিন্দারা আটকে পড়েন। চাপা পড়েন পাঁচ জন শ্রমিকও। চার জন নিজেরাই বেরিয়ে আসতে পারলেও আশুতোষ বেরোতে পারেননি। ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী অতনু হাজরা বলেন, ‘‘বিকট শব্দে বাড়িটির কিছুটা অংশ ভেঙে পড়ে। কয়েক জন সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসি। ভিতর থেকে গোঙানির আওয়াজ আসছিল। অনেক চেষ্টা করেও ওই শ্রমিকের কাছে পৌঁছতে পারিনি। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।’’ আটকে পড়া বাসিন্দাদেরও একে একে বার করা হয় বাড়ি থেকে।
জানা গিয়েছে, বাড়িটিকে বিপজ্জনক হিসেবে ঘোষণা করেনি কলকাতা পুরসভা। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঠাকুরদালানের স্তম্ভ থেকে মাস ছয়েক ধরে খসে পড়ছিল পলেস্তারা। চুন, সুরকি খসে পড়ত ছাদ থেকেও। শনিবার থেকে তাই ঠাকুরদালানের সংস্কার শুরু হয়েছিল। আজ, সোমবার থেকে পুরোদমে কাজ চালুর কথা ছিল। তাই বাড়ির বাসিন্দা কয়েকটি পরিবারকে ঘর ছাড়ার কথাও বলা হয়েছিল। ভাড়াটেদের কে, কার অনুমতি নিয়ে এই সংস্কার শুরু করেছিলেন, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।
পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, শহরে পুরনো বাড়ি সংস্কারের আগে অনুমতি নিতে হয় পুর কর্তৃপক্ষের। এ ক্ষেত্রে সেই অনুমতি নেওয়া হয়নি বলেই দাবি। ফলে কী ভাবে বাড়ি সংস্কার চলছিল এবং কেন তা নজরে এল না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। পুরসভার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড তথা ছ’নম্বর বরোর অন্তর্গত ওই বাড়িটি। বরোর চেয়ারপার্সন সানা আহমেদ বলেন, ‘‘পুরসভার অনুমতি না নিয়েই বাড়িটির সংস্কার চলছিল। থানাকেও জানায়নি। ওই বাড়ির বাসিন্দাদের সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’