ডাকেটের রিভার্স সুইপের জবাব খুঁজে পেল না ভারত
হেডিংলেতে অনেক স্মরণীয় টেস্টই হয়েছে। এই সিরিজ়ের প্রথম টেস্টও ইতিহাসে জায়গা করে নিল। হেডিংলেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার চ্যালেঞ্জ ছিল ইংল্যান্ডের সামনে। আর সেটাই করে দেখাল বেন স্টোকসের দল। জয়ের জন্য ৩৭১ রান তাড়া করতে নেমে পঞ্চম দিনে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট জিতে নিল ইংল্যান্ড। এই জয়ের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় কারিগর বেন ডাকেট (১৪৯)। আর শেষ দিকে মাথা ঠান্ডা করে ইংল্যান্ডকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিল জো রুট (অপরাজিত ৫৩)।
শেষ দিনে ইংল্যান্ডকে করতে হত সাড়ে তিনশো রান। পঞ্চম দিনের পিচে যে রান তোলা খুবই কঠিন কাজ। বিশেষ করে যে উইকেটে ‘স্পট’ তৈরি হয়ে গিয়েছে। বাঁ-হাতি রবীন্দ্র জাডেজা যে ক্ষতে বল ফেলে ডান হাতি ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে বাইরে নিয়ে যেতে পারত আর বাঁ-হাতিদের ক্ষেত্রে ভিতরে নিয়ে আসতে পারত। সেখানেই প্রাচীর হয়ে দাঁড়াল ডাকেট। একটার পর একটা রিভার্স সুইপ মেরে ভোঁতা করে দিল জাডেজা আর ভারতের কৌশল। জ়াক ক্রলিকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম উইকেট ১৮৮ রান তুলে দেওয়ার পরে ভারতের কাঁধ ঝুলে গিয়েছিল। ম্যাচের ভাগ্য ওখানেই প্রায় লেখা হয়ে যায়।
টেস্টে প্রথম নেতৃত্ব দিতে নামা শুভমন গিলের কাছে ডাকেটের এই রিভার্স সুইপের কোনও জবাব ছিল না। মনে হল, কোনও প্ল্যান ‘বি’ তৈরি নেই ভারতের। ভারতীয় বোলারদের শরীরী ভাষা ক্রমে নিষ্প্রভ হয়ে পড়ছিল। নতুন বলে যশপ্রীত বুমরা উইকেট না পাওয়ায় ভারতের সমস্যা আরও বেড়ে যায়। বুমরাকে এ দিন একটু ক্লান্ত দেখাল। এই সময় দলটাকে তাতানো দরকার ছিল। যেটা বিরাট কোহলি করে। এখানে দেখলাম, শুভমনরা হাসাহাসি করছে। এত হাসলে বিপক্ষের উপরে চাপ রাখা যাবে
কী করে?
তাও মাঝে পরপর দু’বলে ডাকেট এবং হ্যারি ব্রুককে ফিরিয়ে ভারতকে লড়াইয়ে নিয়ে এসেছিল শার্দূল ঠাকুর। কিন্তু সেই সুযোগ ভারত কাজে লাগাতে পারল না। ওই সময় বুমরাকে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে খেলে গেল জো রুট। জাডেজাকে সামলানোর জন্য বেন স্টোকস সেই রিভার্স সুইপের রাস্তাই নিয়েছিল। যদিও সেই রিভার্স সুইপ মারতে গিয়েই আউট হল ইংল্যান্ড অধিনায়ক, কিন্তু তত ক্ষণে চাপের মুখে ৪৯ রান যোগ হয়ে গিয়েছে। বাকি কাজটা ঠান্ডা মাথায় করে দিল রুট। নতুন বল নেওয়ার পরে দ্বিতীয় ওভারে জাডেজাকে দু’টো ছয় মেরে খেলা শেষ করে দিল জেমি স্মিথ (অপরাজিত ৪৪)।
কোনও সন্দেহ নেই, শেষ দিনে ভাল জায়গায় থেকে শুরু করেছিল ভারত। কিন্তু আরও ভাল জায়গায় থাকতে পারত বা ম্যাচটা আরও আগে শেষ করে দিতে পারত। সেটা না পারার কারণ কী? এক, ব্যাটিং-ধস। দু’ইনিংস মিলিয়ে ভারত শেষ ১৩টি উইকেট হারিয়েছে ৭২ রানে। ঠিক এই কারণের জন্যই পাঁচটা শতরান হওয়ার পরেও হারতে হল ভারতকে। আজ পর্যন্ত পাঁচটি শতরান করার পরে কোনও দল টেস্ট হারেনি! দুই, জঘন্য ফিল্ডিং। দু’ইনিংস মিলিয়ে গোটা আটেক ক্যাচ পড়েছে। এ দিনও ৯৮ রানের মাথায় থাকা ডাকেটকে ফেলে দিল যশস্বী জায়সওয়াল। ওর ক্যাচিংয়ে দ্রুত উন্নতি চাই। তিন, এই পিচে শেষ দিনে কুলদীপ যাদবের মতো এক জন রিস্টস্পিনার খুব কার্যকর হতে পারত। কোনও সন্দেহ নেই, কুলদীপ এই পিচে বল ঘোরাতে পারত। দল গঠন নিয়ে তাই প্রশ্ন থাকবে।
বেন ডাকেটকে দেখে অনেকেরই অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার বা ট্র্যাভিস হেডের কথা মনে পড়ে যায়। একই রকম আগ্রাসী ভঙ্গিতে ব্যাট করে এই বাঁ-হাতি ওপেনার। ইংল্যান্ড যে বাজ়বল ক্রিকেট খেলে, তার অন্যতম অস্ত্র হল এই ডাকেট। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে বোলারদের চাপে ফেলে দেয়। মঙ্গলবার হেডিংলেতে সে রকমই একটা ইনিংস খেলে দিল ছেলেটা। করল ১৭০ বলে ১৪৯। মারল ২১টি চার, একটি ছয়। মনে রাখতে হবে, ডাকেট এই ইনিংসটা খেলল কিন্তু পঞ্চম দিনের উইকেটে। যেখানে স্বাভাবিক ভাবেই কিছু ক্ষত তৈরি হয়েছিল। তার উপরে ছিল রান তাড়া করার চাপ। সব সামলে জীবনের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলে গেল বেন ডাকেট।
বিধ্বংসী: জাডেজার বিরুদ্ধে রিভার্স সুইপে বাজিমাত ডাকেটের। রয়টার্স