হাসপাতাল ও শিশুদের ক্লিনিকেও বোমাবর্ষণ করতে ছাড়ছে না ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনী। একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী, ‘হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরান’ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, নিহতের সংখ্যা আসলে সরকারি সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে।
ইজ়রায়েল সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে, এই খবর কানে যেতেই ক্ষেপে ওঠেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। বলেন, “ইরান ও ইজ়রায়েল, এই দু’টি দেশ এত দিন ধরে, এত ভয়াবহ ভাবে যুদ্ধ করে চলেছে যে, তারা নিজেরাই জানে না তারা কী করে চলেছে!” এই মন্তব্য করতে গিয়ে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সামনে, কুবাক্যও উচ্চারণ করেন উত্তেজিত প্রেসিডেন্ট।
কাল যে ভাবে যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘোরালো হয়েছিল, তার পরে কী করে কিছুটা হলেও যুদ্ধবিরতি সম্ভব হল, সেই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে কূটনৈতিক মহলে। অনেকেই বলছেন, কাতারে পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার সব থেকে বড় বায়ুসেনাঘাঁটিতে হামলার পরেই শান্তি আলোচনায় জোর দেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউসের একটি সূত্রের খবর, কাতারে ইরানের হামলার পরে ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। যুদ্ধবিরতি নিয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে সবিস্তার কথা হয়। তার পরে ট্রাম্প কাতারের আমিরকে মধ্যস্থতা করতে অনুরোধ করেন এবং বলেন ইরানকে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে যেন রাজি করান আমির। আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথা বলার জন্য কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেন বলে হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর।
জানা গিয়েছে, ইজ়রায়েল এই শর্তে যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে রাজি হয়েছিল যে, ইরান নতুন আক্রমণ শুরু করবে না। অন্য দিকে, ইরানের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছিল, তাদের উপরে নতুন করে কোনও হামলা না হলে তারা শান্তি-চুক্তি মেনে নেবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েশকিয়ান বলেন, “আমাদের দেশ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত যুদ্ধবিরতির প্রতি সম্মান দেখাবে।” আজ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। জানান, ইজ়রায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করলে ইরানও লঙ্ঘন করবে না। পরে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানান, শান্তিচুক্তিতে সম্মত হয়েছে তাঁর দেশ। তিনি দাবি করেন, আজ ইরান-ই প্রথমে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছিল। তার পরেই প্রত্যাঘাত করেন তাঁরা। ইরান সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আজ ইজ়রায়েল হামলা চালালেও সংযত ছিল ইরান। নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, গত কাল আমেরিকাকে লক্ষ্য করে ইরানের পাল্টা হামলার উদ্দেশ্যও ছিল মূলত ‘প্রতীকী’। কাতারে আমেরিকার বায়ুসেনাঘাঁটিতে ওই হামলায় কারও মৃত্যু হয়নি বা কেউ আহতও হননি। হামলা হতে পারে সেই খবর পেয়ে সেনাঘাঁটিটি আগেই খালি করে দিয়েছিল আমেরিকান সেনা।
দু’পক্ষ থেকে ইতিবাচক সম্মতি পেয়েই সরকারি ভাবে যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তার পরে ইজ়রায়েল সেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করায় মেজাজ হারান প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের ভর্ৎসনার পরে অবশ্য ইজ়রায়েলের পক্ষ থেকে হামলা আপাতত বন্ধ আছে। সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল ১২ জুন। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইজ়রায়েল-ইরান সংঘাতের প্রথম অধ্যায়ের ইতি হল।
সংবাদ সংস্থা