উদ্যাপনে মমতা, শুভেন্দু, বিতর্ক রথযাত্রার দিনেও
শান্তনু ঘোষ কেশব মান্না
দিঘা: কার্যত শুরুর দিন থেকেই দিঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। তার অন্যথা হল না শুক্রবার, রথযাত্রার দিনেও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নারকেল ফাটানোর পদ্ধতি থেকে জগন্নাথের রথের চাকা আটকে যাওয়া নিয়ে দিনভর চর্চায় রইল দিঘার রথযাত্রা। এই দু’টি বিষয় নিয়ে সরব হওয়ার সঙ্গেই দিঘার রথযাত্রাকে ‘ফ্লপ-শো’ বলে কটাক্ষ করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যদিও মুখ্যমন্ত্রী আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তিনি বিতর্কে আমল দিতে নারাজ। ‘মানুষ বুঝি’ বলে জনমানসকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।
সকাল ৯টা থেকে দিঘায় শুরু হয় ‘পাহান্ডি বিজয়’ অনুষ্ঠান। নৃত্য-গীতের মাধ্যমে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার বিগ্রহ রথে তোলা হয়। দুপুরে ওল্ড দিঘার অতিথি নিবাস থেকে বেরিয়ে হেঁটে রথের সামনে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। রাস্তার দু’ধারে মহিলারা শঙ্খধ্বনি করেছেন। মমতা প্রথমে বলরামের রথের (তালধ্বজ) সামনে আরতি করেন। পরে, নারকেল ফাটান এবং পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। রাস্তায় পড়ে থাকা সেই ফুল সোনার ঝাড়ু দিয়ে ঝাঁট দেন। তিনি একই আচার পালন করেছেন সুভদ্রার রথ (দর্পদলন) এবং জগন্নাথের রথের (নন্দীঘোষ) সামনেও। ইসকনের পাঁচ বিদেশি খুদে ভক্তের নৃত্য শেষে রথের রশিতে হাত দেন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুর ২টো ১৯-এ গড়াতে শুরু করে রথের চাকা।
মুখ্যমন্ত্রী রথের সামনে থাকেননি। ফুটপাতে উঠে রাস্তার দু’ধারে ব্যারিকেডের ভিতরে দাঁড়ানো দর্শনার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “ব্যারিকেডে যে দড়িটা আছে, সেটা কিন্তু রথের সঙ্গে স্পর্শ করা আছে। মনে রাখবেন, ওই দড়িটা ছুঁতে পারলেই, সকলে রথযাত্রার দড়ি ছুঁতে পারছেন।” তিনটি রথ এগোতে থাকে মাসির বাড়ির দিকে। কিন্তু মন্দিরের অদূরেই ‘দিঘালি’ অতিথি নিবাসের সামনে কাঠের চাকায় লাগানো লোহার বেড়ি আলগা হয়ে বার বার আটকে যায় জগন্নাথের রথ। মাঝেমধ্যে হাতুড়ি ঠুকে রথের চাকা ঠিক করার চেষ্টাও হয়। জরুরি ভিত্তিতে মেরামতি করে শেষ পর্যন্ত রথ পৌঁছয় মাসির বাড়ির প্রবেশদ্বারের সামনে। তবে সেখান থেকে কোনও রথই মাসির বাড়ির মন্দিরের একেবারে সামনে যায়নি। ১১৬-বি জাতীয় সড়কের উপরে রেখে সেখান থেকে তিনটি বিগ্রহকে কোলে করে মন্দিরে নিয়ে যান সেবায়েতরা। সেখানে বিগ্রহদের বরণ করেন মমতা।
রথের চাকা আটকে যাওয়াকে ‘ভাল চিহ্ন নয়’ বলে কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীর নারকেল ফাটানোর ভিডিয়ো পোস্ট করে সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘উনি বল ছুড়তে অভ্যস্ত, তাই সেই রকম চেষ্টা করলেন’। তমলুকে চৈতন্যদেবের স্মৃতি বিজড়িত মহাপ্রভু মন্দিরে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার উদ্বোধনে এসেও নারকেল ফাটিয়ে শুভেন্দুর মন্তব্য, “দিঘাতে ফাটেনি। এখানে ফেটেছে। দিঘাতে একটাও ফাটেনি!” তাঁর সংযোজন, ‘সাত হাজার পুলিশ নিয়ে পথে নামার পরেও দিঘার চিত্র এই যে, প্রকৃত ভক্তেরা রইলেন দূরে, এক কথায় ফ্লপ-শো।’
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সরাসরি কোনও তরজায় জড়াননি। তবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সমাজমাধ্যমে তাঁর পোস্ট, ‘যারা বিভাজন, বঞ্চনা ও নিপীড়ন করতে চায় তাদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন’। বিকেলে তিনি কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন।