আগের রাতে ডিজির
সামনেই রথ-পরীক্ষা
শান্তনু ঘোষ
দিঘা: তিনটি রথ সুষ্ঠু ভাবে ‘মাসির বাড়ি’ পৌঁছে দেওয়াই লক্ষ্য। তাই রথের আগের রাতে পরীক্ষামূলক ভাবে দেখা হয়েছিল, সব যাতে ঠিক থাকে। বৃহস্পতিবার রাতের সে পর্বে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল, ঠিক মতো রথ পৌঁছে দিতে পারলে মিলবে পুরস্কার। শুক্রবার রথে চেপে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা পৌঁছলেন মাসির বাড়ি।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ দিঘা জগন্নাথ মন্দিরের সামনে জনা ষাটেক যুবককে দেখা গেল কর্মব্যস্ত। তাঁদের অনেকেই কয়েক মাস ধরে জগন্নাথ মন্দির তৈরির বিভিন্ন কাজে যুক্ত। কেউ ইসকন, কেউ সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্ট, মাসির বাড়ি-সহ অন্য ধর্মীয় সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক। তাঁদের উপরে ভার ছিল রথ মন্দির থেকে বার করার। তাঁরা আগেও মন্দিরের চত্বরে তৈরি হওয়া রথ তিনটিকে প্রয়োজন মতো এ দিক-ও দিক সরাতে হাত লাগিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকে স্থির হয়েছিল, ওই রাতেই রাস্তায় এনে রাখা হবে তিনটি রথ। সেই মতো জগন্নাথের ৩০ ফুট, বলরামের ২৮ ফুট ও সুভদ্রার ২৬ ফুট উচ্চতার রথের দড়ি টানতে শুরু করলেন ওই যুবকেরা। তাঁদের সাহায্যে ছিল পুলিশ ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনীও। প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় মন্দির থেকে বেরোয় তিনটি রথ।
ডিজি জানান, সাদা পতাকা দেখালে, রথ এগোবে। লাল পতাকা দেখালে, থামবে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনারা যে কাজ করছেন, তার গুরুত্ব অনেকের চেয়ে বেশি।’’ ডিজি জানান, শুক্রবার তিনটি রথ পৌনে এক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ঠিক মতো ‘মাসির বাড়ি’ পৌঁছে গেলে মিলবে আর্থিক পুরস্কার। যুবকদের অনেকে জানালেন, প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কাজ শেষে বিশ্রাম নিতে যাওয়ার পথে স্বেচ্ছাসেবক অলোক পাড়িয়া, বাসুদেব দিন্দারা বললেন, ‘‘পুরস্কার সকলের ভাল লাগে। কিন্তু তার জন্য এসেছি, তা নয়। রথ টেনে নিয়ে যাওয়াটাই সৌভাগ্য।’’
পুলিশ ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদেরও আর্থিক ভাবে পুরস্কৃত করার বিষয়টি পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্যকে দেখার নির্দেশ দেন ডিজি। এ দিন রাতে কাজ শেষের পরে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার মিলেছে বলে জানান ওই যুবকেরা। একজন বলেন, ‘‘পুরস্কারের প্রত্যাশা ছিল না। কিন্তু তা-ও দেওয়া হল। অতিরিক্ত পাওনা।"
এ দিন কিছুটা দূরে যেতেই জগন্নাথের রথের চাকার বেড়ি আলগা হয়। হাতুড়ি পিটিয়ে তা ঠিক করা হয়। তবে গন্তব্যে ঠিকঠাক পৌঁছয় রথ।