নিম্নচাপের বৃষ্টির মধ্যেই দশমীর সিঁদুর খেলা, মণ্ডপ দর্শন
  
      নিজস্ব সংবাদদাতা
  
  আশঙ্কা সত্যি করে পুজোর শুরুর মতো দশমীর দিনটাও ভাসাল বৃষ্টি। দ্বিতীয়ায় যে ভাবে জলের তলায় চলে গিয়েছিল কলকাতা, ততটা না হলেও দশমীর বৃষ্টি কাঁটা 
হয়ে দাঁড়াল পুজো-জনতার উৎসাহের সামনে। এর মধ্যেও অবশ্য বৃহস্পতিবার জল-কাদা পেরিয়েই চলল দেবী-বরণ, সিঁদুর খেলা, বিসর্জন। অনেকেই পুজোর মূল দিনগুলির মতো দশমীতেও ভিড় জমালেন মণ্ডপে মণ্ডপে। তাঁদের অনেকেরই মন্তব্য, ‘‘মা ফিরে যাচ্ছেন বলে আকাশেরও মুখ ভার। তবু শেষ সময় পর্যন্ত যতটা আনন্দ ভাগ করে নেওয়া যায়, নেব।’’
রীতি মেনে এ দিনই বহু বাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। সকাল থেকেই বাবুঘাট এবং বাগবাজারের মতো ঘাটগুলিতে ছিল জোর প্রস্তুতি। জলপথে পুলিশি নজরদারির পাশাপাশি ঘাটে ঘাটে রাখা হয়েছিল বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা। জলে প্রতিমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাঠামো তুলে আনার ব্যবস্থাও রেখেছিল পুরসভা। রাত পর্যন্ত খবর, কলকাতার 
কয়েকশো বাড়ির প্রতিমা এ দিন নিরঞ্জন হয়েছে। ৫০টির মতো বারোয়ারি প্রতিমাও নিরঞ্জন হয়েছে কলকাতার ঘাটে। তবে আজ, শুক্রবার এবং কাল, শনিবার সবচেয়ে বেশি প্রতিমা নিরঞ্জন হওয়ার কথা। আগামী ৫ অক্টোবর সরকারি উদ্যোগে রেড রোডের কার্নিভালে 
অংশগ্রহণ করতে কিছু বড় পুজো কমিটি তাদের প্রতিমা রেখে দিচ্ছে। ফলে আগামী কয়েক দিনও মণ্ডপে মণ্ডপে দর্শনার্থীর ভিড় হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ দিন সকাল থেকেই ভিড় দেখা গিয়েছে বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি ও প্রদর্শনীর পুজো মণ্ডপে। একই রকম ভিড় ছিল মুদিয়ালি ক্লাব ও শোভাবাজার রাজবাড়িতে। নিয়ম মেনে শোভাবাজার রাজবাড়ির প্রতিমা এ দিনই বিসর্জন হয়েছে। পুরনো রীতি মেনে দুপুর
২টো ১০ মিনিটে প্রতিমা কাঁধে তোলা হয়। তার আগে শোলার নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয়। কিন্তু শোভাবাজার রাজবাড়িতে সিঁদুর খেলার রীতি নেই। তবে বৃষ্টিতে রাজবাড়ির 
উঠোনে জমা জলে দাঁড়িয়েই প্রতিমা দর্শন করতে দেখা গিয়েছে অনেককে। তবে বাগবাজারের মণ্ডপে এ দিন সিঁদুর খেলার ভিড় ছিল চোখে 
পড়ার মতো। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে, প্রতিমা বরণ করে সিঁদুর খেলায় মাততে দেখা গিয়েছে রাজ্যের এক মন্ত্রীকেও। মণ্ডপে ছবি তুলতে ব্যস্ত এক মহিলা বললেন, ‘‘সল্টলেক থেকে এসেছি সিঁদুর খেলতে। প্রতি বার দশমীর দিনটা তোলা থাকে এই জন্যই।’’ সেখানে হাজির 
সুকুমার সরকার নামে এক তরুণ বললেন, ‘‘বৃষ্টি হবে জেনেই ছাতা নিয়ে বেরিয়েছি। বাগবাজারের বিখ্যাত সিঁদুর খেলা দেখে ঠাকুর দেখতে বেরোব।’’ শোভাবাজার 
রাজবাড়িতে প্রতিমা দর্শনে আসা সুলগ্না ঘোষ নামে এক তরুণীর মন্তব্য, ‘‘এখন ১০ দিন ধরে ঠাকুর দেখা যায়। প্রথম দিকে কয়েক দিন বৃষ্টি ভেস্তে দিয়েছিল। আজও সেই 
একই অবস্থা দেখছি। তবে যে ভাবেই হোক, আজ বাকি প্রতিমা দেখেই ছাড়ব।’’
সন্ধ্যার পরে বৃষ্টি কিছুটা কমতেই উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ল ভিড়ের নিরিখে এ বারও শোরগোল ফেলা মণ্ডপগুলিতে। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার যেমন জানিয়ে দিয়েছে, দ্বাদশী পর্যন্ত প্রতিমা থাকছে তাদের মণ্ডপে। এ দিনও লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো দেখার ভিড় সেখানে। একই রকম ভিড় ত্রিধারা সম্মিলনী, বালিগঞ্জ কালচারাল, হিন্দুস্থান পার্কের পুজো মণ্ডপে। সমাজসেবী সঙ্ঘের পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, ‘‘এত মানুষ এখনও এসে চলেছেন যে, বলার নয়। বৃষ্টি বুঝেই তাঁরা যেন সমস্ত পরিকল্পনা করেছেন।’’ দেশপ্রিয় পার্কে অবশ্য এ দিনই প্রতিমা নিরঞ্জনের তোড়জোড় চলেছে। সেখানে এক মাঝবয়সি ব্যক্তি বললেন, ‘‘বৃষ্টি ভাসাবে জেনেই দশমীতে ঠাকুর দেখার পরিকল্পনা রাখিনি। আজ শুধুই 
খাওয়াদাওয়া, আড্ডা আর সিনেমা দেখা। তার পরে অপেক্ষা আগামী বছরের জন্য।’’ একই সুর সুরুচি সঙ্ঘের মণ্ডপে হাজির প্রত্যুষ দে-র গলায়। বিমানের টিকিট দেখিয়ে বললেন, ‘‘রাতেই শহর ছেড়ে কাজের জগতে ফিরে যাচ্ছি। তার আগে শেষ কয়েকটা ঠাকুর দেখে নেব। আবার তো এক বছরের অপেক্ষা।’’