তৃণমূল রাশ টেনেছে পহেলগাম-ভাষ্যে
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ১৬ মে: অপারেশন সিঁদুরের পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৈঠকে বসেছিলেন সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। সেখানে কংগ্রেস, আরজেডি দাবি তুলেছিল ভারতের সামরিক অভিযান এবং পাকিস্তানের আক্রমণ নিয়ে পরিস্থিতি খোলসা করতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকুক কেন্দ্র। এই দাবিতে এখনও অনড় রয়েছেন মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধীরা। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গোটা বিষয়টি নিয়ে নীরব
থেকেছে তৃণমূল। সন্ত্রাস দমনে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে থাকার বার্তা ছাড়া কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য শোনা যায়নি পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের কাছ থেকে।
বিষয়টি নিয়ে বিজেপি-বিরোধী রাজনীতি না করলেও অপারেশন সিঁদুরকে ঘিরে জাতীয়তাবাদের আবেগ থেকে যাতে বাংলার বিজেপি ফায়দা তুলতে না পারে, সে ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। আগামী ১৭ এবং ১৮ মে বাংলা জুড়ে তৃণমূল কর্মীরা ‘দেশপ্রেমী জনসভা’ করবেন। ভারতীয় সেনা এবং শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে করা এই জনসভা বাংলার বাইরে অসম, ত্রিপুরা, গোয়া এই তিন বিজেপি-শাসিত রাজ্যেও করা হবে।
তবে কাশ্মীরের পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে না পারা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কোনও স্বর শোনা যাচ্ছে না তৃণমূলের নেতাদের কণ্ঠে। যেখানে পান থেকে চুন খসলেও তা নিয়ে রাজনীতি হয় ভোটমুখী রাজ্য বাংলায়, যেখানে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি ক্রমাগত পহেলগাম-হত্যা নিয়ে ‘মেরুকরণের’ রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ খোদ তৃণমূল শিবিরেরই, সেখানে মমতা-সহ নেতাদের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “দ্রুত ঘটনার পট পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখছি। এই নিয়ে আমাদের কোনও ভাষ্য নেই। দেশের এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে আমরা চটজলদি কোনও প্রতিক্রিয়া না দিয়ে এটাই প্রমাণ করেছি, তৃণমূল একটি পরিণত রাজনৈতিক দল।” পাশাপাশি, তৃণমূলের এক নেতা দিল্লি থেকে এ কথাও বললেন যে, বাংলার বাসিন্দা, বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকুমার ওরফে পিকে সাউ-এর জীবন বিপজ্জনক সুতোয় ঝুলছিল। উত্তেজক কোনও কথা বলা বা ভাষ্য তৈরি করা কাঙ্ক্ষিত ছিল না।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, পহেলগাম কাণ্ডের পরে দেশ জুড়ে এবং বাংলাতেও হিন্দু মনের একাংশে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, যা কিছু ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে উগ্র মুসলিম-বিদ্বেষে। সেখানে তৃণমূল নেতৃত্বকে সতর্ক থাকতে হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের মধ্যে তাঁদের জনপ্রিয়তার সুযোগ যেন রাজ্যে বিজেপি না নিতে পারে। আবার হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে যে তিনি রয়েছেন, সেই বার্তাও দিতে হচ্ছে মমতাকে। কারণ এই অঙ্ক স্পষ্ট যে, বড় আসন নিয়ে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটে জিতে আসতে হলে মমতার হিন্দু ভোটেরও ততটাই প্রয়োজন, যতটা মুসলিম ভোটের। সম্প্রতি দলের ‘জয় জগন্নাথ’ কর্মসূচি এই রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। ফলে পরিস্থিতি আগের জায়গায় ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত ভারসাম্য বজায় রাখতে হচ্ছে তৃণমূল নেত্রীকে। আর তাই এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ‘কোনও ভাষ্য না থাকা’টাই ভাষ্য মমতার দলের।