সরস্বতী নদীর দূষণ রোধের পরিকল্পনা এখনও কাগজেই?
নিজস্ব সংবাদদাতা
সরস্বতী নদীর দূষণ রোধে
পরিকল্পনার ঘাটতি নেই— এমনই দাবি বিভিন্ন দফতরের। একাধিক পদক্ষেপের কথাও জানানো হয়েছে সরকারি তরফে। কিন্তু অভিযোগ, বাস্তবে এখনও পর্যন্ত প্রকল্পের
একটি কাজও চোখে পড়ার মতো করে শুরু হয়নি। কারণ, রাজ্য সরকার সূত্রের খবর, দূষণ নিয়ন্ত্রণে
যে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি হওয়ার কথা ছিল, তা এখনও হয়নি। সব কিছু ঠিকঠাক চললেও প্রকল্পের কাজ শুরু হতে ২০২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
যদিও সরকারি তরফে এ-ও জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে এই নদীর দূষণ রোধে বিভিন্ন জায়গায় কাজ শুরু হয়েছে। কঠিন ও তরল বর্জ্য পরিশোধনের ক্ষেত্রে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
তার পরেও অবশ্য বিতর্ক থামছে না। কারণ, সরকারি সূত্রের খবর অনুযায়ী, সরস্বতী নদীতে এসে
মেশা সমস্ত ছোট ও বড় নর্দমা, আবর্জনা এবং দূষণের উৎস চিহ্নিত করে যথাযথ পরিকল্পনার জন্য কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) এক বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতাকে
নিয়োগ করতে চেয়েছিল। সেই কারণে ২০২৪ সালে দরপত্র ডাকা
হয়েছিল। কিন্তু সূত্রের দাবি, দরপত্রে কেউই অংশ নেয়নি। ফলে, কাজের বরাত দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, একটি সরকারি সংস্থাকে সরাসরি সেই কাজ
দেওয়া হবে।
পরামর্শদাতা নিযুক্ত হলে কত সময় লাগবে? সরকারি সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন
মাসের মধ্যে পরামর্শদাতা নিয়োগ করা গেলে পরবর্তী পাঁচ মাসে ডিপিআর তৈরি হওয়ার কথা। সেই রিপোর্ট অনুমোদনের পরে অর্থ
বরাদ্দ ও ঠিকাদার নিয়োগে আরও মাস তিনেক সময় লাগবে। এর পরে মূল কাজ শেষ করতে সময় লাগবে প্রায় দু’বছর।
অর্থাৎ, সব মিলিয়ে বাস্তবে মূল কাজ শুরু হয়ে তার ফল পেতে
সময় লাগবে অন্তত আরও
দু’বছর। অথচ, সরস্বতী নদীর দূষণ রোধ নিয়ে মামলা চলছে ২০১৫ সাল থেকে। এত বছরেও প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদেরা।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, “হলফনামায় প্রতিশ্রুতি অনেক।
কিন্তু বাস্তবে কিছুই কার্যকর হয়নি। সরস্বতী নদীর পাড়ে আজও
জলজ আগাছা, দুর্গন্ধ আর নর্দমার জলে ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন মানুষ। শুধু পরিকল্পনার কথা বললে সমস্যা মেটে না।”
সরকার জানিয়েছে, বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি হলে দূষণ কমাতে উপযুক্ত প্রযুক্তি, নর্দমার
প্রবাহ কমানো, আবর্জনা শোধন
এবং নদীর জলের মানোন্নয়নের পরিকল্পনা করা যাবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— যদি সেই প্রাথমিক রিপোর্টই তৈরি না হয়, তা হলে এত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কি
আদৌ সম্ভব?