এই বইয়ে কোনও গল্প নেই, শুরুতেই জানিয়ে রেখেছেন রাস্কিন বন্ড। এ তাঁর দিনলিপির খাতার কয়েকটা পৃষ্ঠামাত্র— এক বছরের ৩১ জুলাই থেকে পরের বছরের ৩১ জুলাই অবধি; তবে সব দিনের নয়, কিছু কিছু দিনের। কোন বছর, উল্লেখ করেননি লেখক। একাধিক জায়গায় নিজের বয়স বলেছেন ৮৮ বছর— তার থেকে হিসাব করলে মনে হয়, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুলাই অবধি। ছোট ছোট লেখা, কোনওটা দু’পাতায় শেষ, কোনওটা তার চেয়ে সামান্য বড়, কোনওটা আবার ছোট। যেমন, এক দিনের ‘এন্ট্রি’তে লেখা, “এক ‘ফ্যান’-এর চিঠি এল আজ। লিখেছে, অনেক দিন আগে আপনার লেখা একটা বই পড়েছিলাম। তার মনে নেই, তবে প্রচ্ছদ ছিল নীল রঙের।” ব্যস, এটুকুই। বাকিটা পাঠককে কল্পনা করে নিতে হবে, কেন সেই পাঠক বইয়ের নাম ভুলে যাওয়ার পরও চিঠি লেখেন লেখককে। রাস্কিন বন্ডের লেখার সঙ্গে যাঁদের পরিচয় আছে, তাঁদের হয়তো কল্পনা করতে খুব সমস্যা হবে না।
একটা জানালার পাশে বসেই দিন কাটে অশীতিপর লেখকের। মন্থর দিন, তাই তাঁর চোখে পড়ে সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়া মানুষ আর না-মানুষের গতিবিধি, পাখিদের বৃত্তান্ত, ফুল, পাহাড়ের কুয়াশা, সবই। পাহাড়ের পাল্টে যাওয়াও। কী ভাবে প্লাম গাছের সারি কেটে তৈরি হল হোটেল, কী ভাবে পুরনো বসতি ভেঙে নতুন বাড়ি ওঠায় আর চোখে পড়ে না হানিসাক্ল গাছ, খেয়াল করেন এই বৃদ্ধ। স্মৃতিকাতর হন, কিন্তু এ কথাও জানেন যে, ট্যুরিস্টদের আসাও জরুরি, পাহাড়ের মানুষদের জন্য। প্রতি দিনের ডায়েরি শুরু হয় কোনও একটি ফুলের কথা বলে। আবার, নিজের খিদের কথাও বলেন তিনি— আক্ষরিক খিদে। তাঁর চিকেন রোস্ট খেতে ইচ্ছা করে, অথবা কিমা মটর। কিন্তু, তাঁর দেখাশোনা করেন যিনি, শ্রাবণ মাসে তিনি আমিষ রান্না করেন না বলে লেখক ধৈর্য ধরেন, মাস শেষ হওয়ার।
গত কয়েক বছরে রাস্কিন বন্ডের যে ক’টা বই প্রকাশিত হয়েছে, তার সবেরই গতি মন্থর, আর জীবনবোধ টইটম্বুর। এই বইটাও তেমনই। মনে হয় যেন, বৃদ্ধ পিতামহের কাছে বসে জিরিয়ে নেওয়ার অবকাশ দু’দণ্ডের— আলাদা করে আর কোনও কথা না বললেও চলে।
অ্যানাদার ডে ইন ল্যান্ডর: লুকিং আউট ফ্রম মাই উইন্ডো রাস্কিন বন্ড ৩৯৯.০০ হার্পার কলিন্স