কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনাকে হাতিয়ার করে হিন্দুত্ববাদী জিগির আরও চড়া করতে নেমে গেল বিজেপি। সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করেও বিভাজনের রাজনীতির পাল্টা সরব হল অন্যেরা। জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুরে বৃহস্পতিবার গুলির লড়াইয়ে নিহত জওয়ান, নদিয়ার ঝন্টু আলি শেখের কথাও বিজেপিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তারা।
পহেলগামে হামলার প্রতিবাদে এ দিন বিধানসভার বাইরে পাকিস্তান-বিরোধী বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপির অন্য বিধায়কেরা। অন্য কোনও দেশের বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক দলের এমন বিক্ষোভ সাম্প্রতিক কালে এ রাজ্যে দেখা যায়নি। বিক্ষোভের পরে বিরোধী দলনেতার নেতৃত্বে বিজেপির প্রতিনিধিদল গিয়েছিল নিহত বিতান অধিকারীর বৈষ্ণবঘাটার বাড়িতে। প্রায় ৪০ মিনিট সেখানে কাটানোর পরে বেরিয়ে শুভেন্দু বলেন, “আমার সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত কথা বলতে চেয়েছিলেন বিতান অধিকারীর স্ত্রী। আমি কথা বলেছি। কেন্দ্রের সরকার, জম্মু-কাশ্মীর সরকার, রাজ্যের সরকার নিশ্চয়ই কিছু সাহায্যের ব্যবস্থা করবে। সেটা দেখে আমদের যতটুকু সামর্থ্য, আমরা পাশে থাকব। আমার সহকর্মী অগ্নিমিত্রা পাল, রুদ্রনীল ঘোষেরা দক্ষিণ কলকাতায় থাকেন। ওঁরা দৈনন্দিন যোগাযোগ রাখবেন। আমি প্রয়োজনে সোমবার আবার আসব।’’
শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস আবার সুর চড়িয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘ব্যর্থতা’ এবং তার পরে মেরুকরণের রাজনীতি নিয়ে। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, ‘‘এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা কী ভাবে ঘটল, সেটা নিয়ে আত্মসমীক্ষা না-করে বিজেপির কিছু নেতা বাংলায় মেরুকরণ করতে চাইছেন এবং বাংলার সরকারকে নিশানা করছেন। এটা খুবই নিন্দনীয় বিষয়। নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থার ফাঁক দিয়ে
এই ঘটনা কেন হল, সেটা আগে দেখুন!’’ দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও বলেছেন, ‘‘সীমা পেরিয়ে জঙ্গিরা ঢুকল কী করে? সেই জবাবদিহি এড়াতে বিজেপি হিন্দু- মুসলিম তত্ত্ব খাড়া করে শকুনের কাজ করতে চাইছে!’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বিজেপির নেতারা নদিয়ার ঝন্টু আলি শেখের রক্ত দেখতে পাচ্ছেন না! বাংলার ছেলে উধমপুরে জঙ্গিদের হামলায় খুন হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, কাশ্মীরি যুবক আদিল হুসেনের মৃত্যুও তাঁরা দেখতে পাননি শুধু ধর্ম নিয়ে উন্মাদনা তৈরি করবেন বলেই।’’
কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ দিন গৃহীত প্রস্তাবেও বলা হয়েছে, কাশ্মীরে ভয়াবহ ঘটনার পরে গোটা দেশ যখন ঐক্যবদ্ধ ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে তৈরি হচ্ছে, সেই সময়ে বিজেপি কেবলই মেরুকরণ এবং অবিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টিতে ব্যস্ত। এআইসিসি আজ, শুক্রবার দেশ জুড়ে মোমবাতি মিছিলের ডাক দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা এবং নিহত জওয়ান ঝন্টুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ দিনও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে কলকাতায় মিছিল হয়েছে। হুগলিতে মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের মন্তব্য, ‘‘এই সঙ্কটের সময়ে পাশে দাঁড়ানোর নামে বিজেপি ও তৃণমূল মৃতদেহ সামনে রেখে দখলদারির রাজনীতি করছে!’’
রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদে নেমেছে বামেরাও। পহেলগামের ঘটনা এবং মুর্শিদাবাদের অশান্তির প্রতিবাদে ও সম্প্রীতির ডাক দিয়ে বহরমপুরে মিছিলে ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ধর্মের নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাসের নিন্দা করে তিনি বলেছেন, ‘‘পর্যটনের মরসুমের শুরুতেই পরিকল্পিত ভাবে এই হামলা হল। কেউ কেউ বলছেন, এই ঘটনার আগাম খবর ছিল, তার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফল বাতিল করলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁর সফর বাতিল করলেন। অথচ সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা করা হল না।’’ বিরোধী দলনেতা যে ক্রমাহত হুঙ্কার দিচ্ছেন, তার প্রেক্ষিতে সেলিমের বক্তব্য, ‘‘মাওবাদীদের নিয়ে এসে যারা সিপিএমকে খুন করেছে, কিষাণজি’কে দানাপানি সাপ্লাই করেছে, নন্দীগ্রাম থেকে জঙ্গলমহলে অশান্তির সৃষ্টি করেছে, তারা আবার উগ্র হিন্দুত্ববাদী কথাবার্তা বলে ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে আগুন জ্বালিয়ে নিজেদের রুটি সেঁকতে ব্যস্ত!’’
নিহত জওয়ান ঝন্টু এক সময়ে এলাকায় ডিওয়াইএফআই-কে সমর্থন করতেন, দাবি করেছেন বাম নেতারা। জঙ্গি হানায় নিরীহ মানুষের নৃশংস হত্যা এবং পর্যটকদের রক্ষা করতে মোদী সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে দেশের নানা প্রান্তে কর্মসূচি নিয়েছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই। কলকাতায় আজ, শুক্রবার ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট।