সর্বদলে সন্ত্রাসদমনে কেন্দ্রের
পাশে একজোট বিরোধীরা
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ২৪ এপ্রিল: নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের সবক’টি বড় রাজনৈতিক দল আজ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের পাশে এসে দাঁড়ালো। পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর আজ নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন সংসদের অ্যানাক্সি ভবনে। উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে বাম, আপ, এসপি, আরজেডি-সহ সব বিরোধী দলের সংসদীয় নেতারা। সরকারের পক্ষে রাজনাথ ছাড়াও ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, সংসদীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু প্রমুখ। সূত্রের খবর, বৈঠকের ভিতরে নিরাপত্তার গাফিলতি নিয়ে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন কংগ্রেসের রাহল গান্ধী, তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিএমকে-র তিরুচি শিবার মতো নেতারা। সুদীপ গোটা বিষয়টি নিয়ে বিজেপি-র মেরুকরণের প্রয়াসের কথাও উল্লেখ করেছেন। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর না থাকা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু জঙ্গিদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার প্রশ্নে সবাই একমত হয়েছেন। বৈঠকের পরে বাইরে এসে সে কথাই বলেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল, সুদীপরা।
সূত্রের খবর, বৈঠকের শুরুতেই তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের কোনও কোনও নেতা পহেলগামে নিরাপত্তার এই মারাত্মক গাফিলতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন। তখন অমিত শাহকে মেনে নেওয়ার ঢংয়ে বলতে শোনা যায়, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা হয়েছে বলেই তো তিনি সমস্ত নেতাদের বৈঠকে ডেকেছেন! না হলে তো ডাকতেন না! এক অর্থে এই গাফিলতির কথা স্বীকার করলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তা মহেশ দীক্ষিতকে দিয়ে বড় পর্দায় কাশ্মীরের পরিস্থিতির ছবি-সহ ব্যাখ্যা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সেখানে দু’টি সময়ের ভাগে দেখানো হয় উপত্যকাকে। একটি ২০০৪ থেকে ১৪ অর্থাৎ ইউপিএ-র শাসনকাল। অন্যটি গত দশ বছর অর্থাৎ
মোদীর সরকার। এই দাবিও কেন্দ্র করে যে, এখন সেখানে বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির বৈঠকও নিরাপদেই হচ্ছে। কিন্তু ইউপিএ এবং এনডি-এর সময়কার কাশ্মীর পরিস্থিতির মধ্যে তুলনা দেখানোর বিষয়টি নিয়ে বৈঠকের ভিতরে সরকারের সমালোচনা করেন রাহুল গান্ধী। সূত্রের খবর, তিনি শাহকে
বলেন,’ ‘আপনারা কী এগুলো দেখাতেই আমাদের ডেকেছেন? বরং পহেলগামে কী হল, সেটা
আমাদের জানান।’
তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা কেন্দ্রীয় সরকার পাশে রয়েছি। সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতে গোটা দেশকে পুরোপুরি ভাবে এক থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর উচিত অবিলম্বে সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রধানদের ডেকে একটি বৈঠক করা। সে ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসবেন।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘পহেলগামের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনস্থলে কোনও নিরাপত্তা ছিল না কেন? আর বিজেপি কেনই বা গোটা বিষয়টিকে হিন্দু-মুসলমানে ভাগ করছে? দিল্লিতে শাসক দলের আরও অনেক বেশি দায়িত্বজ্ঞান দেখানো প্রয়োজন।’
সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে তাঁরা সব রকম ভাবে সমর্থন জানাবেন, তবে কোনো প্রকার উগ্র জাতীয়তাবাদ যেন না ছড়ায়। একই সঙ্গে অপরাধীদের যাতে দ্রুত বিচারের কাঠগড়ায় তোলা হয়, সেই দাবিও জানান তিনি।
বাইরে এসে রাহুল গান্ধী বলেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে কোনও অভিযানকে আমরা সমর্থন করি।” খড়্গের বক্তব্য “সমস্ত দল এই ঘটনার নিন্দা করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি বজায় রাখার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।” বৈঠকের পর কিরেণ রিজিজু বলেন,
“মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটিতে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা সব দলকে আজ জানানো হয়েছে। পাকিস্তান এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে সমস্ত দল ঐক্যবদ্ধ।”