সল্টলেক থেকে শহিদ মিনারে শিক্ষকেরা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সল্টলেকের এসএসসি ভবনের সামনে থেকে নিজেদের ধর্না-অবস্থান এ বার ধর্মতলার শহিদ মিনারের মাঠে নিয়ে আসছেন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ঐক্য মঞ্চ’-এর সদস্যেরা। শুক্রবার দুপুরে এসএসসি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে এক আন্দোলনকারী শিক্ষক মেহবুব মণ্ডল বললেন, ‘‘আমাদের আন্দোলন এখনই বন্ধ হচ্ছে না। তবে, এসএসসি ভবনের সামনে আর ধর্না-অবস্থান চালাব না আমরা। শহিদ মিনারের মাঠে চলে যাব। আন্দোলনের পরবর্তী গতিপ্রকৃতি কী হবে, সেখানে বসেই ঠিক করব। আমরা সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন করছি। সেই রিভিউ পিটিশনের কাজ করতে হবে।’’ সেই সঙ্গেই মেহবুব জানান, স্কুল খুলে গিয়েছে। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ক্লাস চলবে। তার পরে গরমের ছুটি পড়বে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে হবে তাঁদের।
এ দিন এসএসসি-র দফতরের সামনে থেকে আন্দোলন প্রত্যাহার করার পরে ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, স্কুলে যাওয়াটাও তাঁদের দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে। সুপ্রিম কোর্টও তাঁদের স্কুলে যেতে বলেছে। ৩০ এপ্রিলের পরে গরমের ছুটি পড়লে আবার তাঁরা আন্দোলনে নামবেন। আন্দোলনকারী এক শিক্ষিকা সঙ্গীতা সাহা জানালেন, এসএসসি-র দফতরের সামনে বসে আন্দোলন করার সময়ে যে দাবি তাঁরা জানিয়েছিলেন, সেই দাবি আংশিক ভাবে পূরণ হয়েছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে কিছু গন্ডগোলও করেছে এসএসসি। যোগ্যদের যে তালিকা জেলা স্কুল পরিদর্শকদের অফিসে পাঠানো হয়েছে, সেই তালিকা যথাযথ দায়িত্ব সহকারে পাঠানো হয়নি। তাতে কিছু ভুল রয়েছে। মেহবুব বলেন, ‘‘এমন অনেকের নাম পাঠানো হয়েছে, যাঁকে এসএসসি হয়তো ছ’বছর আগে সুপারিশপত্র দিয়েছিল, কিন্তু তিনি স্কুলে যোগই দেননি। তাঁর নামও চলে গিয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, তাঁদের অনেকের নাম বাদ গিয়েছে। এ সব সংশোধন করে জেলা স্কুল পরিদর্শকদের দু’দিনের মধ্যে সেই তালিকা পাঠাতে হবে। তা করা না-হলে ফের বিকাশ ভবন ঘেরাও হবে।
আন্দোলনকারীরা জানালেন, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে শিলিগুড়ির ববিতা সরকারের চাকরি বাতিল হয়েছিল। তবু তাঁর নাম যোগ্যদের তালিকায় রয়েছে। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এসএসসি সূত্রের খবর, প্রযুক্তিগত ত্রুটির ফলে এমনটা ঘটেছে। এ বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা দফতর এসএসসিকে জানিয়েছে যে, এই ধরনের যতগুলি ত্রুটি আছে, তা যেন সংশোধন করে জেলা স্কুল পরিদর্শকদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ দিন স্কুলে যাননি ববিতা। এসএসসি ভুলবশত তাঁর নাম যোগ্যদের তালিকায় রেখেছে শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সব কিছুই ওদের ভুলের জন্য হচ্ছে। অঙ্কিতা ওদের ভুলে চাকরি পেল, আমি পেলাম। আবার চাকরি চলে গেল। অনামিকা চাকরি পেল। যোগ্যদের তালিকায় আমার নাম এল। সবই যদি ওদের ভুলের জন্য হয়, তা হলে এসএসসি-র হাতে এই ব্যবস্থা রয়েছে কেন? কোনও এজেন্সিকে দিয়ে দিলেই তো হয়। আর কত ভুল ওরা করবে?’’ আন্দোলনকারী এক শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডল জানালেন, তাঁদের প্রধান কাজ এখন সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করা। যা করতে গেলে শিক্ষকদের ওকালতনামায় সই করতে হবে। আরও কিছু আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। সে সব কাজ তাঁরা শহিদ মিনারের মাঠেই করবেন।
এসএসসি-র যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা থেকে যে চাকরিহারারা বাদ পড়েছেন, তাঁরা এখনও ওই অফিসের সামনে বসে ধর্না চালাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, তাঁরা এখনও অযোগ্য বলে প্রমাণিত হননি। তা হলে কেন তাঁদের নাম যোগ্যদের তালিকায় রাখা হল না? এর সদুত্তর না-পাওয়া পর্যন্ত এসএসসি-র অফিসের সামনে ধর্না-আন্দোলন চালাবেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার রাতে এসএসসি-র অফিসের সামনে বসে থাকা ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ঐক্য মঞ্চ’-এর এক শিক্ষকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে হাতাহাতি পর্যন্ত হয় অন্য এক জনের। থানায় অভিযোগও হয়। পরে অবশ্য মিটমাট হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেন ধর্নায় বসা শিক্ষকেরা।
অন্য দিকে, চাকরিহারা শিক্ষাকর্মী, অর্থাৎ গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি কর্মীরা এখনও করুণাময়ীর মোড়ে অবস্থান-বিক্ষোভ চালাচ্ছেন। সুদাম মণ্ডল নামে এক গ্রুপ-ডি কর্মী বললেন, ‘‘আমরা করুণাময়ীতে ধর্না চালাচ্ছি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ভিতরে চার জন এখনও অনশন চালাচ্ছেন। মোট আট জন অনশন করছিলেন। এর মধ্যে চার জন অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল।’’ সুদাম জানান, তাঁদের দাবি, গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি-রও যোগ্য-অযোগ্য তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তাঁরাও রিভিউ পিটিশন করবেন সুপ্রিম কোর্টে। রাজ্য যেন তাঁদের পিটিশনকে শিক্ষকদের রিভিউ পিটিশনের মতোই সমান মর্যাদা দেয়।