সাঁইথিয়া: বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়াল বীরভূমের সাঁইথিয়া ব্লকের হাতোড়া পঞ্চায়েতের দক্ষিণ সিজা গ্রামে। ভেঙে পড়ল বাড়ির দেওয়াল। পুলিশ সূত্রের দাবি, বোমাবাজি নয়, বাড়িতে মজুত রাখা বোমা ফেটে বিস্ফোরণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে।
প্রমাণ লোপাটের অভিযোগও উঠেছে পরিবারের বিরুদ্ধে। বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘‘বাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে। বাড়িতে মজুত রাখা বোমা ফেটেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। ওরা প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি। আমরা কিছু প্রমাণ পেয়েছি। এখনও কেউ গ্রেফতার বা আটক হয়নি, তবে দ্রুত হবে।’’ যাঁর বাড়িতে বিস্ফোরণ, সেই শেখ ফিরোজ ঘটনার পর থেকে পলাতক বলে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন। যদিও বাড়ির লোকের দাবি, বাইরে কাজে গিয়েছেন তিনি।
এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ভোর ৫টা নাগাদ বিস্ফোরণ ঘটে। তীব্র আওয়াজে ছুটে আসেন এলাকার মানুষেরা। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, একটি কংক্রিটের দেওয়াল সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সাঁইথিয়া থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ির ভিতরে একটি থলিতে বোমার সুতলি পেয়ে সেটিকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ ঘটনাস্থলেও পুলিশ মোতায়েন আছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পরে প্রমাণ লোপাট করতে ‘পে লোডার’ বা ওই জাতীয় ভারী যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল, এমন অভিযোগ গ্রামের কয়েক জন পুলিশের কাছে করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে, বাড়ির সামনে খোঁড়াখুঁড়ি ও পরিষ্কারের কাজ হয়েছে৷ তবে তা ঘটনার আগে না পরে, তা পুলিশ নিশ্চিত নয়।
অন্য দিকে, শেখ ফিরোজের বোন গলেহার বিবির দাবি, ফিরোজের বড় ছেলে সুরজ ইমারতি নির্মাণের ব্যবসা করেন। ফলে, বাড়িতে ‘পে লোডার’ বা অন্য যন্ত্র থাকে। কয়েক দিন আগেই বাড়ির সামনের অংশে দরজা-সহ পাঁচিল তৈরির জন্য ‘পে লোডার’ দিয়ে ভিত খোঁড়া হয়েছে। গলেহার বলেন, ‘‘বাড়িতে বাচ্চা থাকায় বিস্ফোরণে দেওয়ালের যে অংশ ভেঙে
পড়েছিল, তা সরিয়ে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে।’’
বহিরাগত কেউ বা কারা বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছুড়েছে বা আগের রাতে বাড়ির সামনে বোমা মজুত করেছিল বলে গলেহারের অভিযোগ। তাঁর আরও দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বোমা মারা হয়ে থাকতে পারে। যদিও ফিরোজের ভাইপো শেখ জাহাঙ্গির বলেন, “কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা আমরা দেখতে পাইনি। আমরা আওয়াজ শুনেই ঘুম থেকে উঠে এসে দেখি, বোমার আঘাতে দেওয়াল ভেঙে গেছে।’’ হাতোড়া পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী, এলাকার তৃণমূল নেতা মহম্মদ আসারুলও মন্তব্য করেননি।
তবে ঘটনাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, “বীরভূম বোমা, বারুদ, বন্দুকের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। এটাও তারই অংশ। সরকারের উচিত, এই জায়গাগুলিকে চিহ্নিত করে প্রতিদিন তল্লাশি চালানো। যারা করেছে, তারা সবাই তৃণমূলের লোক।”