জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১১ জনকে বাঁচান কাশ্মীরের গাইড নজ়াকত
শ্রীনগর, ২৫ এপ্রিল: “আমি গুলি খেতে প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু তাঁদের (পর্যটকদের) গায়ে একটুও আঁচ লাগতে দিতাম না”— বক্তা বছর তিরিশের নজ়াকত আহমেদ শাহ। ২২ এপ্রিল দুপুরে বৈসরনে যখন জঙ্গিদের বুলেট ২৫ পর্যটকের দেহ ক্ষত-বিক্ষত করেছে, তখন একা হাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছত্তীসগঢ়ের ১১ জন পর্যটকের প্রাণ বাঁচিয়েছেন কাশ্মীরি গাইড নজ়াকত। এত জনের প্রাণ বাঁচানো সেই ত্রাতা যদিও গভীর শোকে কাতর। কারণ মঙ্গলবারের জঙ্গি হামলায় প্রাণ গিয়েছে নজ়াকতের মামাতো ভাই সহিস সৈয়দ আদিল হুসেন শাহের। নিহত ২৬ জনের মধ্যে একমাত্র কাশ্মীরি আদিল।
নজ়াকত পহেলগামের বাসিন্দা। বৈসরন উপত্যকা থেকে কিছু দূরেই তাঁর গ্রাম। শীতের সময়ে নজ়াকত সোয়েটার, শাল-সহ নানান শীতবস্ত্র নিয়ে ছত্তীসগঢ়ে বিক্রি করতে যান। ব্যবসার সূত্রেই চিরমিরি গ্রামে গিয়ে পরিচয় ঘটে বিজেপি যুব শাখার কর্মী অরবিন্দ আগরওয়ালের সঙ্গে। অরবিন্দ এবং তাঁর পরিবারকে কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়ার আহ্বানও জানান নজ়াকত। নজ়াকতের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৭ এপ্রিল স্ত্রী পূজা এবং চার বছরের মেয়েকে নিয়ে কাশ্মীরে পৌঁছন অরবিন্দ। সঙ্গে ছিলেন তাঁরই পরিচিত কুলদীপ স্থাপক, শিবংশ জৈন এবং হ্যাপি ওয়াধবনের পরিবার। ২২ এপ্রিল অরবিন্দদের ফেরার কথা ছিল। ১১ জন সদস্যের কাশ্মীর-ভ্রমণের গাইড ছিলেন নজ়াকত। জঙ্গি হামলার সময়ে অরবিন্দের পরিবার এবং তাঁর সঙ্গীদের প্রাণ বাঁচান নজ়াকত। অরবিন্দই সমাজমাধ্যমে নজ়াকত আহমেদ শাহ-কে তাঁদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি, ঘটনার দিনের অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নেন তিনি।
ভ্রমণের শেষ দিন, অর্থাৎ, জঙ্গি হামলার দিন আগরওয়ালদের বৈসরন উপত্যকায় নিয়ে যান নজ়াকত। দুপুর ১২টা নাগাদ বৈসরনে পৌঁছন অরবিন্দরা। সেখানে ঘোরাঘুরি ও ছবি তুলতে গিয়ে আড়াইটা বেজে যায়। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে ফেরার প্রস্তাব দেন কুলদীপ। তখন হঠাৎই গুলি চালানোর শব্দ পান তাঁরা। আতঙ্কে এ-দিক ও-দিক ছুটে পালাতে থাকেন সকলে।
অরবিন্দকে তাঁদের দলের অন্যরা নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু সেই সময়ে অরবিন্দের স্ত্রী ও মেয়ে দলছুট হয়ে অন্য দিকে চলে যান। তবে নজ়াকত অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তাঁদেরকেও নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যান। নজ়াকতের কথায়, “আমি গিয়ে আগরওয়ালজির স্ত্রীকে খুঁজে পাই। উনি দৌড়ে অন্য দিকে চলে গিয়েছিলেন। প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে তাঁদের খুঁজে পাই এবং আমার গাড়িতে করে ফিরিয়ে নিয়ে আসি।” এর পরে পাহাড়ি রাস্তা ধরে অরবিন্দদের প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে নিরাপদস্থানে নিয়ে যান নজ়াকত।
এই ঘটনার পরে নজ়াকতের অসীম সাহসের প্রশংসা করেছেন অরবিন্দ আগরওয়াল এবং তাঁর পরিবার। যদিও নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরিয়ে এনেই ক্ষান্ত হননি ওই কাশ্মীরি গাইড। আগরওয়ালদের সযত্নে শ্রীনগরে পৌঁছে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তিনি। নজ়াকতের বক্তব্য, “আমি তাঁদের আতিথ্য দিতে চেয়েছিলাম। কারণ কাশ্মীরিরা কখনও আতিথেয়তার খামতি রাখে না।”
সংবাদ সংস্থা