‘বাড়িতেই নিয়ে এসো ওঁদের’, বলেছিলেন চালকের স্ত্রী
উত্তম সাহা
শিলচর, ২৫ এপ্রিল: নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে বাড়ি ফিরলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্য। গত মঙ্গলবার কাশ্মীরের বৈসরনে জঙ্গি হামলার দিনে হাত-পা সামান্য কেটে-ছড়ে গেলেও সুস্থ অবস্থাতেই ফিরেছেন দেবাশিস, তাঁর স্ত্রী মধুমিতা দাস ভট্টাচার্য ও পুত্র দ্রোহদীপ। সবারই এক কথা, ‘‘অভিজ্ঞতা বলুন আর যন্ত্রণাই বলুন, এই সফর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভুলব না। আর মনে থাকবে অসংখ্য মানুষের ভালবাসার কথা, যাঁদের অধিকাংশই অচেনা।’’
দেবাশিস জানান, ঘোড়ায় চড়ে বৈসরন উপত্যকায় ঢোকার সময়ে ঘোড়ার সহিসের সঙ্গে তাঁদের পাঁচটা কথাও হয়নি। সেই সহিসই ফেরার পথে যখন দেবাশিসদের দেখেন, অস্থির হয়ে ওঠেন সেবাযত্নের জন্য। দ্রুত পৌঁছে দেন গাড়ির কাছে। এক দিনের পরিচয়ে সেই গাড়িচালকও আপনজন হয়ে ওঠেন। গাড়ি চালাতে চালাতে স্ত্রীকে ফোন করে তিনি জানান, একটু আগেই কী ভাবে দেবাশিসের মাথায় বন্দুক ধরেছিল জঙ্গিরা। চালকের স্ত্রী তা শুনে বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ি নিয়ে এসো ওঁদের।’’ বিধ্বস্ত অবস্থায় দেবাশিসেরা অবশ্য আর গাড়িচালকের বাড়ি যাননি। গিয়েছেন সেই হোটেলে, যেখানে তাঁদের জন্য ঘর রাখা ছিল। দেবাশিসের কথায়, ‘‘হোটেলের মালিক থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মী আমাদের যে ভাবে আপ্যায়িত করলেন, তা যন্ত্রণা থেকে কিছুটা হলেও রেহাই দিয়েছে।’’
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বললেন, ‘‘এত ফোন আসছিল যে, আর নিতে পারছিলাম না। মোবাইল সাইলেন্ট করে বসে থাকি।’’ তখনই মুখ্যমন্ত্রীর ওএসডি ফোন করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী শর্মা লাইনে ছিলেন। কিন্তু দেবাশিস ফোন ধরেননি বলে আর কথা হয়নি। তবে কাছাড়ের এসপি নোমল মাহাত্তা ঘন ঘন যোগাযোগ করেছেন তাঁদের সঙ্গে, আশ্বস্ত করেছেন। জেলা প্রশাসনও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
দেবাশিস জানান, শ্রীনগর বিমানবন্দরের অবস্থা তখন ছিল যে কোনও হাটের চেয়ে খারাপ। এত কোলাহল হচ্ছিল যে, কোনও ঘোষণাই শোনা যাচ্ছিল না। মানুষ অসহায় ভাবে ছোটাছুটি করছিলেন। পরে তাঁরা বিমান পান বটে, কিন্তু সেটি ছাড়ে তিন ঘণ্টা দেরিতে। বিমানে কারিগরি ত্রুটি ছিল, তা সারাতেই সময় লাগে। এত সবের পরে বাড়ি ফিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে ভট্টাচার্য পরিবার। যদিও তাঁরা জানেন, মনের যন্ত্রণার পুরোপুরি উপশম হতে এখনও সময় লাগবে অনেকটাই।