‘জঙ্গিরা সমাজে বিভাজন চায়’, বার্তা রাহুলের
সাবির ইবন ইউসুফ l শ্রীনগর
২৫ এপ্রিল: জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল, সমাজে বিভাজন তৈরি করা। ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাইকে লড়িয়ে দেওয়া। তাই এখন ভারতবাসীর একজোট থাকা অত্যন্ত জরুরি। দরকার সাহস আর সৌভ্রাত্রে ভর করে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা। বৈসরনে জঙ্গি হামলার পরে আজ শ্রীনগরে গিয়ে এই বার্তাই দিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা যেখানে বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে নিহত বাঙালি পর্যটকের শিশুকে কোলে নিয়ে ধর্ম-রাজনীতি মিশিয়ে গলা ফাটিয়েছিলেন, সেখানে সন্ত্রাস-বিধ্বস্ত কাশ্মীরের মাটি থেকে প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় সরকারকে বিঁধে একটি মন্তব্যও করলেন না লোকসভার বিরোধী দলনেতা। বরং নিচু গলায় তিনি বার্তা দিলেন, জঙ্গিদের উদ্দেশ্যকে হারিয়ে দিতে হলে দেশবাসীকে এখন বেঁধে-বেঁধে থাকতেই হবে।
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের মুখে পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে জঙ্গি হামলার পরেও কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি রাহুল নির্বাচনী দ্বৈরথ স্থগিত রেখে নরেন্দ্র মোদী সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ বার পহেলগাম লাগোয়া বৈসরনে জঙ্গিদের হাতে ২৬ জনের খুন হওয়ার খবর পেয়েই আমেরিকা সফর কাটছাঁট করে দেশে ফেরেন তিনি। গত কাল যোগ দেন কেন্দ্রের সর্বদল বৈঠকে। আজ আসেন কাশ্মীরে। ইদানীং যে পোশাকে তাঁকে দেখা যায়, সেই সাদা টি-শার্ট ও কালো ট্রাউজ়ার্সের বদলে আজ রাহুলের পরনে ছিল সাদা কুর্তা-পাজামা। সারা দিনে তিনি কখনও হাসপাতালে গিয়ে জঙ্গি হামলায় আহতের সঙ্গে দেখা করেছেন, কখনও উপরাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, ও স্থানীয়দের কাছ থেকে পরিস্থিতির খবর নিয়েছেন। পরে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘গত কাল সরকারের সঙ্গে আমরা একটি বৈঠক করি। বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই ঘটনার নিন্দা করেছে এবং বলেছে, ‘সন্ত্রাসবাদকে চিরতরে উপড়ে ফেলতে সরকার যে পদক্ষেপই করুক না কেন, আমরা তা সমর্থন করব’।’’
কাশ্মীরে জঙ্গি হানার জেরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা চড়াও হচ্ছে কাশ্মীরিদের উপরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলেই মার খাচ্ছেন কাশ্মীরি ছাত্রেরা। রাহুল এই ঘটনাকে ‘গভীর দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করে দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেছেন, জঙ্গিরা সমাজে বিভাজন ঘটানোর যে কৌশল নিয়েছে, তার ফাঁদে যেন কেউ পা না দেন। তিনি বলেন, ‘‘খুব খারাপ লাগছে জেনে যে, দেশের কোনও কোনও জায়গায় আমার কাশ্মীরি ভাই-বোনেদের আক্রমণ করছেন কিছু মানুষ। এই সব বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ কেবল মাত্র জঙ্গিদের উদ্দেশ্যকেই সফল করে। আমাদের এই বিভেদকে দূরে ঠেলে একজোট থাকতে হবে। জম্মু-কাশ্মীরের সমস্ত মানুষ এই ভয়ানক ঘটনার নিন্দা করেছেন।’’
আজ রাহুল প্রথমে যান শ্রীনগরের বাদামিবাগ ক্যান্টনমেন্টে সেনা হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি, হামলায় আহত এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন। আহতেরা অনেকে ইতিমধ্যেই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন বলে তাঁদের সঙ্গে আর দেখা হয়নি তাঁর। নিহতদের পরিবারের উদ্দেশে রাহুলের বার্তা, ‘‘প্রত্যেককে আমার ভালবাসা। এটুকুই জানানোর, সারা দেশ আজ এক হয়েছে।’’ এ দিন পর্যটন ক্ষেত্র ও ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে জঙ্গি হানার ক্ষত মেরামত ও গোটা অঞ্চলের পুনরুজ্জীবনে জোর দেন রাহুল। উপরাজ্যপাল মনোজ সিন্হা, মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ও কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উপত্যকার বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন তিনি।