কলকাতা নাইট রাইডার্সের অনুশীলন শুরু হওয়ার আগেই প্যাড পরে একটি নেটে চলে যান আন্দ্রে রাসেল। দেখে বোঝা যায়, তিনি ছন্দে ফিরতে মরিয়া। রাসেলও জানেন, তাঁর ছন্দের উপরে নির্ভর করছে নাইটদের ভাগ্য। অজিঙ্ক রাহানেও হয়তো অস্বীকার করবেন না, রাসেল ছন্দে ফিরলে কেকেআরের ভাগ্যের চাকাও ঘুরবে। মুল্লানপুরে পঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে ১১২ রান তাড়া করতে ব্যর্থ হয়েছিল কেকেআর। অলআউট হয়ে গিয়েছিল ৯৫ রানে। সেই লজ্জার হারের যোগ্য জবাব যে ইডেনেই দিতে হবে। প্রাক্তন
অধিনায়কের বিরুদ্ধে।
রাসেল ছাড়া নাইটদের বাকি ক্রিকেটারদের হাবভাব দেখে মনে হল না, তাঁরা জেতার জন্য নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছেন। অধিনায়ক রাহানে, সহ-অধিনায়ক বেঙ্কটেশ আয়ার, রিঙ্কু সিংহ, হর্ষিত রানা-রা অনুশীলনেই এলেন না। কিন্তু যাঁর দিকে তাকিয়ে নাইট সমর্থকেরাও, সেই রাসেলকে বাড়তি পরিশ্রম করতে দেখা গেল। দাবদাহের মাঝে অনুশীলনে কোনও ফাঁকি
দিচ্ছিলেন না।
রোদ ঝলসানো দুপুরে নাইটদের বাকি ক্রিকেটারেরা যখন ড্রেসিংরুমের ভেতরে ছিলেন, থ্রো-ডাউন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে নেটে চলে যান রাসেল। প্রায় আধ ঘণ্টা টানা ব্যাট করার পরে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা জল নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় পাঁচ মিনিট শুয়ে থাকার পরে ফিরে যান ড্রেসিংরুমে।
২৫ মিনিট বিশ্রাম নেওয়ার পরে আবারও জার্সি পরে মাঠে আসেন ক্যারিবিয়ান তারকা। নেটে তখন ব্যাট করছিলেন রভম্যান পাওয়েল। তাঁর সঙ্গে এক ঘণ্টা ব্যাট করেন রাসেল। কেকেআরকে ছন্দে ফিরতে গেলে বড় চমক দিতে হবে। পঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে কি রাসেল-পাওয়েল জুটির অভিষেক হতে দেখা যাবে? দুই ক্যারিবিয়ান তারকার ব্যাট যদি একসঙ্গে চলে, বিপক্ষ শিবিরের আতঙ্ক বাড়তে বাধ্য। কিন্তু এ বারের আইপিএলে রাসেল একেবারেই ছন্দে নেই। আট ম্যাচে করেছেন ৫৫ রান। পাওয়েল এখনও খেলেননি। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে তাঁদের দু’জনকে একসঙ্গে খেলিয়ে কেকেআর বড় চমক দেয় কি না সেটাই দেখার।
ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে দলের একাধিক ক্রিকেটারদের মধ্যে। সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠমহলে রাসেল নাকি হতাশা প্রকাশ করেছেন তাঁর ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে। প্রত্যেক ম্যাচে রাসেলকে এমন সময় নামানো হচ্ছে, যেখান থেকে ম্যাচ বার করা কঠিন। টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে রাসেল নাকি কথা বলেছেন। তিনি উপরের দিকে ব্যাট করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। কারণ, আইপিএলের নতুন নিয়মে বল পরিবর্তন হচ্ছে। লালার ব্যবহারে রিভার্স সুইংও হচ্ছে বল। তাই রান তাড়া করার প্রক্রিয়া আগের মতো সহজ হচ্ছে না। রাসেলের পাশাপাশি এ বার পাওয়েলকে রেখে তাঁর উপর থেকে চাপটা হাল্কা করতে
পারে কেকেআর।
অনুশীলনে সে রকমই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। লাভনিত সিসোদিয়াকে শুরুর দিকে ব্যাট করানো হয়। রহমনুল্লা গুরবাজ়ের পরিবর্ত হিসেবে তাঁকে খেলানো হলে অবাক হওয়ার থাকবে না। কারণ, গুরবাজ়কে বসানো হলে লাভনিতকে কিপার হিসেবে খেলানো যাবে। গুরবাজ়ের জায়গায় সে ক্ষেত্রে পাওয়েল খেলতে পারবেন। গুরবাজ়কে একান্তই খেলাতে হলে মইন আলির পরিবর্তে পাওয়েলকে নেওয়া হতে পারে। কিন্তু গুজরাত ম্যাচের পিচেই হবে কেকেআর-পঞ্জাব ম্যাচ। পুরনো পিচ থেকে মইন সাহায্য পেতেও পারেন।
শনিবার শ্রেয়স আয়ারদের বিরুদ্ধে অগ্নিপরীক্ষা কেকেআরের। প্রথমত, প্লে-অফের দৌড়ে টিকে থাকার লড়াই। শেষ ছ’টি ম্যাচের মধ্যে কেকেআরকে পাঁচটি জিততেই হবে। দ্বিতীয়ত, প্রাক্তন অধিনায়কের বিরুদ্ধে সম্মানরক্ষার হাতছানি। একই ম্যাচে দু’টি লক্ষ্য নিয়ে নামতে
হচ্ছে রাহানেদের।
পঞ্জাব ম্যাচে শাহরুখ খানের কন্যা সুহানা ও ছেলে আরিয়ান খানের আসার কথা ছিল। শহরে একটি বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানের জন্যই আসছিলেন তাঁরা। কিন্তু পহেলগামে জঙ্গিহানায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে এই সফর বাতিল করেছেন। নিহতদের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন
বিবৃতির মাধ্যমে।
কেকেআরের ক্রিকেটারেরাও কালো আর্মব্যান্ড পরে নামার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে ভারতীয় বোর্ডের কাছে অনুমতি চেয়েছে কেকেআর। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে রাহানেদের হাতে কালো আর্মব্যান্ড দেখা যেতে পারে। মাঠে নিরবতাও পালন করা হবে।
কিন্তু রাহানেরা চাইবেন, কেকেআর সমর্থকেরা যেন এই ম্যাচের পরে উৎসব করতে পারেন। তাঁদের হতাশা যে দিনে দিনে
বেড়েই চলেছে।