ঐতিহাসিক
১৯৩৫ সালে লন্ডনের উইশার্ট অ্যান্ড কোম্পানি প্রকাশ করে সুভাষচন্দ্র বসুর (ছবি) লেখা বই দি ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল ১৯২০-১৯৩৪। পরে বইয়ের প্রায় প্রতিটি পৃষ্ঠার পাশের ফাঁকা জায়গায় অতি যত্নে নিজের হাতে মন্তব্য, সংশোধন ও পরিমার্জনা লিপিবদ্ধ করেছিলেন সুভাষচন্দ্র। ১৯৪৩-এ, তাঁর জাপান যাত্রার আগে ইন্ডিয়ান লিজিয়ন-এর সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক জে কে বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান, স্বহস্তে সংশোধিত বইয়ের কপিটি তখন তাঁর হাতে দিয়েছিলেন নেতাজি— বই তথা পাণ্ডুলিপিটির নিরাপদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে। ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত, অপরিমেয় ঐতিহাসিক মূল্যের সেই বইটির হুবহু প্রতিলিপি সংস্করণ এ বার প্রকাশিত হতে চলেছে ‘নেতাজি ভাবনা মঞ্চ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর আয়োজনে (প্রকা: নয়া উদ্যোগ)। আগামী ২৯ এপ্রিল বিকেল ৫টায়, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কের শিবানন্দ হল-এ অনুষ্ঠান, গুণিজন-সমাগমে।
দুই মহাপ্রাণ
এই কলকাতাই জন্মভূমি রবীন্দ্রনাথ ও নরেন্দ্রনাথের, উত্তরকালে কবি ও সন্ন্যাসী রূপে যাঁরা শুধু দেশের নয়, বিশ্বের অঙ্গনে তুলে ধরেছেন বঙ্গমননকে। দুই মহামনার সংযোগ-সম্পর্কও অনন্য: নরেন্দ্রনাথ ব্রাহ্মসমাজে যাতায়াত করেছেন, দক্ষিণেশ্বরে রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে শুনিয়েছেন শ্রীরামকৃষ্ণকে; রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দ সংযোগের সূত্র ছিলেন ভগিনী নিবেদিতাও। মত-পথের অন্তর ছিল, তবু সব পেরিয়ে উনিশ শতকের মনন-মানচিত্রে দু’জনের অবদান অনন্য। সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে এই নিয়েই ‘রবিচ্ছায়া’র অনুষ্ঠান ‘সঙ্গীতে সেতুবন্ধ: বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ’, নিবেদনে বিশ্বরূপ রুদ্র রত্না মিত্র প্রমুখ। আজ বিকেল ৫টায় স্বামীজির পৈতৃক আবাসে, রামকৃষ্ণ মঞ্চে।
জন্মশতবর্ষে
১৯৫২ সালে বাংলা ভাষা নিয়ে তো বটেই, ঢাকা শহর উত্তাল হয়েছিল নাচোলের কৃষক বিদ্রোহের সমর্থনেও। দেশভাগের পরে সেটাই ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম সর্বাত্মক ছাত্র-যুব বিক্ষোভ। নাচোলের কৃষক বিদ্রোহ মূলত সাঁওতাল কৃষক ও কৃষিকর্মীদের তেভাগার দাবিতে, জমিদারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে— যার নেতৃস্থানীয় ছিলেন ইলা মিত্র। সেই বিদ্রোহের অনুপুঙ্খ, ইলা মিত্রের উপর নেমে আসা অকথ্য অত্যাচার ও তার পরবর্তী ঘটনাক্রম বিধৃত ইতিহাসে। ২০২৫ ইলা মিত্রের জন্মশতবর্ষ, এ বার বাংলা উপন্যাসে উঠে এসেছে তাঁর জীবনকথা। দেবকুমার সোমের তেভাগার মা (প্রকা: লালমাটি) বইপ্রকাশের সূত্রে ইলা মিত্রকে ঘিরে আলোচনা বিশিষ্টজনের উপস্থিতিতে, আজ বিকেল ৫টায় কলেজ স্কোয়ারে, থিয়োসফিক্যাল সোসাইটি প্রেক্ষাগৃহে।
গানজীবন
রবীন্দ্রনাথের ‘তোমার হল শুরু’ গানের প্রথম রেকর্ডটি তাঁর। তবে সত্য চৌধুরী খ্যাতির শিখরে পৌঁছন ‘পৃথিবী আমারে চায়, রেখো না বেঁধে আমায়’ গানটি গেয়ে। অভিনয়ও করেছেন, বেতার ঘোষকের কাজও। কৃষ্ণচন্দ্র দে, রাইচাঁদ বড়াল, শচীন দেব বর্মণ প্রমুখের শিষ্য নজরে পড়েছিলেন উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের। জওহরলাল নেহরুর পরামর্শে ‘বন্দে মাতরম্’ গাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হল খাঁ সাহেবকে, তিনি ডেকে নিলেন সত্য চৌধুরীকে। সেই রেকর্ডিংয়ে বাজিয়েছিলেন তিমিরবরণ, কেরামতউল্লা খাঁয়ের মতো দিকপালরাও। শিল্পীর গান ও জীবনের তথ্য নিষ্ঠায় সংরক্ষণ করছেন ভ্রাতুষ্পুত্র পরমানন্দ চৌধুরী। বেহালার শিমুলতলায় কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে গত ২২ এপ্রিল উন্মোচন হল সত্য চৌধুরী উদ্যান ও আবক্ষ মূর্তির।
স্মরণে
সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দে নামে যে বইটি লিখে গিয়েছেন সন্জীদা খাতুন, সেটি আসলে স্রেফ স্মৃতিকথা নয়, দুই বাংলার একত্রে বসে বিনিসুতোয় গাঁথা মালা। ঢাকা, কলকাতা, শান্তিনিকেতন, আরও কত জায়গায়, কত মানুষের কথা সেখানে: পূর্ববঙ্গ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস, আর অনুস্যূত রবীন্দ্রনাথ। বাঙালি অসাম্প্রদায়িক আত্মপরিচয় আর রবীন্দ্রচর্চার অঙ্গাঙ্গি যোগটি তাঁর জীবন জুড়ে ছিল। গত ২৬ মার্চ ঢাকায় প্রয়াত এই শিল্পী, লেখক, সংগঠক ও সারস্বতের স্মরণে আজ সন্ধ্যা ৬টায় এক স্মরণানুষ্ঠান আয়োজন করেছে ইনস্টিটিউট অব অডিয়ো-ভিস্যুয়াল কালচার, মাসান্তে তাদের ‘শনিবারের বৈঠক’-এ। পি-৭৮ লেক রোডে সেন-বাড়িতে গানে কথায় আবৃত্তিতে সন্জীদা-স্মরণ, থাকবেন পঙ্কজ সাহা দেবাশিস মজুমদার বিজয়লক্ষ্মী বর্মণ রাজশ্রী ভট্টাচার্য ইন্দ্রজিৎ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
জীবন-রেখা
চল্লিশ কি পঞ্চাশের দশকের কলকাতা। এমনই এক নিদাঘদিনে, সারাটা দিন কাজের খোঁজে হন্যে হয়ে শহর ঘুরে বাড়ি ফিরেছিলেন এক শিল্পী। স্ত্রীকে বলেছিলেন, “আজও হল না!” সহধর্মিণী উত্তর দিয়েছিলেন, তাতে কী, হবে এক দিন। ঘটনাটি লিখেছেন চন্দনা হোর, শিল্পী সোমনাথ হোর ও রেবা হোরের কন্যা, দেবভাষা প্রকাশিত সোমনাথ হোর: হোয়েন লাইনস কেম ফ্রম লাইফ বইটির ছোট্ট ভূমিকায়। কলকাতাতেই হোক বা পরে শান্তিনিকেতনে, সোমনাথ হোরের শিল্পযাপনের অঙ্গাঙ্গি হয়ে দাঁড়ায় রেখা তথা রেখাচিত্রেরা, শিল্পীর জীবনবোধ ও সংগ্রামের সাক্ষী তারা। সোমনাথ হোরের জন্মমাসে দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাসের গ্যালারি চিত্রলেখায় গত ১০ এপ্রিল থেকে চলছে তাঁর রেখাচিত্রের প্রদর্শনী: ষাট সত্তর ও আশির দশক জুড়ে আঁকা, কিন্তু না-দেখা। চলবে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত, ছুটির দিন বাদে দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা। ছবিতে তারই দু’টি।
প্রথম প্রকাশ
রাষ্ট্রপুঞ্জ ১৯৯৩ সালে ২৫ নভেম্বরকে ‘মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসার অবসান’ ঘটানোর সূচক দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর সে-বছর থেকে দিনটির দুনিয়া জুড়ে উদ্যাপন তিন দশক পেরিয়েছে। গত নভেম্বরে স্পেনের কর্দোবা শহরে সম্মেলনও হয়ে গেল এই উপলক্ষে, যোগ দিয়েছিল কলকাতার ইন্দো-হিস্পানিক ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাকাদেমি। এই সূত্রেই বাংলা পত্রিকা সংলাপ: স্পেন-ভারত-লাতিন আমেরিকা (সম্পা: অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়) প্রথম সংখ্যার প্রকাশ, বিষয় নারী। স্পেন ও লাতিন আমেরিকার স্প্যানিশভাষী কয়েকটি দেশের কয়েকজন নারী, যাঁরা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও অবিচল ছিলেন নিজস্ব লড়াইয়ে, তাঁদের কথাই তথ্য-সংবাদ-অনুবাদে। পত্রিকাটি যেন বাংলা ও স্প্যানিশের সংযোগসেতু। সঙ্গে প্রকাশ পেল অ্যাকাডেমির ডেস্ক-ক্যালেন্ডার ‘কথায় কথায়’, প্রতি পাতায় স্প্যানিশ ভাষার প্রথিতযশা লেখকদের ছবি (ছবিতে সম্প্রতি প্রয়াত মারিয়ো ভার্গাস ইয়োসা) ও স্মরণীয় মন্তব্য।
তিন দশক পর
১৯৯১-১৯৯৫, এই তার জীবনকাল। তবে পাঁচটি বছরেই বাংলা লিটল ম্যাগাজ়িনের পাঠকের কাছে ও সারস্বত সমাজে সমাদৃত হয়েছিল সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা যোগসূত্র। ‘নিয়মের চৌহদ্দি, ব্যবসা আর যাত্রাটে হাঁকাহাঁকির থেকে বেরিয়ে আসার পথ’ খুঁজতে বিনয় ঘোষের সম্পাদনায় বেরোয় মোট এগারোটি সংখ্যা। আন্দ্রেই তারকোভস্কি থেকে চিত্তপ্রসাদ, বিদ্যাসাগর থেকে বিনয় মজুমদার, নাটক, বিমূর্ততা এমন নানা ব্যক্তিত্ব ও বিষয়ের সিরিয়াস চর্চা, সমাজ-দর্শন সংক্রান্ত জ্ঞানচর্চার পরিসর গড়ে তুলেছিল; আমন্ত্রিত সম্পাদক হিসেবে গৌতম ভদ্রের ‘কথকতা’ সংখ্যাটি বিশেষ উল্লেখ্য। ত্রিশ বছর পরে এখন সব ক’টি সংখ্যাই পড়তে পারবেন এ যুগের পাঠক-গবেষকেরা, ডিজিটাল মাধ্যমে। তৈরি হয়েছে ওয়েবসাইট https://yogsutraweb.org— তিন দশক আগের মুদ্রণরীতি, লেটারপ্রেসে ছাপার বিশেষত্ব, লেআউট, অলঙ্করণ: সেই সময়ের চিহ্ন ধরা তাতে!