স্মৃতি আর আবেগের অভিযান
বড় একটা পোস্টার বানিয়েছিলেন বাবা, চারকোলে আঁকা, ইংরেজি পোস্টার। বোধহয় বম্বেতে ছবিটার প্রিমিয়ার হবে ভেবেই, নইলে বাংলা ছবির ইংরেজি পোস্টার হওয়ার কোনও কারণ নেই, যদি না সে-ছবি বিদেশে যায়। বাবা ও-ছবি বিদেশে পাঠাননি।” ন’বছর বয়সের স্মৃতি বলছিলেন সন্দীপ রায়, সত্যজিৎ রায়ের অভিযান (১৯৬২) সম্পর্কে। “পোস্টারটা দেওয়ালে টাঙানো ছিল বেশ কিছু দিন, তখন আমরা লেক টেম্পল রোডের বাড়িতে। প্রচণ্ড গরমেও হইহই করে বাবা বীরভূমে ফিল্ম ইউনিট নিয়ে আউটডোরে যেতেন, খুব এনজয় করতেন।” আরও মনে আছে, মুম্বইয়ে ছবির প্রিমিয়ারের দিন ওয়াহিদা রহমান তাঁদের মধ্যাহ্নভোজনে নিমন্ত্রণ করেছিলেন।
ওয়াহিদা তো প্রথমে এ ছবিতে অভিনয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে প্রায় বিশ্বাসই করে উঠতে পারছিলেন না, অসম্ভব খুশি হয়েছিলেন সত্যজিৎ তাঁর কথা ভেবেছেন বলে। প্রথম ফোনালাপেই তাঁকে সতর্ক করেন সত্যজিৎ, “আপনি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে প্রচুর উপার্জন করেন, আমি কিন্তু স্বল্প বাজেটের ছবি করি।” ওয়াহিদার উত্তর ছিল, “কেন আমায় এ ভাবে লজ্জিত করছেন? আপনার সঙ্গে কাজ করতে বলেছেন, এর থেকে বেশি সম্মান আর কী হতে পারে!” সত্যজিতের আমন্ত্রণ এসেছিল চিঠিতে, ওয়াহিদাকে লিখেছিলেন, “আমার নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ইউনিটের সদস্যরা বিশ্বাস করেন, আপনিই সবচেয়ে উপযুক্ত গুলাবি চরিত্রের জন্য— সে-ই আমার আগামী ছবির নায়িকা। ইফ ইউ আগ্রি টু প্লে দ্য পার্ট, উই উইল বি ভেরি প্লিজ়ড।”
বছর দশেক আগেই ওয়াহিদা এ সব নথিভুক্ত করেছেন নাসরিন মুন্নি কবিরের সঙ্গে কনভারসেশনস বইতে (পেঙ্গুইন/ভাইকিং)। আগামী ১ মে বিকেল ৫টায় নন্দন ১-এ আবারও শোনা যাবে তাঁর কথা, মুম্বই থেকে রেকর্ড করে পাঠিয়েছেন সত্যজিৎ ও অভিযান-এর শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা। তিনিই একমাত্র আছেন এখনও, তাঁর সহ-অভিনেতৃ চারুপ্রকাশ ঘোষ জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায় শেখর চট্টোপাধ্যায় রেবা দেবী রুমা গুহঠাকুরতা রবি ঘোষ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কেউই আজ আর নেই। প্রায় সাড়ে তিন দশক হতে চলল সত্যজিৎও নেই, গত ২৩ এপ্রিল ছিল তাঁর প্রয়াণদিন। ওয়াহিদার স্মৃতিকথনের পর সে দিন দেখানো হবে অভিযান, অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার্স-এর রেস্টোর্ড ভার্সন। আয়োজনে সোসাইটি ফর দ্য প্রিজ়ারভেশন অব সত্যজিৎ রায় আর্কাইভস; উপলক্ষ সত্যজিৎ রায়ের আসন্ন জন্মদিন, ২ মে পূর্ণ হবে তাঁর ১০৪ বছর।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “অভিযান-এর মতো সুঅভিনীত ছবি বাংলায় কম হয়েছে। সকলেরই আশ্চর্য ভালো অভিনয়। আমার পাশে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁরা প্রায় সকলেই আমার থেকে অভিজ্ঞ ও পাকা অভিনেতা ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করার একটা জেদ আমার মধ্যে কাজ করেছিল।” (গদ্যসংগ্রহ ১, দে’জ়)। শহরবাসী প্রতীক্ষায়... ছবি সৌজন্য: সন্দীপ রায়
Satyajit Ray with Soumitra Chatterjee at Abhijan shoot - Credit: Satyajit Ray Society