মুর্শিদাবাদের ঘরহারাদের নথির খোঁজ
চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
হিংসার আগুনে ছাই প্রায় সব ধরনের নথি। মুর্শিদাবাদ-কাণ্ডে শতাধিক মানুষ রাতারাতি কার্যত নথিহীন। সীমান্ত ঘেঁষা ওই তল্লাটে যাঁদের ঘর-বাড়ি নষ্ট হয়েছে, চলতি আবাস প্রকল্পে তাঁদের সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছে নবান্ন। এর আগে নষ্ট হওয়া নথি ফিরে পাওয়া জরুরি। কারণ, নথি থাকলেই প্রকল্পটিতে সুবিধা মিলবে। তবে পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের বক্তব্য, পুরো ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই আবাসের সুবিধাপ্রাপ্তদের তালিকাটি চূড়ান্ত হবে।
আশ্রয়-শিবির ছেড়ে ইতিমধ্যেই অশান্তির আঁচ লাগা এলাকায় অনেকেই ঘরে ফিরছেন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, অন্তত ১০০র বেশি জনের নথি পুনরুদ্ধার দরকার। সেই কাজ শুরুও করেছে নবান্ন। এখনও পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি মানুষের নথি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সরকারি পরিষেবা পেতে যাতে বাধা তৈরি না হয়, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হচ্ছে প্রশাসনকে। ওই ঘটনার পরে আবাস প্রকল্পের (রাজ্যের দেওয়া নাম—বাংলার বাড়ি, গ্রামীণ) আওতায় ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি তৈরির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত শনিবার এই কাজ দ্রুত শুরু করতে জোর দিয়েছিলেন মুখ্য সচিব মনোজ পন্থও। এখন নথি পুনরুদ্ধার পদ্ধতির সমান্তরালে আবাস-প্রস্তুতিও শুরু করা হয়েছে। তাতে সংশ্লিষ্টদের নথির বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।
পঞ্চায়েত দফতর জানাচ্ছে, প্রকল্পের উপভোক্তা তালিকা প্রাথমিক ভাবে যাচাই করে জেলা প্রশাসন রিপোর্ট দেবে। এর পরে দফতরের তরফে খোঁজখবর করা হবে। এ ক্ষেত্রে আশপাশের লোক জনের থেকেও তথ্য নেওয়া হতে পারে। পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের কথায়, “যাঁরা তথ্য দেখাতে পারবেন, তাঁদের তো সমস্যা নেই। কেউ দেখাতে না-পারলে স্থানীয় স্তরে খোঁজ করে সিদ্ধান্ত জানাবে জেলা প্রশাসন। দফতর বিষয়টি চূড়ান্ত করবে।”
প্রশাসনিক একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে আধার কার্ড সংযোগের কারণে ইতিমধ্যেই বহু তথ্য সরকারের হাতে রয়েছে। সেখান থেকে তথ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব। তা ছাড়া ‘ইউনিক ডকুমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন নম্বর‘ (ইউডিআইএন) পদ্ধতি চালু হয়েছে। তাতে নাগরিক তথা কোনও প্রকল্পের উপভোক্তাকে বার বার তথ্য জানাতে হবে না। নানা ধরনের সরকারি সুবিধা যাঁরা পান, তাঁদের নাম একবার নথিভুক্ত হলে এই নম্বরের সাপেক্ষে সব তথ্য পাওয়া যাবে। সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ সালে সব ক’টি জেলা মিলিয়ে ১২ লক্ষ মানুষের (প্রধানত আবাস উপভোক্তা) ইউডিআইএন তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এখনও তাতে ২.২১% কাজ বাকি। মুর্শিদাবাদে ৪.৪৭% এবং ও মালদহে ৪.১০% কাজও বাকি রয়েছে। ফলে অশান্তির আঁচে যাঁদের সম্পত্তি গিয়েছে, তাঁদের সবার তথ্য এ ভাবে উদ্ধার হওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “তথ্য পুনরুদ্ধারের কাজের অনেকটাই স্বরাষ্ট্র দফতর সামলায়। কী ভাবে তা হচ্ছে, নজরে রয়েছে। অনেক তথ্য বিভিন্ন দফতরের কাছেও রয়েছে। কারণ, প্রায় সকলেই কিছু না কিছু সরকারি সুবিধার আওতায় রয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে সবটা খতিয়ে দেখা হবে।”